“ক্লায়েন্ট পাবো কিভাবে?” – প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারের মাথায় কন্টিনিউয়াসলি ঘুরতে থাকা কোশ্চেনগুলোর মধ্যে এটা একটা। কোথা থেকে এবং কিভাবে নিজেদের পছন্দমতো ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া পসিবল হবে সেটা নিয়ে ফ্রিল্যান্সারদেরকে জেনারেলি প্রচুর রিসার্চ করতে হয় এবং একইসাথে এটার পেছনে তাদেরকে প্রচুর ইফোর্টও দিতে হয়। ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার এই টাস্কটাকে কনভেনিয়েন্ট করে তুলতে কোল্ড আউটরিচ কিন্তু দারুণ হেল্পফুল। এই কোল্ড আউটরিচের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের এক্সপেকটেড রেটে সেলস জেনারেট করতে পারে। বলা যেতে পারে, এই আউটরিচের মাধ্যমে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যাওয়াও ইমপসিবল নয় ৷ তাই আজকের লেখায় আমি শেয়ার করবো ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কোল্ড আউটরিচ সাকসেসফুল করার কিছু উপায় যেগুলো রিয়েল লাইফে কাজে লাগিয়ে অবশ্যই সাকসেসফুল হতে পারবেন।
কোল্ড আউটরিচ কী?
সহজ ভাষায় কোল্ড আউটরিচ হলো আগে থেকে ইন্টারেকশন নেই এমন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের লিস্ট ক্রিয়েট করে তাদেরকে ইমেইল বা মেসেজ সেন্ড করা। বলতে পারেন এটা কেন করা হয়ে থাকে? কোল্ড আউটরিচের মেইন মোটিভ হচ্ছে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে নিজের বিজনেস থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিতে ইনফ্লুয়েন্স করা। যদি আমি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের দিকে ফোকাস করি, তাহলে বলা যায়, এ সেক্টরে কোল্ড আউটরিচের উদ্দেশ্য হচ্ছে এমনভাবে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের ইমেইল সেন্ড করা যাতে করে তারা নিজে থেকেই ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে তাদের অফার করা বিভিন্ন সার্ভিস যেমনঃ গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও ইত্যাদি নিতে ইন্টারেস্টেড হন।
ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে কোল্ড আউটরিচের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা এখন খুবই জনপ্রিয়। এটার অন্যতম প্রধান বেনিফিট হলো পছন্দসই ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস অফার করা যায় এবং তাদের কাছ থেকে নিজের এক্সপেকটেড রেটে স্যালারি বা পেমেন্ট নেয়া যায়। আবার দেখা যায়, ক্লায়েন্টদেরকে স্যাটিসফ্যাকটরি সার্ভিস দিতে পারলে তাদের কাছ থেকে লং-টার্ম কাজের সুযোগও পাওয়া যায়।
কোল্ড আউটরিচে সাকসেসফুল হওয়ার টিপস
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে যুক্ত অনেকেই এখন কোল্ড আউটরিচের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করতে চাইলেও সবাই কিন্তু সাকসেসফুল হতে পারেনা। দেখা যায় তারা সঠিক গাইডলাইন এবং স্ট্র্যাটেজির অভাবে ছোট ছোট বিভিন্ন ভুল করেন যেগুলোর কারণে তাদের কোল্ড আউটরিচ ক্যাম্পেইন সাকসেসফুল হয়না। সুতরাং চলুন এখন দেরি না করে জেনে আসা যাক কিভাবে কোল্ড আউটরিচে সাকসেসফুল হতে পারেন।
কোল্ড আউটরিচ সাকসেসফুল করতে হলে কোন প্ল্যাটফর্মে বা চ্যানেলে ক্যাম্পেইন চালাবেন সেটা সবার আগে ডিসাইড করতে হবে। কোল্ড আউটরিচ কিন্তু একটামাত্র প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ নয়, বরং কেউ চাইলে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্নভাবে এ ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন৷ এখন অনেকের মনে হতে পারে, তাহলে যত বেশি চ্যানেলে ক্যাম্পেইন চালানো হবে, তত বেশি পরিমাণে ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল হবে ৷ কিন্তু এই ধারণাটা সঠিক নয় ৷ বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আমি বলবো, কোল্ড আউটরিচের ক্ষেত্রে শুরুটা যত সিম্পল রাখা যায়, ততই বেটার। কারণ শুরুরদিকে একসাথে অনেকগুলো প্ল্যাটফর্মে ক্যাম্পেইন রান করতে গেলে কখনোই ঠিকমতো ফোকাস করা যায়না। ফলস্বরূপ দিনশেষে দেখা যায়, আপনি ইফোর্ট দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু নিজের এক্সপেকটেড রেজাল্ট পাচ্ছেননা। তখন দেখা যায় বেশি ক্লায়েন্ট পাওয়া তো দূরে থাক, একজন ক্লায়েন্ট পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। নিশ্চয়ই আইডিয়া করতে পারছেন একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য ব্যাপারটা কি পরিমাণ ফ্রাস্ট্রেটিং হতে পারে!
তাই, এমনটা যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে কোল্ড আউটরিচের জন্য শুরুর দিকে সিংগেল প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন। চাইলে নিজের পছন্দমতো যেকোন প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে পারেন, তবে আমি বলবো লিংকডইন কিংবা ইমেইল এ দুটার যেকোন একটা বেছে নিতে।
একটা ইমেইল অ্যাড্রেস থাকা তো এখনকার যুগে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুরো পৃথিবীতে ইমেইল ইউজারেরও অভাব নেই। স্টুডেন্ট বলুন, ফ্রিল্যান্সার বলুন কিংবা পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টই বলুন, দিনে এটলিস্ট একবার ইমেইল চেক করেননা এমন কাউকে এখন আর খুঁজে পাবেননা। তাই ইমেইলের মাধ্যমে কোল্ড আউটরিচ চালানোর প্ল্যানটা কিন্তু একটা সেইফ অপশন। তাই পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের কাছে রিচআউট করতে ইমেইলের হেল্প নিতে পারেন৷
অন্যদিকে,
লিংকডইন এখনকার অন্যতম জনপ্রিয় প্রফেশনাল প্ল্যাটফর্মগুলোর একটা। তাই যদি কোন ফ্রিল্যান্সার মনে করেন, লিংকডইন ইউজ করে কোল্ড আউটরিচের মাধ্যমে তারা তাদের পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে খুঁজে পেতে পারবেন, তাহলে লিংকডইনও আউটরিচ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউজ করতে পারেন। সত্যি বলতে এখন অনেক ফ্রিল্যান্সারই লিংকডইনকে কোল্ড আউটরিচের জন্য রিলায়েবল প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে থাকেন। তবে যদি লিংকডইন বেছে নেন, তাহলে অবশ্যই আগে এই প্ল্যাটফর্মটা সম্পর্কে ডিটেইলে জেনে নেবেন। এতে করে পরবর্তীতে অহেতুক ভোগান্তিতে পড়তে হবেনা।
কোল্ড আউটরিচে সাকসেসফুল হতে হলে এরপর যেটা করতে হবে সেটা হলো আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পারসোনা ডিফাইন করা। আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হলেন একটা বিজনেসের রিপিট ক্লায়েন্ট এবং একইসাথে লয়াল ক্লায়েন্ট যারা বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতে ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি হেল্প করে থাকেন। কোল্ড ইমেইল আউটরিচের অন্যতম মোটিভ হচ্ছে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের খুঁজে বের করা। আর সেই কাজটা করার জন্য প্রয়োজন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পারসোনা ডিফাইন করা।
আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পারসোনা বলতে কোন বিজনেসের একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্টের যে যে বৈশিষ্ট্য বা ইনফরমেশন বিদ্যমান থাকে সেগুলোকে বোঝানো হয়। এই পারসোনা একটা বিজনেসে কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারে সেটা ফাইন্ড আউট করতে অনেক হেল্প করে। এরপর পরবর্তীতে যখন এইধরণের ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে কোল্ড ইমেইল সেন্ড করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছ থেকে পজিটিভ রেস্পন্স পাওয়ার চান্স বেড়ে যায়।
একারণেই যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোল্ড আউটরিচ থেকে সাকসেস পেতে চান, তাহলে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পারসোনা ডিফাইনের ক্ষেত্রে জোর দিন। এক্ষেত্রে ট্রাই করুন যথাসম্ভব ডিটেইলে ক্লায়েন্টের ইনফরমেশন যোগ করার। যেমনঃ তাদের পরিচয়, পেশা, বাসস্থান, শখ ইত্যাদি। পাশাপাশি তাদের স্ট্রেন্থ, উইকনেস ইত্যাদিও যোগ করুন। তাছাড়া আপনার অফার করা সার্ভিস কিভাবে তাদেরকে বেনিফিট দিতে পারে সেটাও উল্লেখ করুন। এভাবে যখন ধীরে ধীরে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পারসোনা ডেভেলপ করে ফেলবেন, তখন দেখবেন কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারেন অর্থাৎ কারা কোল্ড আউটরিচের একচুয়াল প্রোস্পেক্ট সেটা সহজেই বুঝে যাবেন।
এখন আমি সবাইকে জানাবো সাকসেসফুল কোল্ড আউটরিচের পেছনের আসল সিক্রেটটা। একজন ফ্রিল্যান্সার কিভাবে কোল্ড ইমেইল বা মেসেজগুলো লিখে সেগুলো পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের কাছে সেন্ড করবেন সেটার ওপরেই কিন্তু ডিপেন্ড করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রেসপন্স আসবে কিনা। অনেকেই এখানে যে বড় মিসটেকটা করেন সেটা হচ্ছে একই ইমেইল বা মেসেজ সবাইকে সেন্ড করেন ৷ যার ফলে দেখা যায়, বেশিরভাগ পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পজিটিভ রেস্পন্স পাওয়া যায়না।
সবসময় মনে রাখবেন, কোল্ড আউটরিচের ক্ষেত্রে ইমেইল বা মেসেজে যা লিখবেন সেটা যত বেশি পারসোনালাইজড হবে, সেন্ড করার পর সেখান থেকে পজিটিভ রেস্পন্স পাওয়ার চান্সও তত বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে পারসোনালাইজ করার জন্য প্রোস্পেক্টের নাম, তার কোম্পানির নাম, আপনার সার্ভিস কিভাবে তার কাজে আসতে পারে ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখ করবেন। এছাড়াও যদি প্রোস্পেক্টের যেকোন ইন্টারেস্ট বা অ্যাচিভমেন্ট থেকে থাকে সেগুলোও মেনশন করতে পারেন। সবশেষে কল টু অ্যাকশন অবশ্যই রাখবেন। যখন এভাবে পারসোনালাইজড ইমেইল সেন্ড করবেন, তখন দেখবেন আগের চেয়ে অনেক বেশি রেটে পজিটিভ রেস্পন্স পাবেন যা কোল্ড আউটরিচকে করে তুলবে সাকসেসফুল।
আরো একটা বিষয় মাথায় রাখবেন,
যখন কোন কোম্পানিকে ইমেইল সেন্ড করবেন, তখন খেয়াল রাখবেন যেন ওই কোম্পানির ডিসিশন মেকার যিনি, তাকেই ইমেইল বা মেসেজ সেন্ড করা হয়৷ অর্থাৎ আপনি সার্ভিস অফার করলে সে সার্ভিস ওই কোম্পানি নেবে কিনা সেটা ডিসাইড করার দায়িত্ব যার হাতে তার কাছেই যেন সেন্ড করা হয়৷ এতে করে পজিটিভ রেসপন্স পাওয়ার চান্স বেড়ে যাবে বেড়ে যাবে।
কোল্ড আউটরিচকে সাকসেসফুল করার জন্য সবার শেষে যেটা করতে হবে সেটা হলো ফলোআপ করা ৷ যাদের কাছ থেকে রিপ্লাই পাবেননা তাদেরকে আবার ইমেইল করে বা মেসেজ দিয়ে দেখুন। এমনভাবে তাদেরকে লিখুন যাতে করে তারা নিজেরাই ইন্টারেস্টেড ফিল করে এবং সার্ভিস পারচেজ করে। অনেকসময় দেখা যায়, পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টরা ফলোআপের পর সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড হন। তাই কোনভাবেই ফলোআপ করা বাদ দেয়া যাবেনা।
সবার শেষে আমি সব ফ্রিল্যান্সারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, মনে রাখবেন, কোল্ড আউটরিচের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার কাজ অনেকটা ইজি হয়ে গেলেও এই কাজটা কিন্তু কখনোই একরাত কিংবা দুই রাতে হওয়া পসিবল না। তাই যদি আউটরিচের শুরুতে পজিটিভ আউটকাম না আসে, তাহলে একেবারেই হতাশ হবেননা বা হাল ছেড়ে দেবেননা। বরং নিজের কোথায় ভুল হচ্ছে সেটা ফাইন্ড আউট করার ট্রাই করুন। দেখবেন কন্টিনিউয়াস ইফোর্ট দিতে দিতেই কোল্ড ইমেইল আউটরিচ সাকসেসফুল করতে পারবেন।