বিজনেস ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করার মাধ্যম হিসেবে ইমেইল তো এখন সবাই ইউজ করেন। কিন্তু কখনো কি বিজনেসে ক্লায়েন্টদের খুঁজে বের করতে কোল্ড ইমেইল ইউজ করেছেন? যারা নতুন তাদের জন্য বলছি, কোল্ড ইমেইল হচ্ছে স্পেসিফিক একধরণের ইমেইল যেগুলো বিজনেসে সেল বাড়ানোর জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে অপরিচিত মানুষদেরকে সেন্ড করা হয়। অর্থাৎ কোল্ড ইমেইল আগে থেকে কোনরকম কানেকশন নেই এবং একইসাথে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারেন এমন মানুষদেরকে সেন্ড করা হয়। এই কোল্ড ইমেইল সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের নলেজ কম্পারেটিভলি কিছুটা কম ই বলা চলে। তবে যারা বিজনেস ফিল্ডে অনেকদিন ধরে ইনভলভড রয়েছেন, তারা ঠিকই জানেন বিজনেসে সেল বাড়াতে চাইলে কোল্ড ইমেইল কতটা কাজে আসে। আজকের লেখায় আমি সবার সাথে স্পেশালি বিগিনারদের জন্য সঠিকভাবে কোল্ড ইমেইল লেখার উপায় শেয়ার করবো।
সঠিকভাবে কোল্ড ইমেইল লেখার উপায়
কোল্ড ইমেইল লেখার উপায় সম্পর্কে জানার আগে চলুন কোল্ড ইমেইল সম্পর্কে আরেকটু ডিটেইলে জেনে নেয়া যাক। শুরুতেই বলেছি, কোল্ড ইমেইল জেনারেলি অপরিচিত মানুষদেরকে পাঠানো হয়। এই ইমেইলগুলো এমনভাবে লেখা হয়ে থাকে যাতে করে কোন একটা বিজনেস কোম্পানি থেকে এগুলো সেন্ড করার পর পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টরা সে বিজনেস কোম্পানি থেকে তাদের প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস পারচেজ করতে ইন্টারেস্টেড ফিল করেন ।
অর্থাৎ সহজ বাংলায় কোল্ড ইমেইল রিসিভ করার পর যদি ক্লায়েন্ট কনভিনসড হন, তাহলে তিনি যে কোম্পানি থেকে ইমেইল সেন্ড করা হয়েছে তাদের থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নেন৷ যারা অনেকদিন ধরে বিজনেস করছেন তারা রেগুলারলি ই কোল্ড ইমেইলের হেল্প নিয়ে থাকেন৷ বিশেষ করে যাদের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস রয়েছে, তারা যেন নিজেদের পছন্দের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে পারেন সেজন্যেও ক্লায়েন্টদেরকে কোল্ড ইমেইল সেন্ড করেন।
একটা বিষয় কী জানেন ?
প্রতিদিন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন বিজনেস কোম্পানির কাছ থেকে শতশত কোল্ড ইমেইল পেয়ে থাকেন। তারা এগুলোর মধ্যে অনেক ইমেইল ওপেন করেও দেখেননা৷ আবার একইসাথে এটাও দেখা যায়, অনেক সময় এই ইমেইলগুলোর মধ্যে থেকেই ক্লায়েন্টরা কোন একটা কোম্পানিকে সিলেক্ট করে তাদের কাছ থেকে সার্ভিস নেন৷ তাহলে, এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই বুঝে গিয়েছেন যে নিজের বিজনেসে ক্লায়েন্ট পাওয়া আদৌ পসিবল হবে কিনা সেটা ডিপেন্ড করে তাদেরকে সেন্ড করা কোল্ড ইমেইলের কোয়ালিটি কতটুকু ভালো সেটার ওপর।
তাই বিজনেসে পছন্দমতো ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে আর যাই করুননা কেন, কোল্ড ইমেইল লেখার উপায় সম্পর্কে প্রোপার নলেজ রাখা কিন্তু ম্যান্ডেটরি। কারণ যদি পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের ভুলভাল ফরম্যাটে কোল্ড ইমেইল সেন্ড করেন, তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার চান্স হান্ড্রেড পারসেন্ট। তাই চলুন আর দেরি না করে জেনে আসা যাক সঠিকভাবে কোল্ড ইমেইল লেখার উপায়গুলো সম্পর্কে।
১।পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের পজিশনে নিজেকে রেখে চিন্তা করা
জ্ঞানীরা সবসময় বলেন, অন্যের পজিশনে নিজেকে রেখে চিন্তা করলেই নাকি তার অবস্থা সবচেয়ে ভালোভাবে রিয়েলাইজ করা যায়।
কি ভাবছেন? হঠাৎ এই কথা কেন বললাম?
আসলে কোল্ড ইমেইল লেখার উপায় নিয়ে ডিসকাস করার শুরুতে যে ভাইটাল ইনফরমেশনটা সবাইকে জানাতে চাই সেটা হলো, এই ইমেইল কখনো এমন ফরম্যাটে কখনোই লিখবেননা, যে ফরম্যাটের ইমেইল পেলে আপনি নিজেই সেগুলো ওপেন করে দেখতে চাইবেননা । যদি কোল্ড ইমেইল লেখায় প্রো হতে চান, তাহলে শুরুতেই যাদেরকে ইমেইল সেন্ড করবেন, সেসব পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের পজিশনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে ভাবুন যে ঠিক কোন ধরণের ল্যাংগুয়েজ টোন ইউজ করে লেখা কোল্ড ইমেইল পড়তে নিজে ইন্টারেস্টেড ফিল করবেন৷ এভাবে খুব ইজিলি নিজেই আইডেন্টিফাই করতে পারবেন যে ঠিক কেমন টোনে লেখা কোল্ড ইমেইল থেকে বিজনেসে ক্লায়েন্টদের অ্যাটেনশন পাওয়া ইজি হবে।
২। পারসোনালাইজড ইনট্রোডাকশন রাখা
এই যুগে কেই ই শুয়ে বসে অলস সময় কাটাননা। প্রত্যেকেরই সময়ের ভ্যালু রয়েছে। তাই যদি কোল্ড ইমেইলের ইনট্রোডাকশনে কোনোপ্রকার পারসোনালাইজেশন না রাখেন, তাহলে দেখবেন প্রচুর ইফোর্ট দিয়ে এবং সময় খরচ করে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের ইমেইল সেন্ড করার পরেও তাদের কাছ থেকে এক্সপেকটেড রেসপন্স পাবেননা।
এর কারণ কী বলুন তো?
আমি ই বলে দিচ্ছি। যখন কোল্ড ইমেইলের ইনট্রোডাকশনে কিংবা মেইন বডিতে কোনোপ্রকার পারসোনালাইজেশন না থাকে, তখন সব কোল্ড ইমেইলের টোন একই রকম মনে হয়। আর আমিতো আগেই বলেছি একজন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট রেগুলারলি প্রচুর কোল্ড ইমেইল পেয়ে থাকেন৷ একারণে তখন যেসব মানুষকে কোল্ড ইমেইল সেন্ড করছেন তারা ভেবে বসেন তাদেরকে ইমেইলটা সেন্ড করার জন্য ওই বিজনেস কোম্পানি থেকে কোনোপ্রকার বাড়তি ইফোর্টই দেয়া হয়নি। এরপর তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আর সে কোম্পানি থেকে সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড ফিল করেননা।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, নিজের সেন্ড করা কোল্ড ইমেইল যেন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের কাছে সেন্ড হওয়ার পর সেটা পুরোটা পড়া হয় এবং পজিটিভ রেসপন্স পাওয়া পসিবল হয়, সেটা নিশ্চিত করতে পারসোনালাইজড ইনট্রোডাকশন থাকা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে ইমেইলের ইনট্রোডাকশন পারসোনালাইজড করবেন?
এক্ষেত্রে আমার প্রথম টিপস হলো,কোল্ড ইমেইলের শুরুতে নিজের বিজনেসের গুণগান না করে প্রোস্পেক্ট অর্থাৎ যাকে ইমেইল সেন্ড করছেন তার কোম্পানির ব্যাপারে পজিটিভ কিছু লেখার ট্রাই করুন। ধরুন, যদি প্রোস্পেক্টের বিজনেস কোম্পানি রিসেন্টলি কোন ব্যাপারে সাকসেস পেয়ে থাকে তাহলে তাকে কনগ্রাচুলেট করতে পারেন। যদি এটা করতে পারেন তাহলে প্রোস্পেক্টের কাছে যে বিষয়টা ক্লিয়ার হবে সেটা হলো তার কোম্পানির ব্যাপারে এনাফ রিসার্চ করার পরেই তাকে ইমেইল সেন্ড করা হয়েছে। তখন তিনি খুব ন্যাচারালিই ওই ইমেইলের দিকে অন্য ইমেইলগুলোর তুলনায় বেশি অ্যাটেনশন দেবেন এবং এক্ষেত্রে তার দিক থেকে পজিটিভ রেসপন্স আসার চান্সও অনেক বেড়ে যাবে৷
এছাড়াও যেটা করতে পারেন, সেটা হলো প্রোস্পেক্ট এবং নিজের কমন ইন্টারেস্ট খুঁজে বের করার ট্রাই করা। যদি পসিবল হয় তাহলে যাদেরকে ইমেইল সেন্ড করবেন তাদের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকে কমন ইন্টারেস্ট খুঁজে বের করার ট্রাই করুন এবং সেটা ইমেইলে হাইলাইট করুক। এতে করে প্রোস্পেক্টের অ্যাটেনশন পাওয়া পসিবল হবে৷
৩। টু দা পয়েন্টে ইমেইলের উদ্দেশ্য প্রোস্পেক্টের কাছে তুলে ধরা
যদি নিজের বিজনেসে সেল নিশ্চিত করার জন্য কোল্ড ইমেইল লেখার উপায় সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে যেটা অবশ্যই জানতে হবে সেটা হলো কিভাবে টু দা পয়েন্টে ইমেইল সেন্ড করার উদ্দেশ্য প্রোস্পেক্টের সামনে তুলে ধরতে হবে। সবসময় মনে রাখবেন, যদি ইমেইলের বডিতে বিশাল একটা প্যারাগ্রাফ টাইপ করে প্রোস্পেক্টদের সেন্ড করেন, তাহলে তাদের কাছ থেকে পজিটিভ রেস্পন্স আসার রেট শিওরলি কমে যাবে। তাই কখনোই কোল্ড ইমেইলের সাইজ বড় করবেননা৷ বরং যতটা পসিবল অল্প কথায় ইমেইল সেন্ড করার উদ্দেশ্য তুলে ধরুন৷
এক্ষেত্রে শুরুতেই কেন তাদের কাছে রিচ আউট করছেন সেটা তুলে ধরুন। এরপর কিভাবে নিজের সার্ভিস দিয়ে তাদেরকে বেনিফিট দেয়ার ক্যাপাবিলিটি রয়েছে সেটা বলুন৷ সবচেয়ে ভালো হয় যদি আগের ক্লায়েন্টরা সেইম ক্যাটাগরির সার্ভিস নিয়ে কিভাবে নিজেরা বেনিফিট পেয়েছেন সেটা তুলে ধরতে পারেন। এছাড়াও যেটা আমি করতে বলবো সেটা হলো যদি প্রোস্পেক্টদের কোনো স্পেসিফিক প্রবলেম নিজের সার্ভিসের মাধ্যমে সলভ করতে পারেন, তাহলে তাদেরকে সেটাও জানান।
এতে করে তারা বুঝতে পারবেন যে আপনি আসলেই যথেষ্ট স্কিলড এবং তাদের সাথে কাজ করতে ইন্টারেস্টেড। তখন দেখবেন তাদের কাছ থেকে রিপ্লাই পাওয়াও অনেক ইজি হয়ে যাবে। মোটকথা কোল্ড ইমেইলে যা ই লিখুননা কেন, সেটা আকারে ছোট রাখুন এবং স্পেসিফিক রাখুন৷
৪ । ইমেইলের শেষে কল টু অ্যাকশন রাখা ।
কথায় আছে, “শেষ ভালো যার সব ভালো তার। ” এই কথাটা কিন্তু কোল্ড ইমেইলেও ইকুয়ালি অ্যাপ্লিকেবল৷ ইমেইলের শেষটা যেন ভালো হয় এবং প্রোস্পেক্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রিপ্লাই আসার চান্স বাড়ানো যায় সেকারণেই কোল্ড ইমেইলের শেষে কল টু অ্যাকশন রাখা হয়। তবে মাথায় রাখবেন, কল টু অ্যাকশন প্রতিটা ইমেইলে একবারের বেশি কখনোই রাখবেননা৷ একইসাথে এনশিওর করবেন কল টু অ্যাকশন যেন ঘুরানো প্যাঁচানো না হয়ে স্পেসিফিক হয়।
যেমন কল টু অ্যাকশন হিসাবে ইমেইলের শেষে প্রোস্পেক্টের উদ্দেশ্যে বলতে পারেন, যদি তিনি ইমেইলে অফার করা সার্ভিসের ব্যাপারে ডিটেইলে ডিসকাস করতে চান, তাহলে অমুক দিনে ফোনকল বা ভিডিওকলে মিটিংয়ের মাধ্যমে আপনার সাথে সরাসরি ডিসকাস করতে পারবেন। এভাবে কল টু অ্যাকশন রাখলে এক্সপেকটেড রিপ্লাই পাওয়ার চান্স অনেক বেড়ে যায়।
মূলত এগুলোই হচ্ছে সঠিকভাবে কোল্ড ইমেইল লেখার উপায় যেগুলো ফলো করে কোল্ড ইমেইল সেন্ড করলে বিজনেসে সেল বাড়ানো পসিবল হবে। ট্রাই করেছি কোল্ড ইমেইল কিভাবে লেখা উচিৎ সেই বিষয় রিলেটেড সবার সব কনফিউশান ক্লিয়ার করতে পেরেছি৷ তবে বিগিনারদের জন্য লাস্টলি সাজেশন হিসাবে বলতে চাই, যদি প্রোস্পেক্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রিপ্লাই না পান, কখনোই ডিপ্রেসড হবেননা। বরং তাদেরকে ফিডব্যাক ইমেইল দিয়ে পোলাইটলি জিজ্ঞেস করুন তারা সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড কিনা৷ মোটকথা সমান ইফোর্ট দিয়ে লেগে থাকুন৷ তাহলেই কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইনে সাকসেসফুল হতে পারবেন।