অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার

লাইফে সবাই সাকসেসফুল হতে চাইলেও এই কাজটা কিন্তু খুব একটা সহজ নয়। একটু চিন্তা করে বলুন তো আমরা সবাই সাকসেসফুল হওয়ার জন্য শুরুতেই কী করি?আমরা কিছু গোল সেট করি এবং সে গোল অ্যাচিভ করার জন্য কাজ করা শুরু করি। কিন্তু অনেকসময়ই এমন হয় যে আমরা আমাদের ফোকাস থেকে সরে যাই, ডিমোটিভেটেড হয়ে যাই কিংবা যে গোলগুলো সেট করেছি সেগুলো অ্যাচিভ করতে স্ট্রাগল করি। এমনটা ছোট-বড় যেকোনো কাজে এমনকি এখনকার যুগের বহুল আলোচিত ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের ক্ষেত্রেও হতে পারে। এমন সিচুয়েশনে একজন অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার হতে পারেন আপনার লাইফ সেভিওর। অবাক হচ্ছেন, তাইনা? আজকে আমি সচরাচর যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখি সেগুলো থেকে কিছুটা আলাদা বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আজকের লেখায় থাকছে অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সাকসেসফুল করতে হেল্প করতে পারেন। 

অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার বলতে কী বোঝায় এবং এই পার্টনারশীপ কিভাবে কাজ করে? 

চলুন লেখার শুরুতেই অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার কী এবং এই টার্মটা দিয়ে ঠিক কাদেরকে বোঝানো হয় সেটা জেনে আসি। সহজ ভাষায় অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার বলতে তাদেরকে বোঝানো হয় যারা তাদের বুদ্ধি এবং বিচক্ষণতা দিয়ে সেট করা বিজনেস গোল অ্যাচিভ কর‍তে আমাদের হেল্প করেন। যদি উদাহরণ দিতে যাই, তাহলে একটা বিজনেস কোম্পানির সি.এফ.ও সেই কোম্পানির সি.ই.ও এর একজন অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার হিসেবে কাজ করেন। 

সাধারণত অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনাররা একটা বিজনেসে মেন্টর কিংবা কোচের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই ধরণের পার্টনারের সাথে রেগুলার বেসিসে সরাসরি কমিউনিকেট করার সুযোগ থাকে৷ এক্ষেত্রে শুরুতেই দুই পক্ষ থেকে কিছু গোল বা কাজের লিস্ট সেট করে নিতে হয়।

এই গোল সেট করা ব্যাপারটা এই পার্টনারশীপের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন গোল হতে হবে যেটা রিয়েলিস্টিক এবং অ্যাচিভ করা পসিবল। পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট সময় বা টাইমফ্রেম নির্ধারণ করতে হবে যাতে করে ওই সময়ের মধ্যেই সেট করা গোল অ্যাচিভ করতে পেরেছেন কিনা সেটা পরিমাপ করা যায়। 

পরবর্তীতে আপনাকে ও আপনার অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারকে নিয়মিত একে অপরকে কাজের প্রোগ্রেস সম্পর্কে আপডেট দিতে হয়। এভাবেই আপনি যে কাজগুলো কর‍তে চান সেগুলো করা হয়ে যায় এবং নিজের ফোকাসও ঠিক থাকে। সুতরাং বলা যেতে পারে, এই পার্টনারশিপ একধরনের মিউচুয়াল পার্টনারশিপ যেখানে নিজের পাশাপাশি যিনি পার্টনার তারও উন্নতির সুযোগ থাকে। 

শুধু তাই নয়, একজন বিশ্বস্ত অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার আমাদেরকে আমাদের বিজনেস পারফরম্যান্স কেমন হচ্ছে সেটা নিয়ে ফিডব্যাক প্রোভাইড করে থাকেন। পাশাপাশি কী কী করা হলে বিজনেস আরো বেশি গ্রো করবে সেটা নিয়েও তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ সর্বোপরি তারা আমাদেরকে মোটিভেট করেন যেন আমরা আমাদের ট্র‍্যাক থেকে সরে না যাই এবং প্রতিটা গোল অ্যাচিভ করতে পারি৷ 

সুতরাং এতক্ষণে আশা করি বুঝতেই পারছেন, প্রতিটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে একজন অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারের গুরুত্ব ঠিক কতখানি। যদি আরেকটু ডিটেইলে বলতে যাই, তাহলে বলতে হয়, একটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সাকসেসফুল করা কিন্তু মোটেও সহজ কাজ নয়। বরং এই বিজনেসে টিকে থাকতে হলে বিভিন্ন ট্যাকটিকস জানতে হয়, প্রচুর সময় দিতে হয় এবং যেকোনো সিচুয়েশনে মোটিভেটেড থাকতে হয়। অ্যাকাউন্টটিবিলিটি পার্টনাররা এ কাজগুলোকে সহজ করে দেন। 

একজন আইডিয়াল অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারের কী কী কোয়ালিটি থাকা উচিৎ? 

যদি নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে একজন অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, তাহলে এমন কাউকে বেছে নিন যিনি বিশ্বস্ত। মনে রাখবেন, এই পার্টনারশীপের ভিত্তি হলো বিশ্বস্ততা। তাই যিনি বিশ্বস্ত তাকেই বেছে নিন৷ একইসাথে তার নিজের এবং আপনার বিজনেসের গোল অ্যাচিভ করতে ইফোর্ট দিতে সক্ষম এমন ডিসিপ্লিনড কাউকে পার্টনার হিসেবে সিলেক্ট করুন। পাশাপাশি এটাও দেখুন যে তার প্রকৃতপক্ষেই আপনাকে হেল্প করার আগ্রহ রয়েছে কিনা। আগে তার সাথে কথা বলে তার আগ্রহ বোঝার চেষ্টা করুন৷ 

অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিটি হলো তার কমিউনিকেশন স্কিল। তিনি কিভাবে কমিউনিকেট করেন সেদিকে লক্ষ্য করুন৷ তিনি ফ্রেন্ডলি কিনা, সহানুভূতিশীল কিনা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং কিনা, সাপোর্টিভ কিনা ইত্যাদি পরখ করুন। পাশাপাশি তার কমিউনিকেশন স্টাইলের সাথে নিজে কমফোর্টেবল হতে পারবেন কিনা সেটাও ভেবে দেখতে ভুলবেননা। এভাবে সব কোয়ালিটি মিলিয়ে যাকে পারফেক্ট মনে হবে তাকেই পার্টনার হিসেবে বেছে নিন। 

বিজনেস সাকসেসফুল করতে অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারের ভূমিকা 

চলুন এই পর্যায়ে জেনে আসা যাক ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সাকসেসফুল করতে অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারের ভূমিকাগুলো কী কী। 

  • অনেক সময় এমন হয় যে আমরা চাইলেও নিজেদের কাজে মোটিভেটেড থাকতে পারিনা। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের ক্ষেত্রে অন্য বিজনেসগুলোর চেয়ে তুলনামূলক বেশি ফোকাস রাখতে হয় এবং পরিশ্রম করতে হয় বলে সবসময় সমানভাবে মোটিভেটেড থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আর সবাই নিশ্চয়ই জানেন যে এই বিজনেসে একবার ফোকাস সরে গেলে সেটার প্রভাব কতটা বাজে হতে পারে। এরকম সিচুয়েশনগুলোতে একজন অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার থাকলে তার সহায়তায় বিজনেসে মোটিভেটেড থাকতে পারেন। কারণ তারা আপনার মোটিভেশন কমে যাওয়ার কারণ শুনে সে অনুযায়ী মোটিভেট করার চেষ্টা করেন। যার ফলে বিজনেসে ফোকাস ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় এবং তা দিনশেষে সফলতা এনে দিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। 

  • অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারদের দক্ষ মেন্টরিং ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসকে ধীরে ধীরে উপরের দিকে নিয়ে যেতে হেল্প করে। তাদের পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্স এবং মেন্টরিংয়ের ফলে একজন ফ্রিল্যান্সার বুঝতে পারেন যে তাকে বিজনেসের উন্নতির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যেতে হবে। এর ফলে দেখা যায়, তারা নিজেদের কাজ ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করেন। এই চেষ্টার ফলেই বিজনেস সাকসেসফুল হতে শুরু করে। 
  • অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারদের কাছ থেকে বিজনেসের ওভারঅল পারফরম্যান্স নিয়ে ফিডব্যাক পাওয়া যায়। তারা যেমন পারফরম্যান্স ভালো হলে পজিটিভ ফিডব্যাক দেন, তেমনিভাবে তারা প্রয়োজন অনুসারে বিজনেসের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কনস্ট্রাকটিভ ক্রিটিসিজমও দিয়ে থাকেন। তাদের এই কনস্ট্রাকটিভ ক্রিটিসিজম গুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজের বিজনেসের যে সাইডগুলো তুলনামূলক দুর্বল সেগুলো স্ট্রং কর‍তে পারেন। ফলস্বরূপ ক্লায়েন্টদের কাছে বিজনেসের পরিচিতি বাড়ে, ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়ে এবং বিজনেসের গ্রোথ হয়। 
  • শুধুমাত্র ফিডব্যাকই নয়, একজন অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার একজন ভালো বন্ধুও বটে। তাই তাদের কাছ থেকে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সংক্রান্ত যেকোনো উপদেশ কিংবা টিপস নিতে পারেন।

এটুকুই ছিলো একটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনারের ভূমিকা নিয়ে আজকের বিস্তারিত আলোচনা। আশা করছি সবার মনের কনফিউশান দূর করে পেরেছি। আমি এখন এই পার্টনারশিপ যেন বিজনেসে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আনতে পারে সেজন্যে সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই। সেগুলো হলো কাউকে অ্যাকাউন্টিবিলিটি পার্টনার বানানোর পর যখন দুজন কমিউনিকেট করবেন, তখন যেন দুজনেই নন-জাজমেন্টাল থাকেন এবং একজন আরেকজনের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন তা নিশ্চিত করুন৷ কারণ যত বেশি নন-জাজমেন্টাল আর শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, তত বেশি ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করতে সক্ষম হবেন।

পাশাপাশি এমনভাবে গোল সেট করুন, যেন আপনাদের দুই পক্ষের সেট করা গোল নির্দিষ্ট করে রাখা একই সময়ের মধ্যে শেষ হয়। অর্থাৎ এমন যেন না হয় কেউ দুই মাসে একটা গোল অ্যাচিভ করতে চান এবং তার পার্টনার এক বছরে একটা গোল অ্যাচিভ করতে চান। এছাড়াও যখন পার্টনারের সাথে মিটিং করবেন, সেই মিটিংয়ের সময় এবং স্থান তার সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করুন। এবং যদি মিটিংয়ের প্ল্যান কোনো কারণে চেঞ্জ হয়, তাহলে তার সাথে কথা বলে অন্যদিন প্ল্যান সেট করুন। এভাবেই অ্যাকাউন্টিবিলি পার্টনারের সাথে ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সাকসেসফুল করে তুলুন। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: