সুপার ইফেকটিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস

ফ্রিল্যান্সারদের কাছে টাইম ম্যানেজমেন্ট একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের মতো। কিভাবে দিনের ২৪ ঘন্টাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে ক্লায়েন্টদেরকে কোয়ালিটিফুল সার্ভিস প্রোভাইড করা যায় সেটা নিয়ে স্ট্রাগল করেননি এমন ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সত্যি বলতে এ প্রফেশন আর দশটা প্রফেশনের থেকে বেশ আলাদা। এই প্রফেশনে সময়কে যিনি যত ইফেকটিভলি কাজে লাগাবেন, দিনশেষে তিনি তত বেশি লাভবান হতে পারবেন। আজকের লেখায় আমি শেয়ার করবো টাইম ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কিছু টিপস যেগুলো অ্যাপ্লাই করার মাধ্যমে সবাই নিজেদের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে বেনিফিট পেতে পারবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে টাইম ম্যানেজমেন্টের ধরণ কেন অফিস জব থেকে ভিন্ন? 

চলুন শুরুতেই জেনে নেই ফ্রিল্যান্সারদের টাইম ম্যানেজমেন্টের ধরণ কেন অফিস জব থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে ৷ যদি আমি একটা সাধারণ অফিস জবের কথা বলি, সেখানে এমপ্লয়িদের কাজ করার নির্দিষ্ট সময় থাকে এবং প্রত্যেকের কাজ ভাগ করে দেয়া থাকে। এজন্যে যিনি অফিস জব করেন, তিনি সকাল থেকে বিকালের মধ্যেই যাবতীয় কাজ গুছিয়ে ফেলতে পারেন৷ কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়। এ বিজনেসে কাজের সংখ্যা যেমন বেশি, পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও অনেক বেশি। 

যখন কেউ ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস স্টার্ট করেন, তখন তাকে ক্লায়েন্ট খুঁজতে হয় এবং তাদের সাথে কমিউনিকেট করতে হয়, সার্ভিস প্রোভাইড করতে হয়, আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা হতে পারেন সেটা আইডেন্টিফাই করতে হয়, বিজনেসের মার্কেটিং করতে হয়৷ মোটকথা এই বিজনেস যখন ইনিশিয়াল স্টেইজে, তখন একজন ফ্রিল্যান্সারকে অনেকরকম কাজ একসাথে করতে হয়৷ একারণে তখন তারা টাইম ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। 

সুপার ইফেকটিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস

 

শুধু বিজনেসের শুরুর দিকেই নয়, যখন বিজনেসটা গ্রো করতে থাকে, তখন ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকে, মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি কিভাবে আরো ডেভেলপ করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হয়, পাশাপাশি অনেক ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া সত্ত্বেও নিজের সার্ভিসের কোয়ালিটি কিভাবে মেইনটেইন করা যায় সেটাতেও ফোকাস করতে হয়। ফলে দেখা যায়, তখন একজন এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সারও বুঝে উঠতে পারেননা যে কিভাবে তিনি দিনের ২৪ ঘন্টা সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। একারণেই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে সাধারণ জবগুলোর তুলনায় টাইম ম্যানেজমেন্টের ধরণ আলাদা হয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সারদের কোন কোন কারণে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে প্রবলেম হয়? 

ইফেকটিভলি সময়কে কাজে লাগাতে না পারলে ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্টদেরকে সঠিকভাবে কোয়ালিটি সম্পন্ন সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারেননা, ফলস্বরূপ তাদের বিজনেসের গ্রোথ বাধাগ্রস্ত হয়। আমার মতে একজন ফ্রিল্যান্সারের সঠিকভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে প্রবলেম ফেস করার মূল কারণ কাজ সম্পর্কে সঠিক ইনফরমেশন না জানা৷ আপনি যদি একটা কাজ করতে গেলে কিভাবে কী করবেন সেটাই না জানেন, তাহলে কিন্তু কাজটা করতে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি সময় লাগবে৷ ঠিক এ কারণেই ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজ হ্যান্ডেল করতে প্রবলেম ফেইস করেন। 

আবার, যেসব বিজনেসে অলরেডি গ্রোথ কিছুটা ভালো, সেসব বিজনেস কিন্তু একজনের পক্ষে সামলানো বেশ কঠিন৷ আমি বহু ফ্রিল্যান্সারকে দেখেছি যারা নিজের বিজনেসের সব কাজ নিজে একা হাতে করতে গিয়ে কিভাবে ইফেকটিভলি টাইম ম্যানেজমেন্ট করবেন সেটা আর বুঝে উঠতে পারেননা৷ 

শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ডিসট্র‍্যাকশন। যারা নিজেদের বাসায় থেকে বিজনেসের কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়৷ অনেকেই কাজের সময় সোশাল মিডিয়াতে অনেকক্ষণ ধরে ব্রাউজ করেন, কিংবা টেলিভিশন দেখেন আবার কখনো বা অধিক সময় শুয়ে বসে কাটান। এর ফলে পরবর্তীতে দেখা যায় ওই দিন যে কাজগুলো শেষ করার প্ল্যান করেছেন, ওগুলো আর সময়ের অভাবে শেষ করা হয়ে ওঠেনা। 

ফ্রিল্যান্সাররা আরেকটা বড় ভুলের কারণে সাফার করেন৷ সেটা হলো প্রায়োরিটি সেট করতে ভুল করা। তারা জমে থাকা সমস্ত কাজ শেষ করতে চান ঠিকই, কিন্তু তারা বুঝে উঠতে পারেননা কোন কাজটা আগে শেষ করা উচিৎ। এ ভুলের জন্য দেখা যায় যে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে ইম্পর্ট্যান্ট কাজগুলো শেষ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান।

সুপার ইফেকটিভ কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস 

এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন, নতুন বা পুরাতন দুই ধরণের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসেই টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রবলেম ফেইস করতে হয়। তাই চলুন এবার জেনে নেই কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস যেগুলো সবার জন্য খুবই ইফেকটিভ। 

  • যদি কারো ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস থেকে থাকে এবং তিনি রেগুলার বেসিসে ক্লায়েন্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে তাকে সবার শুরুতে রিয়েলিস্টিক হতে হবে। এটা মেনে নিতে হবে যে তার একার পক্ষে সব ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া পসিবল নয়। বেশিরভাগ সময়েই ফ্রিল্যান্সাররা একসাথে একাধিক ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিতে চান। এটা করতে গিয়ে দেখা যায় তারা সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেননা। এটা যেন না হয়, সেজন্যে প্রথমেই রিয়েলিস্টিক মাইন্ডসেট রাখতে হবে। একজন ফ্রিল্যান্সারকে না বলা শিখতে হবে। তাকে বুঝতে হবে যে তার কাছে সার্ভিস নিতে আসা সব ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া তার পক্ষে পসিবল নয়। যখন নিজের ক্যাপাবিলিটি অনুযায়ী ক্লায়েন্টের সংখ্যা মেইনটেইন করবেন, তখন দেখতে পাবেন সময় নিয়ে স্ট্রাগল অনেক কমে যাবে। পাশাপাশি নিজের সার্ভিসের কোয়ালিটিও ইমপ্রুভ করবে। 

  • টাইম ম্যানেজমেন্ট আরো ইফেকটিভ হয় যখন একজন ফ্রিল্যান্সার তার কাজগুলোকে প্রায়োরিটি অনুযায়ী ভাগ করে নেন। অনেকেই রয়েছেন যারা একসাথে সবরকম কাজ করতে চান। দেখা যায়, তারা মার্কেটিংয়ের কাজ করছেন, আবার ক্লায়েন্টদের কোল্ড ইমেইল সেন্ড করছেন, পাশাপাশি যেসব ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিতে হবে সেসব কাজও করছেন। ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, তারা একদিকে যেমন ডেডলাইন মেইনটেইন করে ক্লায়েন্টদের ডেলিভারি দিতে পারছেননা, অন্যদিকে তাদের বিজনেস গ্রো করানোর অন্যান্য কাজও ঠিকমতো হচ্ছেনা। একারণেই কোন কাজের প্রায়োরিটি বেশি এটা আগে ঠিক করে নিতে হবে। 
  • যদি পসিবল হয় প্রতিদিন কী কী কাজ শেষ করবেন সেটার একটা লিস্ট করে রাখতে পারেন। সেই লিস্টে দিনের কোন সময়ে কোন কাজটা করবেন সেটাও উল্লেখ করতে পারেন। যেমনঃ দিনেরবেলা ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং, বিকালে মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজির পিছনে সময় দেয়া, রাতে সার্ভিস রিলেটেড কাজ – এভাবে যদি সময় অনুযায়ী কাজের লিস্ট করে নিতে পারেন তাহলে দেখবেন টাইম ম্যানেজমেন্ট অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। 
  • কাজের লিস্ট বা প্ল্যান করার পর সেই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে নিজেকে মোটিভেটেড রাখুন। নিজেকে মোটিভেটেড ও ফোকাসড রাখতে এমনভাবে কাজের লিস্টটা তৈরি করুন যেন সেই লিস্টে রেস্ট নেয়ার, ফ্যামিলিকে সময় দেয়ার এবং নিজের পারসোনাল কাজগুলো সেরে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, টাইম ম্যানেজমেন্টের অর্থ ২৪ ঘন্টা কাজ করা নয়। 
  • মাল্টিটাস্কিং না করে সবসময় যে কাজ শুরু করবেন, শুধুমাত্র সেটাতেই ফোকাস করুন। কাজ করার সময় যেন কোন ডিসট্যাকশন না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। কাজ করার সময় সোশাল মিডিয়া ব্রাউজ করা, টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। 
  • সবসময় অর্গানাইজড থাকুন। যেই কাজই করুন, সেটার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিন। যদি কোন বাড়তি ইকুইপমেন্ট দরকার হয় সেগুলো কাছে রাখুন। যদি অর্গানাইজড থাকেন, তাহলে দেখবেন প্রতিদিন যেসব কাজ করবেন বলে মনস্থির করবেন, সেগুলো করে ফেলতে পারবেন। 

এগুলোই ছিলো ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের জন্য ইফেকটিভ কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস। সবসময় মনে রাখবেন, টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো করতে পারলে বিজনেস গ্রো করানো যেমন পসিবল হবে তেমনিভাবে নিজের পারসোনাল লাইফ মেইনটেইন করাও সহজ হয়ে যাবে। তাই নিজের বিজনেসে এ টিপসগুলো অ্যাপ্লাই করে দেখবে পারেন, আশা করি ভালো একটা আউটপুট পাবেন। 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: