কখনও আপনার সাথে এমন হয়েছে যে মাথায় একটা ফ্যান্টাস্টিক আইডিয়া আসার পরেও অন্যেরা কি ভাববে এটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে সে আইডিয়া নিয়ে আর কাজ করাই হয়ে ওঠেনি? সত্যি বলতে কমবেশি সবার সাথেই কিন্তু এমন হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে সবাইকে খুশি করে চলার একটা টেনডেন্সি কাজ করে। আমরা চাই আমরা যা ই করিনা কেন, আমাদের পরিবার-পরিজন,বন্ধুবান্ধব যেন আমাদের পাশে থাকে। আমরা চাইনা আমাদের কাজ নিয়ে কেউ কোনোপ্রকার সন্দেহ প্রকাশ করুক। একারণেই দেখা যায় “পাছে লোকে কিছু বলে “ এটা ভাবতে ভাবতেই অনেক সময় আমরা মন থেকে যেটা চাই সেটা করতে পারিনা। যদি আমি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর নিয়ে বলি, ফ্রিল্যান্সিংকে নিঃসন্দেহে বর্তমানকালের অন্যতম অ্যাট্রাকটিভ ক্যারিয়ার চয়েসগুলোর মধ্যে একটা বলা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের আশেপাশে এমন অনেকে রয়েছেন যারা অন্যেরা কি ভাববে এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ইচ্ছা থাকার পরেও এ সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে পারেননা। আজকের লেখায় আমি শেয়ার করবো একজন মানুষ অন্যেরা তাকে নিয়ে কি ভাবছে সেদিকে ফোকাস না করে কিভাবে নিজের কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। আশা করি যেসব মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসবেন কিনা তা নিয়ে দোটানার মাঝে রয়েছেন তাদের কিছুটা হলেও উপকার হবে। 

চলুন শুরুতেই ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আমাদের সোসাইটি কী ভাবে সেটা নিয়ে একটু অ্যানালাইসিস করা যাক। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বেড়ে গেলেও এখনও অনেক পরিবারেই ফ্রিল্যান্সিং করাকে ভালো চোখে দেখা হয়না।

যেমন ধরুন,একজন খুব ভালো গ্রাফিক ডিজাইন পারেন এবং তিনি একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার হতে চান। এমন অবস্থায় দেখা যায়, তিনি এই ইচ্ছার কথা তার পরিবারকে জানালেই পরিবার বেঁকে বসে। কারণ পরিবারের সদস্যরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের চেয়ে আর দশটা সাধারণ চাকরিকেই বেশি গুরুত্ব দেন। আবার যদি কোনোভাবে এটা পাড়া-প্রতিবেশি জানতে পারে, তখনও দেখা যায় ফ্রিল্যান্সার হতে চাওয়া মানুষটাকে নিয়ে তারা অনেকরকম বিরূপ মন্তব্য করেন৷ এমন অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যিনি ফ্রিল্যান্সার হতে চান, তিনি এই বিরূপ মন্তব্যগুলোর ভয়ে নিজের ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন স্যাক্রিফাইস করেন। শুধু তাই নয়, এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যথেষ্ট ভালো করা সত্ত্বেও অন্যদের কাছ থেকে জাজড হন। এরপর তারা ডিমোটিভেটেড ফিল করেন এবং পরবর্তীতে এর প্রভাব তাদের নিজেদের কাজের মধ্যেও পড়ে। 

 

কিন্তু আপনারা একটু ভেবে বলুন তো, নিজের স্বপ্ন পূরণে অন্যেরা কী ভাববে না বলবে এটা কী কোনো বাধা হওয়া উচিৎ? আমার মতে কখনোই নয়। নিজের যেকোনো স্বপ্ন পূরণে করতে চাইলে অন্যেরা কী ভাববে সেটা মাথা থেকে শুরুতেই ঝেড়ে ফেলা দিতে হয়। কিন্তু কিভাবে সেটা করা পসিবল এটাই অনেকে বুঝতে পারেননা। তাই চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে অন্যদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের কাজে ফোকাসড থাকা যায়। 

১। নিজের মাইন্ডসেট ঠিক রাখুন এবং ফোকাসড থাকুন। মাইন্ডসেট ঠিক রাখলে আশেপাশে যতই ডিসট্র‍্যাকশন থাকুক না কেন, সেগুলো কখনোই কাউকে নিজের ফোকাস থেকে সরাতে পারেনা। তাই যদি মন থেকে কিছু করার স্বপ্ন দেখে থাকুন না কেন-হোক সেটা ছোট কিংবা বড় যেকোনো কাজ, সেটা যেকোনো মূল্যে করে ছাড়বেন এমন ডিটারমিনেশন রাখুন। যেমনঃ যদি কেউ সত্যিকার অর্থেই একজন ফ্রিল্যান্সার হতে চান এবং তার এ সেক্টরে ক্যারিয়ার বিল্ড-আপ করার মতো স্কিল থেকে থাকে, তাহলে তাকে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার মাইন্ডসেট ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তার স্বপ্ন বা ইচ্ছার সামনে অন্যেরা কী ভাববে বা কী বলবে সেটা ম্যাটার করেনা। এভাবে চিন্তা করলে দেখবেন আপনাকে নিয়ে অন্যেরা কী বলবে সেটা নিয়ে আর ভাবতে হবেনা এবং খুব সহজেই নিজের কাজে ফোকাসড থাকতে পারবেন। 

২। আমরা চলার পথে সবাইকে খুশি করে চলতে চাইলেও বাস্তবতা অনেকটাই আলাদা।একজন মানুষের পক্ষে সবাইকে খুশি করা কখনোই পসিবল নয়। বলা হয়ে থাকে, প্রতিটা ভালো কাজেই বাধা-বিপত্তি আসে। একটা ভালো কাজ করতে গেলে একেকজন একেকরকম কথা বলবেই৷ তাই এটা মেনে নিতে শিখুন যে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে সবাইকে খুশি করে সেটা পূরণ করা পসিবল নাও হতে পারে। এমন হতেই পারে অনেকেই বিদ্রুপ করবে,আবার অনেকে এমন কথা বলবে যেগুলো খুবই ডিমোটিভেটিং। কিন্তু সেগুলোতে দমে গেলে চলবেনা। বরং ভাবতে হবে যে যা বলে বলুক, কিন্তু এগিয়ে যাওয়া থামানো যাবেনা। হ্যাঁ হয়তো আশেপাশের মানুষের কথা শোনার পর একটু মন খারাপ হতে পারে, কিন্তু কখনোই থেমে গেলে চলবেনা৷ কারণ যারা লোকজনের বাজে কথায় থেমে না গিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যান,তারাই  দিনশেষে সফল হতে পারেন। বাংলাদেশে এমন অনেক সাকসেসফুল ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা তাদের ফ্রিল্যান্সিং জার্নির শুরুর দিকে অনেকের কাছ থেকে বাজে কথার স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু তারা এতে দমে যাননি। বরং, তারা মানুষের মন্তব্যকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ফোকাস ঠিক রেখে পরিশ্রম করে গেছেন। দিনশেষে কিন্তু ওই বাজে মন্তব্যকারীরা সাকসেসফুল হতে পারেননি, বরং ওই পরিশ্রমী ফ্রিল্যান্সাররাই সাকসেসফুল হতে পেরেছেন। 

৩। যখন অন্যেরা কী ভাববে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করবে, তখন ঠান্ডা মাথায় ভাবুন নিজের জীবনে এই অন্যদের মতামতের ভ্যালু ঠিক কতটুকু। যখন এভাবে ভাববেন, তখন দেখবেন ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন যারা আপনার স্বপ্ন নিয়ে মজা করে অথবা বিরূপ মন্তব্য করে, তারা কখনোই ওয়েল উইশার হতে পারেনা। সবসময় মনে রাখবেন, যারা ওয়েল উইশার কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী, তারা সবসময় আপনার খুশিতেই খুশি থাকবে। তারা কখনোই এমন কিছু বলবেনা যেটা আপনাকে নিজের ফোকাস থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। তাই এমন ধরণের মানুষের মতামতকে সাবধানতার সাথে এড়িয়ে চলুন। 

৪। পরিবার আমাদের সবচেয়ে বড় সাপোর্টের জায়গা হলেও অনেকসময় দেখা যায় নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে কিংবা কোনো একটা কাজ করতে চাইলে তখন পরিবারের সাপোর্ট পাওয়া পসিবল হয়না। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সাররা এ বিষয়টা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই ফেইস করেন। দেখা যায় তাদের পরিবারের সদস্যরা ফ্রিল্যান্সিং করে সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হওয়ার চাইতে জব করা কিংবা বিজনেস করা প্রেফার করেন। অনেক সময় তারা বিভিন্ন বাজে মন্তব্যও করে থাকেন। এমন অবস্থায় ভেঙে পড়ে কাজ করা বন্ধ করে না দিয়ে ধীরে ধীরে পরিবারকে বুঝিয়ে বলুন। পরিবারের সদস্যদের চেয়ে বড় ওয়েল উইশার আর কেউ নয়। তাই নিজে যদি ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমেই হ্যাপিনেস খুঁজে পেতে চান, তাহলে সেটা পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে বলুন। যদি তাও তারা না বোঝেন, তাহলে মন খারাপ হলেও নিজের মতো কাজ করতে থাকুন।দেখবেন সময় হলে পরিবারের সদস্যরা ঠিকই বুঝতে পারবে। তাই তাদের বাজে মন্তব্যে কষ্ট না পেয়ে তাদেরকে বোঝার মতো সময় দিন। 

৫। নিজের ওপরে ভরসা রাখুন। এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। কেননা যখন নিজের ওপর ভরসা রাখবেন, তখন কে কি বলবে সেটা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হবেনা। কারণ তখন মাথায় সেট করা কিছু গোল থাকবে আর সেসব গোল অ্যাচিভ করার জন্য কী কী করতে হবে সেগুলো নিয়েও নিজে ক্লিয়ার থাকবেন। অর্থাৎ নিজের ওপর ভরসা রাখলে যেটাই করতে যাননা কেন, একটা অন্যরকম কনফিডেন্ট পাবেন৷ তখন আর কারো কোনো মন্তব্যই সাফল্যের পথে বাধা হয়ে আসবেনা৷ নিজের ওপর ভরসা বাড়াতে স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে জোর দিন। কিভাবে নিজেকে আরেকটু স্কিলড হিসাবে গড়ে তুলতে পারবেন সেদিকে নজর দিন৷ এতে করে কনফিডেন্স বাড়বে এবং তখন কারো কথাতে বিন্দুমাত্র ডিমোটিভেটেড ফিল করবেননা। 

এটুকুই ছিলো আজকের আলোচনা। সবসময় মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা কাজের জন্যই সমালোচনা এবং বিদ্রুপ করা হয়। এবং যারা বিদ্রুপ করে তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে অন্যদেরকে ডিমোটিভেট করা। তাই কখনোই অন্যেরা কী বলবে বা অন্যেরা কী ভাববে সেটা নিয়ে ভাবতে বসে নিজের সময় নষ্ট করবেননা। বরং যেটাই করতে চান, সেটার পেছনেই ফোকাসড থাকুন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: