ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসের মধ্যে কোনটা অফার করবেন ?

বর্তমান যুগে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা বিজনেসগুলোর মধ্যে একটা। বাড়িতে বসে নিজের সুবিধাজনক সময়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকায় এবং অন্যান্য বিজনেসের তুলনায় প্রফিটেবল হওয়ায় এখন অনেকেই এ বিজনেসের প্রতি ইন্টারেস্টেড হচ্ছেন। তাই নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। যারা এ ফ্রিল্যান্সিং জগতে নতুন, তাদের মধ্যে অনেকেই ক্লায়েন্টদের নিশবেজড সার্ভিস দেবেন নাকি জেনারেলাইজড সার্ভিস দেবেন এটা বুঝে উঠতে পারেননা । তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিগিনারদের এ কনফিউশান ক্লিয়ার করতে আজকে আমি আলোচনা করবো ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিস এ দুটোর মধ্যে ক্লায়েন্টদের কোনটা অফার করা উচিত সেটা নিয়ে । 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশ কী? 

যদি সোজা বাংলায় বলি, নিশ হলো একটা স্পেসিফিক এরিয়া কিংবা ক্যাটাগরি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে নিশ কোনগুলো সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? চলুন ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে নিশের কনসেপ্টটা আরেকটু ভালোমতো বোঝার চেষ্টা করি। 

আমরা সবাই জানি ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের সেক্টর অনেক বড়। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির সার্ভিস রয়েছে। যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে যুক্ত, তারা ক্লায়েন্টদের গ্রাফিক ডিজাইন,  ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাটাগরির নানারকম সার্ভিস অফার করে থাকেন। মূলত এই একেকটা ক্যাটাগরিই ফ্রিল্যান্সিংয়ের একেকটা নিশ। 

 

কোনটা অফার করবেন।

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিস বলতে কি বোঝায়? 

যারা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস করেন, তারা সাধারণত ক্লায়েন্টদের নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসের মধ্যে যেকোন এক প্রকার সার্ভিস অফার করে থাকেন৷ চলুন এবার জেনে নেই নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিস বলতে কি বোঝায়। 

নিশবেজড সার্ভিস হলো যখন একজন ফ্রিল্যান্সার তার বিজনেসে ক্লায়েন্টদেরকে একটা স্পেসিফিক ক্যাটাগরির সার্ভিস অফার করে থাকেন। যেমন ধরুন, কেউ যদি গ্রাফিক ডিজাইন নিশে নিজের স্কিল ডেভেলপ করে তার বিজনেসে ক্লায়েন্টদের গ্রাফিক ডিজাইন নিশরিলেটেড বিভিন্ন সার্ভিস যেমন : লোগো ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন ইত্যাদি অফার করে থাকেন, তাহলে বলা যায় তিনি তার ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের নিশবেজড সার্ভিস অফার করছেন। 

অপরদিকে জেনারেলাইজড সার্ভিস হলো যখন একজন ফ্রিল্যান্সার ক্লায়েন্টদেরকে একই সাথে বিভিন্ন নিশরিলেটেড সার্ভিস অফার করেন। যেমন ধরুন, একজন ফ্রিল্যান্সার যদি তার ক্লায়েন্টদেরকে ডাটা এন্ট্রি , গ্রাফিক ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এ তিনটা ভিন্ন নিশরিলেটেড সার্ভিস একই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে অফার করে থাকেন, তাহলে তিনি তার বিজনেসে জেনারেলাইজড সার্ভিস অফার করছেন বলে ধরে নেয়া যায়। সুতরাং নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসের মূল পার্থক্যই হলো, নিশবেজড সার্ভিসে একটা স্পেসিফিক নিশরিলেটেড সার্ভিস অফার করা হয় এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসে ভিন্ন ভিন্ন নিশরিলেটেড সার্ভিস একইসাথে অফার করা হয়। 

নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসের সুবিধা এবং অসুবিধা 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসের মধ্যে ক্লায়েন্টদের কোনটা অফার করা উচিত এটা নিয়ে অনেক তর্ক -বিতর্ক রয়েছে। তাই চলুন শুরুতেই এ দুই ধরণের সার্ভিসের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। 

১।নিশবেজড সার্ভিস 

সুবিধা 

  • ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের নিশবেজড সার্ভিস অফার করার মূল সুবিধা হলো, এতে করে একটা স্পেসিফিক সেক্টরে বারবার কাজ করতে করতে নিজের স্কিল এমনভাবে ডেভেলপ করার সুযোগ পাবেন যাতে করে সে সেক্টরের যাবতীয় কাজে এক্সপার্ট হয়ে যেতে পারবেন৷ ফলে ক্লায়েন্ট যে কাজ ই করতে বলুক না কেন,  কখনোই কোনপ্রকার সমস্যা ফেইস করবেননা। একারণেই নিশবেজড সার্ভিস অফার করলে বেশি বেশি ক্লায়েন্ট পাওয়া সম্ভব হয়৷ 

  • সাধারণত যখন একজন ক্লায়েন্ট একজন ফ্রিল্যান্সারকে নিশবেজড সার্ভিস অফার করতে দেখেন, তখন ক্লায়েন্টের মনে সেই ফ্রিল্যান্সারের স্কিল নিয়ে কোনোপ্রকার সন্দেহ থাকেনা। তিনি তখন ওই ফ্রিল্যান্সারকে সেই স্পেসিফিক  নিশের কাজগুলোতে একজন এক্সপার্ট বলে ধরে নেন। একারণে ক্লায়েন্ট নিজের রিকয়ারমেন্টগুলো বলতেও কমফোর্টেবল ফিল করেন। এতে করে দুই পক্ষের কমিউনিকেশন ইজি হয়ে যাওয়ার কারণে ফ্রিল্যান্সারের পক্ষে ক্লায়েন্টের ডিমান্ড ফুলফিল করা ইজি হয় এবং কাজের আউটপুটও অনেক বেটার আসে। 
  •  ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের জন্য ইফেকটিভ মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি বানানো সম্ভব হয়। তাই যদি নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে গিয়ে বেশ ভালো অ্যামাউন্টের টাকা ইনকাম করতে চান, তাহলে নিশবেজড সার্ভিস অফার করাই ভালো। 
  • নিশবেজড সার্ভিস অফার করলে নিজের এক্সপেকটেশন অনুযায়ী ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পেমেন্ট চাইতে পারবেন । সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পর্যাপ্ত স্কিল নিয়ে নিশবেজড সার্ভিস অফার করলে ক্লায়েন্টরা সাধারণত অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে সার্ভিস না নিয়ে আপনার কাছ থেকেই নেবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ক্লায়েন্টরাই বিজনেসের রিপিট ক্লায়েন্ট হয়ে থাকে। তাই নিজের বিজনেসের আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আইডেন্টিফাই করতে চাইলে অবশ্যই নিশবেজড সার্ভিস অফার করুন। 

অসুবিধা 

  • নিশবেজড সার্ভিস অফার করার মূল অসুবিধা হলো, যদি ক্লায়েন্টদের ডিমান্ডের সাথে ফ্রিল্যান্সারের অফার করা সার্ভিসের মিল না থাকে, তাহলে ক্লায়েন্ট সে ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে সার্ভিস নেননা। 
  • যদি তুলনামূলক কম ডিমান্ডিং নিশ নিয়ে কাজ করে থাকেন, তাহলে সবসময় কাজের অর্ডার নাও পেতে পারেন। 
  • নিশবেজড ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে একই ধরণের কাজ করতে করতে কাজের প্রতি অনীহা চলে আসতে পারে। তখন কাজের কোয়ালিটি কমে যায় যা ক্লায়েন্টের স্যাটিসফ্যাকশন কমিয়ে দেয়। 
  • একটা স্পেসিফিক নিশ নিয়ে কাজ করলে অন্যান্য নিশের স্কিলগুলো শেখার সুযোগ থাকেনা। 

২। জেনারেলাইজড সার্ভিস 

সুবিধা 

  • ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের জেনারেলাইজড সার্ভিস অফার করার মূল সুবিধাই হলো এখানে বিভিন্ন নিশ নিয়ে রিসার্চ করা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন নিশরিলেটেড যে স্কিলগুলো প্রয়োজনীয় সেগুলো এক্সপ্লোর করার এবং শেখারও সুযোগ থাকে। যেমন : কেউ ক্লায়েন্টদের জেনারেলাইজড সার্ভিস অফার করলে তিনি একইসাথে গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি নিশরিলেটেড যে স্কিলগুলো থাকা দরকার সেগুলো শেখার সুযোগ পাবেন এবং পরবর্তীতে চাইলে নিজের পছন্দমতো নিশ বেছে নিয়েও বিজনেস কন্টিনিউ করতে পারবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে  নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিসের মধ্যে ক্লায়েন্টদের কোনটা অফার করবেন।

  • জেনারেলাইজড সার্ভিস অফার করলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন নিশরিলেটেড সার্ভিসে এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করা যায়। এতে করে একজন ফ্রিল্যান্সারকে একধরণের কাজ নিয়ে পড়ে থাকতে হয়না। ফলে নিজের কাজের প্রতি কখনোই অনীহা আসেনা। 
  • বিভিন্ন ধরণের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার ফলে নেটওয়ার্কিং বাড়ে। পাশাপাশি একই বিজনেসে বিভিন্নরকম সার্ভিস অফার করতে করতে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসও এক্সাইটিং হয়ে ওঠে। 

অসুবিধা 

  • জেনারেলাইজড সার্ভিস অফার করার মূল অসুবিধা হলো বিভিন্ন নিশরিলেটেড সার্ভিস অফার করা হয় বলে ইফেকটিভ মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি বানানো সম্ভব হয়না। এতে করে বিজনেসের আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা এটা আইডেন্টিফাই করাও কঠিন হয়ে পড়ে। 
  • বিভিন্নরকম স্কিল নিয়ে একইসাথে কাজ করতে হয় বলে কোন স্কিলেই পুরোপুরি এক্সপার্ট হওয়া সম্ভব হয়না। একারণে ক্লায়েন্ট যদি কখনো চ্যালেঞ্জিং কোন ডিমান্ড করে বসে তাহলে সেটা ফুলফিল করা ফ্রিল্যান্সারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস নাকি জেনারেলাইজড সার্ভিস? কোনটা অফার করবেন? 

সত্যি বলতে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেল সার্ভিসের মধ্যে কোনটা অফার করবেন সেটার কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।

তবে যদি নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন এবং কোন নিশ নিজের বিজনেসের জন্য পারফেক্ট হবে তা বুঝতে না পারেন তাহলে শুরুর দিকে ক্লায়েন্টদের জেনারেলাইজড সার্ভিস অফার করতে পারেন। পরবর্তীতে যখন কোন নিশে নিজের স্কিল এবং প্যাশন বেশি তা বুঝতে পারবেন তখন নিশবেজড সার্ভিস অফার করতে পারেন। 

এছাড়াও যদি ক্লায়েন্টদের  নিশবেজড সার্ভিস অফার করতে চান এবং একইসাথে জেনারালাইজড সার্ভিস দিতেও ইন্টারেস্টেড থাকেন, তাহলে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের মার্কেটিং করার সময় শুধুমাত্র নিশবেজড মার্কেটিং করুন যাতে করে ক্লায়েন্টরা বুঝতে পারে যে আপনার একটা নিশে পর্যাপ্ত এক্সপার্টাইজ রয়েছে। এরপর নিজের বিজনেসের ওয়েবসাইটে নিশরিলেটেড যে সার্ভিসগুলো অফার করছেন সেগুলো সম্পর্কে আগে লিখুন। তারপর অন্যান্য নিশরিলেটেড যে সার্ভিসগুলো দিতে ইন্টারেস্টেড সেগুলো সম্পর্কে লিখুন। এতে করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে নিজের নিশরিলেটেড কাজের অর্ডার তো পাবেনই, পাশাপাশি অন্যান্য নিশরিলেটেড সার্ভিসের অর্ডারও পাবেন। 

আশা করছি ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস এবং জেনারেলাইজড সার্ভিস সম্পর্কিত সবার সমস্ত কনফিউশান ক্লিয়ার করতে পেরেছি। সবশেষে একটা কথাই বলবো, ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের যে ধরণের সার্ভিসই অফার করুন না কেন, সবসময় নিজের কাজের প্রতি প্যাশনেট থাকুন এবং পর্যাপ্ত সময় দিন। দেখবেন ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে খুব তাড়াতাড়ি সাকসেসফুল হতে পারবেন! 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: