পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং হলো নিজেকে সবার সামনে প্রোমোট করা

আজকের এই সুপার কম্পিটিটিভ যুগে সবার মাঝে “পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং “এ কথাটা বেশ ফ্যামিলিয়ার। এ ফ্যামিলিয়ার হওয়ার অবশ্য কারণও আছে। এখনকার দিনে লাইফের প্রতিটা ক্ষেত্রে অন্য সবার থেকে নিজেকে আলাদাভাবে এক্সপ্রেস করতে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিংয়ের কোন তুলনাই হয়না৷ ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও সাকসেসফুল হতে হেল্প করে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং। তবে আমাদের দেশে যারা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস করে থাকেন, তারা এ ব্যাপারটায় কেন যেন তেমন একটা গুরুত্ব দেননা। বরং তারা বেশিরভাগ সময়েই ক্লায়েন্ট খুঁজতে বিজি থাকেন। অথচ যদি সঠিকভাবে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় জানা থাকে, তাহলে আর আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে এত স্ট্রাগল করতে হয়না। আজকের এই আর্টিকেলে আমি কিভাবে সবচেয়ে ইফেকটিভ ওয়েতে নিজের ফ্রিলান্সিং বিজনেসের জন্য পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করা যেতে পারে সেটা নিয়ে কিছু টিপস শেয়ার করবো যেগুলো নতুন -পুরাতন সব ফ্রিল্যান্সারদের জন্য হেল্পফুল হবে। 

পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং কী?  

চলুন শুরুতেই পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং ব্যাপারটা কী সেটা বোঝার ট্রাই করি। কারণ যদি এটার মূল কনসেপ্ট না বোঝেন তাহলে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় সম্পর্কে যতই টিপস দেই না কেন, সেগুলো মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ার চান্স ই বেশি। সহজ বাংলায় পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং হচ্ছে এমন একটা প্রসেস যেটার মাধ্যমে নিজের ইউনিক আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করা হয়। অর্থাৎ পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং হলো নিজেকে সবার সামনে এমনভাবে প্রোমোট করা যাতে করে বাকি সবার থেকে নিজেকে আলাদাভাবে এক্সপ্রেস করা পসিবল হয়। 

এখন নিশ্চয়ই সবাই ভাবছেন “নিজেকে আবার আলাদাভাবে এক্সপ্রেস কিভাবে করে? সেইম স্কিল তো অনেকের থাকতেই পারে,তাহলে কিভাবে নিজের ইউনিক আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করবো? “এবার একটু ভেবে বলুন তো ,এখনকার দিনে এত এত ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস থাকার পরেও কেন ক্লায়েন্টরা স্পেসিফিক কিছু ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকেই সার্ভিস নিতে চান? এর কারণ হলো সেসব ফ্রিল্যান্সার এমনভাবে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করেছেন যা তাদেরকে ক্লায়েন্টের চোখে আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিস প্রোভাইডার করে তুলেছে। যার ফলে তারা ক্লায়েন্টদের ট্রাস্ট অর্জন করতে পেরেছেন এবং বেশি বেশি সেল জেনারেট করতে পেরেছেন। 

পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার সময় একজন ফ্রিল্যান্সারকে তার সেক্টরে যে স্কিল রয়েছে কিংবা এক্সপার্টাইজ রয়েছে সেটা অবশ্যই হাইলাইট করতে হয় । একইসাথে অডিয়েন্সকে এটাও বোঝাতে হয় যে তিনি তার কাজের প্রতি কতটা প্যাশনেট এবং তিনি তার কাজের সেক্টরটায় এনাফ এক্সপ্লোর করেছেন। এভাবে যখন তিনি অডিয়েন্সের সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করেন, তখন অডিয়েন্সদের তার ওপর ট্রাস্ট বিল্ডআপ হয়। পরবর্তীতে এই অডিয়েন্সদের মধ্যে থেকে অনেকেই সেই ফ্রিল্যান্সারের বিজনেস ক্লায়েন্ট হন ।

আপনাদের সবার বেটার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য আমি আমার পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সও শেয়ার করছি । আমি প্রফেশনে একজন ডিজাইনার। আমার নিজের ডিজাইন এজেন্সি রয়েছে। যখন আমি এই এজেন্সিটা স্টার্ট করি, তখন বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি ডেভেলপ করার পাশাপাশি নিজের পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিংয়েও যথেষ্ট জোর দিয়েছিলাম। এর ফলে খুব অল্প সময়েই বহু ক্লায়েন্টের ট্রাস্ট গেইন করতে পেরেছি এবং এখনও আমি আমার এজেন্সিটা সাকসেসফুলি রান করছি। সুতরাং নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পেরেছেন যদি পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় জেনে সেগুলো সঠিকভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারেন, তাহলে নিজের বিজনেসের ওভারঅল পারফরম্যান্সও ইমপ্রুভ করতে পারবেন৷ 

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সঠিকভাবে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় 

জেনারেলি ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে বাকিসব বিজনেসের তুলনায় কম্পিটিশন বেশি থাকে। একে তো এই বিজনেস প্রফিটেবল, তারওপর আবার রিমোটলি কাজ করার অ্যাডভান্টেজ রয়েছে৷ একারণেই এখন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে রেগুলার বেসিসে অনেক মানুষ যুক্ত হচ্ছে। যার রেজাল্ট হিসেবে দেখা যাচ্ছে একই সার্ভিস অনেকে অফার করছে। তাই যদি ক্লায়েন্টদের সামনে নিজের ব্র‍্যান্ডিং করতে না পারেন, তাহলে শিওর থাকতে পারেন ক্লায়েন্ট কখনোই আপনার কাছে আসবেনা। একারণেই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সঠিকভাবে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় গুলো জেনে রাখা খুবই জরুরি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে সে উপায়গুলো জেনে আসি। 

১। নিজের স্ট্রং পোর্টফোলিও থাকা 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে পোর্টফোলিও এর ইম্পর্ট্যান্সকে রান্নায় লবণের ইম্পর্ট্যান্সের সাথে কম্পেয়ার করা যায়। লবণ ছাড়া যেমন রান্না যত ভালোই হোক মুখে তোলা যায়না তেমনিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার যতই স্কিলড হোননা কেন, যদি তার নিজের স্ট্রং পোর্টফোলিও না থাকে তাহলে কোনোভাবেই নিজেকে প্রোমোট করতে পারবেননা। একারণে আমি নিজের স্ট্রং পোর্ফোলিও থাকাকে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় যতগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট বলে মনে করি। কারণ একজন ফ্রিল্যান্সারের স্কিল যত বেশি ক্লায়েন্টদের কাছে তার কদর ততটাই বেশি। আর এক্ষেত্রে স্ট্রং পোর্টফোলিও তার স্কিলকেই ক্লায়েন্টদের সামনে রিপ্রেজেন্ট করে। একারণে যে সেক্টরেই কাজ করে থাকুননা কেন, নিজের পোর্টফোলিও যেন স্ট্রং হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। 

পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায়

২। কাজের মধ্যে নিজের ইউনিকনেস শো করা 

যদি সঠিকভাবে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করতে চান, তাহলে নিজের কাজে যতটা পারুন ইউনিকনেস দেখানোর ট্রাই করুন। সবসময় মনে রাখবেন, যদি কাজের মধ্যে নিজের ইউনিকনেস শো করেন, তাহলে সেই ইউনিকনেসের মাধ্যমেই ক্লায়েন্টরা আপনাকে চিনবে। যেমন ধরুন,একজন ডিজাইনার যদি তার প্রতিটা ডিজাইনে গতানুগতিক প্যাটার্নের বাইরে গিয়ে আলাদা কিছু করেন, তাহলে সেটার মাধ্যমেই কিন্তু তার পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং হবে। পরবর্তীতে ক্লায়েন্টরা ইউনিক প্যাটার্নের কোনো ডিজাইন দেখলেই সেই ডিজাইনারের কথা মনে করবেন। এটাই কিন্তু আসলে সেই ডিজাইনারের পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং। সুতরাং যতটুকু পসিবল প্রতিটা কাজে নিজের পারসোনাল টাচ রাখার ট্রাই করুন। 

৩। নিজের ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের দিকে ফোকাসড থাকা এবং ওই সেক্টরেই স্কিল ডেভেলপ করা 

একসাথে অনেককিছু শিখতে গেলে কোনকিছুই ঠিকমতো শেখা হয়ে ওঠেনা। এজন্য পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় হিসেবে আমি সাজেস্ট করবো নিজে যে সেক্টরের প্রতি প্যাশনেট সেই সেক্টরের দিকেই ফোকাসড থাকা এবং ওই সেক্টররিলেটেড স্কিল ডেভেলপ করা। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা ফিল্ড যেটাতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে হয়। তাই যদি নিজের সেক্টরের প্রতি প্যাশনেট না হন তাহলে কখনোই এ চ্যালেঞ্জগুলো ফেইস করতে পারবেননা। তখন নিজেকে প্রোমোট করাও টাফ হয়ে যাবে৷ 

একারণে আগে এটা ডিসাইড করুন যে কোন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করবেন। এরপর সেই সেক্টরের প্রতি ই ফোকাসড থাকুন এবং নিজের স্কিল ডেভেলপ করুন। এতে করে দেখবেন পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার সময় প্রচুর বেনিফিট পাবেন। কেননা তখন নিজের এক্সপেরিয়েন্স বাড়বে, এক্সপার্টাইজ বাড়বে। ফলস্বরূপ ক্লায়েন্টদেরকে আরো ভালোমতো সার্ভিস দিতে পারবেন। এতে করে নিজের সুনাম বাড়বে যেটা পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং হিসেবে কাজ করে বিজনেসে সেল বাড়িয়ে তুলবে।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য নিশ সিলেক্ট করে সেটার প্রতি ফোকাসড থাকবেন ওটা খুব তাড়াতাড়ি ডিটেইলে ডিসকাস করার ট্রাই করবো। আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন। 

৪। নিজের অনলাইন প্রেজেন্স অ্যাট্রাকটিভ করা 

যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস মোস্টলি রিমোট হয়ে থাকে, তাই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যদি পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করতে চান তাহলে নিজের অনলাইন প্রেজেন্সের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে৷ বাংলার একটা প্রচলিত কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন “আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। ” যদি কোন ক্লায়েন্ট একজন ফ্রিল্যান্সারের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল কিংবা ওয়েবসাইট ভিজিট করে তার অনলাইন অ্যাকটিভিটিজ দেখে স্যাটিসফাইড না হয় তাহলে কিন্তু পেটে বিদ্যা থাকলেও কপালে ভাত জুটবেনা! একারণে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে নিজের অনলাইন প্রেজেন্স অ্যাট্রাকটিভ করতে সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলগুলোতে নিজের প্রোফাইল পিকচার, বায়ো, স্কিল, পোর্টফোলিও, কাজের এক্সপেরিয়েন্স ইত্যাদি আপডেটেড রাখুন। যদি ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে নিজের ডিজাইন করা গ্রাফিক কন্টেন্টের সাথে হেল্পফুল ছোট ছোট পোস্ট সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে পারেন। এতে করে ক্লায়েন্টকেও নিজের স্কিল সম্পর্কে আইডিয়া দেয়া হয়ে যাবে৷ 

পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিংকে আরো একটু ইফেকটিভ করে তুলতে আমি সাজেস্ট করবো নিজের বিজনেস আর পারসোনাল লাইফ এ দুটার জন্য সেপারেট সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল অপারেট করতে। এতে করে পারসোনাল লাইফের সাথে প্রফেশনালিজম মিক্সআপ হবেনা আবার নিজের যা ইচ্ছা সেগুলোও পোস্ট করার স্বাধীনতা থাকবে। 

এগুলোই ছিলো পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার উপায় সম্পর্কে আজকের ডিসকাশন। একটা কথা মনে রাখবেন, পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং কখনো একদিন বা দুইদিনে হয়ে যায়না। তাই ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং করার জন্য কাজ করাটাই বেটার। তাতে সাকসেসফুল হওয়ার চান্স বেশি থাকবে। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: