ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস থেকে বারবার সরে যাচ্ছেন ?

“ফোকাসড না থাকলে সাকসেস আসেনা।” – এ কথাটা নিশ্চয়ই সবাই একবার হলেও শুনেছেন তাইনা? আসলে জীবনের প্রতিটা স্টেইজে যদি সাকসেসফুল হতে চান, তাহলে হার্ডওয়ার্ক এবং ধৈর্য্যের পাশাপাশি যেটা অবশ্যই প্রয়োজন সেটা হলো নিজের কাজের প্রতি ফোকাসড থাকা। তবে মাঝেমধ্যে কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফোকাস ধরে রাখা পসিবল হয়না। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস করেন, তাদেরকে এ প্রবলেমটা অনেক বেশি ফেইস করতে হয়। এই প্রবলেমের ফলে তাদের কাজের প্রতি মোটিভেশন কমে গিয়ে সেলস জেনারেট হওয়াও কমে যায়। আপনারা জানলে হয়তো অবাক হবেন, অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যাদের কাজের স্ট্যান্ডার্ড অন্য অনেকের তুলনায় ভালো হওয়ার পরেও তারা শুধুমাত্র ফোকাস ধরে রাখতে পারেননি বলে ট্র‍্যাক থেকে ছিটকে পড়েছেন৷ আমি জানি অনেকেই এ প্রবলেম ফেইস করছেন এবং সল্যুশন খুঁজছেন৷ তাই আজকে আমি কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখতে পারবেন সেটা নিয়ে সবাইকে ডিটেইলড গাইডলাইন দেয়ার ট্রাই করবো। আশা করি আজকের লেখাটা থেকে সবাই উপকৃত হতে পারবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখা কেন প্রয়োজন? 

আমরা জানি, ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে একজন ফ্রিল্যান্সার নিজে যে স্কিলে পারদর্শী সে স্কিলের ওপর বেইজ করেই মেইনলি তার বিজনেস দাঁড় করিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কেউ ক্লায়েন্টদেরকে গ্রাফিক ডিজাইন রিলেটেড সার্ভিস প্রোভাইড করেন, কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড সার্ভিস প্রোভাইড করেন আবার কেউ ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। 

একজন ফ্রিল্যান্সার তার বিজনেসে যে ধরণের সার্ভিস দিয়ে থাকেননা কেন, তাকে কিন্তু সেদিকে প্রোপারলি ফোকাসড থাকতে হয়। অনেকেই রয়েছেন যারা ক্লায়েন্টদেরকে একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির সার্ভিস না দিয়ে কিছুদিন পরপর একেকরকম সার্ভিস অফার করতে চান। যেমন ধরুন, কেউ গ্রাফিক ডিজাইনে এক্সপার্ট। তিনি তার বিজনেসে প্রথম দুইমাস গ্রাফিক ডিজাইন রিলেটেড সার্ভিস দেয়ার পর হঠাৎ করে মনে করলেন “ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের তো এখন অনেক ডিমান্ড, তাই ক্লায়েন্টদের সে সেক্টর রিলেটেড সার্ভিস অফার করি! ” এভাবে ঝোঁকের বশে অন্য বিজনেস আইডিয়াতে শিফট করার ফলে বহু মানুষ বিজনেসে নিজেদের ফোকাস থেকে সরে যান। 

বিজনেস রান করতে গেলে মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু সবাই জানেন। অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা নিজের বিজনেসে কেমন ধরণের মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি কিংবা মার্কেটিং মেথোড ফলো করা উচিৎ সেটা না বুঝেই যতরকম মার্কেটিং মেথোড রয়েছে সেগুলো একটার পর একটা বিজনেসে অ্যাপ্লাই করা শুরু করেন। শেষমেষ দেখা যায় ইফোর্ট দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু রেজাল্ট আসে শুন্য। ফ্রিল্যান্সাররা এসব প্রবলেম কেন ফেইস করে জানেন? ঠিকমতো ফোকাসড না হওয়ার কারণে। তারা বুঝতেই পারেননা ফোকাসড থাকা তাদের বিজনেসের জন্য কতটা জরুরি। চলুন লেখার শুরুতেই জেনে নেয়া যাক ঠিক কোন কারণে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখা উচিৎ। 

যখন বিজনেসে ঠিকমতো ফোকাস ধরে রাখতে পারবেন, তখন দেখবেন আশেপাশে যতই ডিসট্র‍্যাকশন থাকুক না কেন, কোনোভাবেই নিজের কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাবেনা। বরং ফোকাসড থাকলে কাজ আরো সঠিকভাবে করা যায় এবং এটা ক্লায়েন্টদের স্যাটিসফ্যাকশনও বাড়িয়ে তুলতে হেল্প করে। 

শুধু তাই নয়, যখন কেউ ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখতে পারেন, তখন দেখা যায় তিনি যে সেক্টরে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিচ্ছেন,সেই সেক্টরে নিজের স্কিল আরো বেশি ডেভেলপ করার আগ্রহ বেড়ে যায়। এতে করে সেই সেক্টরে অন্য অনেকের তুলনায় তিনি আরো বেশি এক্সপার্ট হয়ে যান। তখন তার প্রোভাইড করা সার্ভিসের কোয়ালিটিও বেড়ে যায়। এর ফলে দেখা যায় যেসব ক্লায়েন্টরা ওই ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে একবার সার্ভিস নিয়েছেন, তারা বারবার সার্ভিস নিতে চান। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, ফোকাসড থাকলে বিজনেসে আইডিয়াল ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়ানো যায়। আর সবাই নিশ্চয়ই জানেন একটা বিজনেসকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে এবং সেলস জেনারেট করতে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের ভূমিকা কতটুকু মূল্যবান। 

ফোকাসড থাকার আরেকটা বড় সুবিধা কী জানেন?

সেটা হলো কখনো অন্য ফ্রিল্যান্সারদের মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি দেখে সেটা নিজের বিজনেসে অ্যাপ্লাই করার ইচ্ছা জাগেনা অথবা তাদের সাকসেস দেখে মন খারাপ করে নিজের পিছিয়ে পড়ার চান্স থাকেনা। কারণ তখন একজন খুব ইজিলি এটা বুঝতে পারবেন যে প্রতিটা বিজনেসে ডিফারেন্ট মার্কেটিং মেথোড ফলো করা হয় এবং একেকজনের সাকসেস পেতে একেকরকম সময় লাগে। ফলস্বরূপ তখন নিজের বিজনেসের জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো ঠিক সেটাই করতে পারবেন৷ তাছাড়াও একজন যত বেশি ফোকাসড থাকবেন, নিজের বিজনেসকে একটা ব্র‍্যান্ডে পরিণত করার স্বপ্নটাও তত তাড়াতাড়ি পূরণ করতে পারবেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, যদি ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখতে পারেন, তাহলে বিভিন্নভাবে বেনিফিট পেতে সক্ষম হবেন। 

ফোকাসড থাকার জন্য কী কী করা যেতে পারে?

আমার মতে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখার অন্যতম প্রধান উপায় হলো একজন ফ্রিল্যান্সারের তার বিজনেসের উদ্দেশ্য কী এবং তিনি এই বিজনেসে কী কী গোল অ্যাচিভ করতে চান এই দুইটি বিষয়ে ক্লিয়ার আইডিয়া থাকা। কারণ যখন তিনি এ দুইটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন আশেপাশে যত বাধা-বিপত্তি কিংবা ডিসট্র‍্যাকশন থাকুকনা কেন, তিনি কাজের প্রতি মোটিভেটেড ফিল করবেন এবং কখনোই ফোকাস থেকে সরবেননা। 

অনেক সময় এমন হয় বিভিন্নভাবে ট্রাই করার পরেও কাজ থেকে ফ্রিল্যান্সাররা ডিসট্র‍্যাকডেড হয়ে যান। হতে পারে তারা চারপাশের অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের বিজনেস আইডিয়া দেখে নিজের আইডিয়ার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেন, অথবা এমনও হতে পারে তারা ভাবতে থাকেন তারা আদৌ এই বিজনেস থেকে সাকসেসফুল হতে পারবেন কিনা। এমন সময়গুলোতে নিজের ফোকাস ফিরিয়ে আনার জন্য থাকার নিজের বিজনেসের বিভিন্ন সাকসেসফুল মোমেন্টের কথা চিন্তা করুন। ভাবুন এই ছোট-বড় সাকসেসফুল মোমেন্টগুলোর মধ্য দিয়ে আজকে থেকে কয়েক বছর পরে নিজেকে ঠিক কোন পজিশনে দেখতে চান। দেখবেন ইনস্ট্যান্টলি এটা ফিল করবেন যে “আশেপাশে যার আমার চেয়ে যত বেটার বিজনেস আইডিয়াই থাকুকনা কেন, আমি আমার বিজনেসকেই এগিয়ে নিয়ে গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সাকসেসফুল হবো।” সত্যি বলছি, এই ট্রিকটা কিন্তু অনেক বেশি ইফেকটিভ। তাই এটা ট্রাই করতে ভুলবেননা। 

 

এর পাশাপাশি আমি যেটা করতে বলবো সেটা হলো কখনোই একসাথে খুব বেশি কাজ করা যাবেনা। কেননা এতে করে স্ট্রেসের কারণে কাজ করার ইচ্ছা কমে যায় এবং কোন কাজ কখন কিভাবে করবেন সেটা চিন্তা করতে করতেই সময় চলে যায় যা একজনের ফোকাস ধরে রাখার অ্যাবিলিটি কমিয়ে দেয়। তাই অর্গানাইজড ওয়েতে কাজ করুন। শুরুতেই দেখুন জমে থাকা কাজগুলোর মধ্যে কোনটা আগে শেষ করা সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। হতে পারে একটা গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেসে কয়েকজন ক্লায়েন্টকে কিছু সার্ভিস ডেলিভারি দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে ক্লায়েন্টকে ডেলিভারি দেয়ার জন্য হাতে সবচেয়ে কম সময় আছে তার কাজটাই আগে করুন। এভাবে বিজনেসের কাজ করার সময় কাজের প্রায়োরিটি সেট করুন৷ কারণ ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের একেকজনের একেকরকম ডিমান্ড থাকে। তাই একসাথে সবার কাজ করতে বসলে ফোকাস তো ধরে রাখতে পারবেনইনা, পাশাপাশি কাজেও কিন্তু ভুল হতে পারে৷ 

এক্ষেত্রে একটা কাজ করার সময় সেটাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন এবং প্রতিটা কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার ট্রাই করুন। কখনোই একটানা বেশিক্ষণ কাজ করবেননা। বরং কাজের মাঝে ছোটখাটো ব্রেক নিন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নোটবুকে কিংবা ফোনের মধ্যেই একটা টু-ডু লিস্ট মেইনটেইন করতে পারেন। সেই লিস্টে নিজের সারাদিনে কী কী কাজ শেষ করতে হবে সেটা লিখে রাখতে পারেন। টু-ডু লিস্ট টাইম ম্যানেজমেন্টে অনেক বেশি হেল্প করে। যদি এই লিস্ট তৈরি করে সেটা মেইনটেইন করে কাজ পারেন, তাহলে দেখবেন সময়ের কাজ সময়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেখবেন যতই কাজের প্রেশার থাকুক, ঠিকই ফোকাসড থাকতে পারবেন। 

আশা করি সবাই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ফোকাস ধরে রাখার গুরুত্ব এবং কিভাবে ফোকাসড থাকতে পারবেন সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। সবসময় মনে রাখবেন, যদি ফোকাসড থাকতে না পারেন, দিনশেষে কোন পরিশ্রমই কিন্তু কাজে আসবেনা। তাই বিজনেস সাকসেসফুল করতে চাইলে আজ থেকেই নিজের ফোকাস ঠিকমতো আছে কিনা সেটা ফাইন্ড আউট করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। 

 

 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: