কেউ যখন অনেক প্ল্যানিংয়ের পর নিজের মাইন্ডসেট করে একটা বিজনেস স্টার্ট করেন, তখন তার মেইন ফোকাস থাকে কিভাবে নিজের বিজনেসের গ্রোথ বাড়ানো যায় সেটার দিকে। বিজনেস এক্সপার্টদের মতে জেনারেলি যে বিজনেসে ক্লায়েন্টের সংখ্যা যত বেশি, সে বিজনেস অন্যান্য বিজনেসের তুলনায় অনেক দ্রুত গ্রো করে থাকে । এখন সবার মনে জেগে ওঠা সেই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেনটা হচ্ছে,“সবই তো বুঝলাম! কিন্তু ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়াবো কিভাবে? ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কিন্তু এই ক্লায়েন্ট বাড়ানোর কঠিন টাস্কটা ইজি করে দিতে খুবই ইফেকটিভ।

ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল হলো যখন একজন ক্লায়েন্ট কোন একটা বিজনেস কোম্পানির প্রোডাক্ট ইউজ করে কিংবা সার্ভিস নিয়ে স্যাটিসফাইড হয়ে সে বিজনেস কোম্পানি থেকে সার্ভিস নিতে সবাইকে রিকমেন্ড করেন । অর্থাৎ সহজ বাংলায় ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল হচ্ছে বিজনেস সম্পর্কে ক্লায়েন্টের পজিটিভ রিভিউ কিংবা ফিডব্যাক যা অন্য ক্লায়েন্টদের আপনার কাছ থেকে সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড করে তুলতে হেল্প করে । 

কারো ছোট্ট একটা অনলাইন বিজনেস থাকুক কিংবা বড় কোন শক্তপোক্ত বিজনেস, ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল ছোট-বড় সবধরনের, বিজনেসেই ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করে ।

কিভাবে?

চলুন একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা বোঝার ট্রাই করি। ধরুন, একজন ক্লায়েন্ট তার কোম্পানির কিছু কাজের জন্য এক্সপার্ট একজন ফ্রিল্যান্স  গ্রাফিক ডিজাইনার হায়ার করতে চান । তিনি বিভিন্ন সাইটে তার রিকয়ারমেন্ট মেনশন করে গ্রাফিক ডিজাইনার চেয়ে পোস্ট করার পর অনেক ডিজাইনার তার সাথে কনট্যাক্ট করলেন।  বলতে পারেন শেষ পর্যন্ত ওই ক্লায়েন্ট কোন ডিজাইনারকে হায়ার করবেন ? আমি ই বলে দিচ্ছি। অনেক স্কিলড গ্রাফিক ডিজাইনার ওই ক্লায়েন্টের সাথে কন্টাক্ট করার পরও ক্লায়েন্ট এমন একজন ডিজাইনারকে হায়ার করবেন যার ডিজাইন সম্পর্কে এর আগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ক্লায়েন্ট পজিটিভ ফিডব্যাক দিয়েছেন ! 

এর কারণ কী জানেন?

যখন একজন ক্লায়েন্ট কোন বিজনেস কোম্পানি সম্পর্কে অন্য ক্লায়েন্টদের রিকমেন্ডেশন অথবা পজিটিভ ফিডব্যাক নোটিশ করেন, তখন ন্যাচারালিই সেই বিজনেস কোম্পানির ওপর ক্লায়েন্টের ট্রাস্ট বিল্ড আপ হয়। তখন তিনি ভাবেন যেহেতু এখান থেকে আগে অনেক ক্লায়েন্ট  সার্ভিস নিয়ে বেনিফিট পেয়েছেন তাই নিজের কাজে এই বিজনেস কোম্পানি থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নেয়াই যায়। সুতরাং এখন নিশ্চয়ই সবার কাছে এটা ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছে যে ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল সবার কাছে নিজের বিজনেসের ক্রেডিবিলিটি বাড়াতে কতটা হেল্পফুল। 

ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করার ইফেকটিভ কিছু টিপস

ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কিভাবে বিজনেসের সেল বাড়াতে হেল্প করে সেটা সম্পর্কে অনেকেই ক্লিয়ারলি জানেননা । সত্যি বলতে টেকনোলজির এই যুগে কাউকেই বোকা বলা যায়না। সবাই চান এমন কোথাও নিজের টাকা ইনভেস্ট করতে যেখান থেকে সত্যি সত্যি বেনিফিট পাওয়া পসিবল হবে । তাই সব ক্লায়েন্টই এখন যেকোন বিজনেস কোম্পানির কাছ থেকে প্রোডাক্ট পারচেজ করা কিংবা সার্ভিস নেয়ার আগে ওই কোম্পানির ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়ালগুলো কেমন সেটা ভালোমতো রিসার্চ করে নেন। 

বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে?

চলুন এই ব্যাপারটাকে আরেকটু ডিটেইলে এক্সপ্লেইন করার ট্রাই করি।এখনকার দিনে ক্লায়েন্টরা চোখের সামনে কোন বিজনেস কোম্পানি দেখলেই সেখান থেকে সার্ভিস নেননা। বরং তারা নতুন কোন কোম্পানি থেকে আদৌ সার্ভিস নেবেন কিনা সেটা ডিসাইড করার জন্য সে কোম্পানির ওয়েবসাইট কিংবা  সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল ভিজিট করেন। তখন যদি তারা আগের ক্লায়েন্টদের প্রোভাইড করা রিকমেন্ডেশন দেখতে পান কিংবা পজিটিভ রিভিউ পড়েন, তখন তারা সেই কোম্পানির প্রতি ইন্টারেস্টেড হন এবং বুঝতে পারেন যে ওই কোম্পানিটা থেকে সার্ভিস নিলে আসলেই তারা বেনিফিটেড হতে পারবেন। এভাবে যখন কোন বিজনেসে কোম্পানির ওপর ক্লায়েন্টের ট্রাস্ট ক্রিয়েট হয়, তখন তারা সেখান থেকেই সার্ভিস নেন । ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল ঠিক এভাবেই বিজনেসের সেল বাড়ায় এবং বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতে কাজ করে। 

যেহেতু ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল বিজনেসের সেল বাড়াতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে, সুতরাং যদি নিজের ফ্রিল্যান্সিং কিংবা অন্য যেকোন বিজনেসকে ভালো পজিশনে নিয়ে গিয়ে সাকসেসফুল হতে চান, তাহলে বেশি বেশি ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করা কিন্তু ম্যান্ডেটরি। এখন নিশ্চয়ই সবাই ভাবছেন যে কিভাবে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পজিটিভ ফিডব্যাক কালেক্ট করবেন।

এক্ষেত্রে সবার একটা বিষয় জেনে রাখা উচিত।

সেটা হচ্ছে যদি ক্লায়েন্টকে স্যাটিসফ্যাকটরি সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারেন, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট নিজেই আপনার বিজনেস কোম্পানিকে অন্যদের কাছে রিকমেন্ড করবে৷ অর্থাৎ ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল পেতে চাইলে সবার আগে প্রত্যেক ক্লায়েন্টকে যেন নিজের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস দিয়ে স্যাটিসফাই করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করুন। এছাড়াও কম পরিশ্রমে ইজিলি ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করতে নিচের টিপসগুলো ফলো করতে পারেন। 

  • যখন একজন ক্লায়েন্টের কাজ করবেন, তখন তার সাথে কাজটা বুঝে নেয়ার জন্য কমিউনিকেট করতে হয়। ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল যেন কালেক্ট করতে পারেন সেজন্যে সবসময় ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করুন। যতটুকু পারেন পোলাইটলি ক্লায়েন্টকে বলুন যদি তার সার্ভিস ভালো লেগে থাকে তাহলে তিনি যেন টেস্টিমনিয়াল প্রোভাইড করে। কখনোই ক্লায়েন্টকে প্রেশার দেবেননা। বরং ক্লায়েন্টকে এমনভাবে বলুন এবং সার্ভিস প্রোভাইড করুন যাতে করে তিনি সার্ভিস এবং বিহেভিয়ার দুটোতেই স্যাটিসফাইড হয়ে বিজনেস কোম্পানিকে পজিটিভ রিকমেন্ডেশন প্রোভাইড করেন৷ 

ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল

  • যেসব ক্লায়েন্ট সার্ভিস নিয়ে কিংবা প্রোডাক্ট পারচেজ করে স্যাটিসফাইড বলে মনে করেন, সেসব টার্গেটেড ক্লায়েন্টকে ইমেইল সেন্ড করতে পারেন। তবে এইক্ষেত্রে ট্রাই করুন  ইমেইলের প্যাটার্ন কিছুটা ডিফারেন্ট রাখার। এ ধরণের ইমেইলে কয়েকটা স্পেসিফিক কোশ্চেন ইনক্লুড করুন। যেমনঃ আপনার কাছ থেকে ক্লায়েন্টের সার্ভিস নেয়ার রিজন কী, সার্ভিস নেয়ার পর কতটুকু ক্লায়েন্ট কতটুকু বেনিফিট পেয়েছেন, যে পারপাজে সার্ভিস নিয়েছিলেন সেটা সার্ভ হয়েছে কিনা, তার নিজের কোন সাজেশন বা ফিডব্যাক আছে কিনা ইত্যাদি। এভাবে যদি ক্লায়েন্টদেরকে ইমেইল সেন্ড করেন তাহলে দেখবেন কম পরিশ্রমে বেশি পরিমাণে ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করতে পারবেন৷
  • ক্লায়েন্টদেরকে ইনসেন্টিভ অফার করতে পারেন। বিজনেসে কমিউনিকেশনের জন্য ইমেইল তো ইউজ করতেই হয়। তাই ক্লায়েন্টদেরকে ইমেইলের মাধ্যমে জানাতে পারেন যদি তারা সার্ভিস নিয়ে স্যাটিসফাইস হয়ে টেস্টিমনিয়াল প্রোভাইড করেন তাহলে তাদের জন্য ইনসেনটিভের অফার রয়েছে। এই ইনসেনটিভ হতে পারে নেক্সট পারচেজে ডিসকাউন্ট, গিফট কুপন কিংবা প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ফ্রি হোম ডেলিভারি৷ যদি ইনসেনটিভ অফার করেন তাহলে দেখবেন ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করতে খুব বেশি প্রবলেম ফেইস করতে হবেনা। 
  • এখন সব বিজনেসেরই সোশাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ প্রোফাইল থাকে। বিশেষ করে ফেসবুক গ্রুপ, পেইজ,  ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন এ প্ল্যাটফর্মগুলোই বিজনেস ওউনাররা বেশি ইউজ করেন। এসব প্ল্যাটফর্মে যদি কোন ক্লায়েন্ট গ্রুপে, ইনবক্সে কিংবা পোস্টের কমেন্টে কোম্পানি সম্পর্কে পজিটিভ রিভিউ শেয়ার করে থাকেন, তাহলে স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলোকে টেস্টিমনিয়াল হিসেবে ইউজ করতে পারেন। 
  • প্রত্যেকটা বিজনেসেই এমন কিছু ক্লায়েন্ট থাকেন যাদেরকে ওই বিজনেস কোম্পানির টপ ফ্যান ই বলা চলে। কারণ তারা একটা বিজনেস কোম্পানি থেকে বারবার তাদের প্রোডাক্ট পারচেজ করেন অথবা নিজের প্রয়োজনমতো সার্ভিস নেন। এমন ক্লায়েন্টদেরকে লয়াল ক্লায়েন্ট বলা হয়। এই লয়াল ক্লায়েন্টদের কাছে টেস্টিমনিয়াল চেয়ে দেখতে পারেন। বেশিরভাগ কেইসে এমন ক্লায়েন্টদেরকে টেস্টিমনিয়াল প্রোভাইড করতে বললে তারা কখনোই বিজনেস ওউনারদের নিরাশ করেননা। 
  • যদি কম ইফোর্টে ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করতে চান এবং নিজের একটা বিজনেস ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে সেই ওয়েবসাইটে ফিডব্যাক নামের সেকশন রাখতে পারেন যেখানে স্যাটিসফাইড ক্লায়েন্টরা ইজিলি তাদের পজিটিভ রিভিউ শেয়ার করতে পারবেন৷ 
  • যদি কোন ক্লায়েন্টের সাথে ভিডিওকলে কমিউনিকেট করতে হয় এবং যদি তিনি পজিটিভ ফিডব্যাক প্রোভাইড করেন, তাহলে ক্লায়েন্টের পারমিশন থাকলে সেই ভিডিওটাকেই নিজের বিজনেসের ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল হিসাবে ইউজ করে ফেলতে পারেন। 

একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখবেন, ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল বিজনেসে সেল জেনারেট করার পাশাপাশি বিজনেস মার্কেটিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ তাই সহজে বেশি বেশি ক্লায়েন্ট টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করতে চাইলে ওপরের টিপসগুলো উইদাউট এনি ডাউট ফলো করতে পারেন। আশা করি কেউ কোনভাবেই নিরাশ হবেন না।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: