ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বিল্ড আপ করার এ টু জেড গাইডলাইন (পর্ব ১)

প্রতিটি ফ্রিল্যান্সারের স্বপ্ন থাকে নিজেকে সাকসেসের আলটিমেট লেভেলে নিয়ে যাওয়ার। তবে এই স্বপ্ন পূরণের পথ কিন্তু মোটেও সহজ নয়। বেশ কয়েকটি ধাপ পার করার পর তবেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাকসেসফুল হওয়া যায়। যারা ধৈর্য্য ও কঠোর পরিশ্রমের সাথে এই ধাপগুলো পার করতে পারেন, তারাই দিনশেষে জয়ী হন। 

অনেকেই মনে করেন, শুরুতে কিছুদিন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে তারপর মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিতে শুরু করলেই বুঝি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সাকসেসফুল হয়ে যায়। এটি কিন্তু একটি ভুল ধারণা। কারণ এভাবে ফ্রিল্যান্সিং করলে ভালো অ্যামাউন্টের রেভিনিউ জেনারেট হয় ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি স্ট্যাবিলিটি আসেনা, আর তাই সেটিকে সাকসেসও বলা যায়না। 

তাহলে কিভাবে ক্যারিয়ার সাকসেসফুল করা যেতে পারে? বলছি! ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বিল্ড আপ করার মাধ্যমে! এজেন্সি একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্যারিয়ারকে হান্ড্রেড পারসেন্ট স্ট্যাবিলিটি ও সাকসেস এনে দেয়। এই সিরিজে থাকছে ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি সম্পর্কে বিস্তারিত গাইডলাইন, যা অবশ্যই সবার উপকারে আসবে।

ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি কাকে বলে?

চলুন লেখার শুরুতেই ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি সম্পর্কে কিছু বেসিক ইনফরমেশন জেনে নেয়া যাক। ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি হলো এমন একটি বিজনেস যেটি কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার মিলে রান করে থাকেন৷ সাধারণত একটি ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সিতে বিভিন্ন ফিল্ডে এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সারদের সমন্বয়ে তৈরি একটি টিম থাকে। পরবর্তীতে এই টিমের মাধ্যমে এজেন্সির ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ক্লায়েন্টদের ডিমান্ড বুঝে সার্ভিস দেয়া, কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদি কাজগুলো করা হয়। অর্থাৎ প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির ভিত্তি হলো সেটির টিম।

একটি ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি দু’রকম প্যাটার্নের হতে পারে। প্রথম প্যাটার্নে একজন ফ্রিল্যান্সার শুরুতে নিজে একটি এজেন্সি ওপেন করেন ও পরবর্তীতে বিভিন্ন ফিল্ডে এক্সপার্টাইজ রয়েছে এমন ফ্রিল্যান্সারদের পার্ট টাইম, ফুল টাইম অথবা প্রজেক্ট বেসিসে হায়ার করে থাকেন। 

এক্ষেত্রে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এজেন্সি পরিচালনা করা হয় ঠিকই, কিন্তু ওউনার থাকেন একজনই, যিনি এজেন্সির ওভারঅল ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং বা ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কন্ট্রোল করে থাকেন। আর যেসব ফ্রিল্যান্সারকে হায়ার করা হয়, তারা বেশিরভাগই ক্লায়েন্টদের ডিমান্ড অনুযায়ী সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকেন, আর অল্প কয়েকজন এজেন্সি ম্যানেজমেন্ট বা মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে থাকেন। 

অন্যদিকে দ্বিতীয় প্যাটার্নে কয়েকজন এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার টিম বিল্ড আপ করে নিজেরাই সেটি পরিচালনা করেন। অর্থাৎ এ ধরনের এজেন্সিতে সিংগেল কোনো ওউনার থাকেননা, বরং পুরোটাই পরিচালিত হয় পার্টনারশিপের মাধ্যমে। সাধারণত ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের কমিউনিটির মধ্য থেকে যাদের সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো এবং ক্যারিয়ার গোল ম্যাচ করে তাদের সাথে টিম বিল্ড আপ করেন এবং এজেন্সি রান করা শুরু করেন। এ ধরনের এজেন্সিগুলো এমনভাবে বিল্ড আপ করা হয়, যাতে করে সবধরণের কাজের জন্য এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সাররা থাকেন। 

এবার আসি সার্ভিস নিয়ে৷ কিছু এজেন্সিতে ক্লায়েন্টদের একটি নিশের সার্ভিসই দেয়া হয়। যেমন: আমার এজেন্সি গ্রাফিক সোলোতে ক্লায়েন্টদের ডিজাইন বেজড সার্ভিস দেয়া হয়। আবার কিছু এজেন্সি ক্লায়েন্টদের মাল্টি-নিশ সার্ভিসও অফার করে। ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বিল্ড আপ করার এ টু জেড গাইডলাইন (পর্ব ১)

কেন ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বিল্ডআপ করা উচিৎ? যখন কেউ ফ্রিল্যান্সিং করেন, তখন তিনি ক্লায়েন্ট হান্টিং থেকে শুরু করে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দেয়া, নিজের সার্ভিসের মার্কেটিং ইত্যাদি সব কাজ নিজেই করে থাকেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এটি দারুণ একটি অপশন হলেও লং-টার্মের জন্য কিন্তু এটি পুরোপুরি স্টেবল অপশন নয়। কারণ সত্যি বলতে সারাজীবন শুধু সলো ফ্রিল্যান্সিংয়েই ফোকাস করলে আপনি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে খুব বেশি রেভিনিউ জেনারেট করতে পারবেননা।

একইসাথে সলো ফ্রিল্যান্সিংয়ের আরো বড় একটি সমস্যা হলো, এভাবে ফ্রিল্যান্সিং করলে একসাথে অনেকজন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া যায়না, কেননা ক্লায়েন্টের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে সার্ভিসের কোয়ালিটি ডাউন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, যা কোনো ফ্রিল্যান্সারই চাননা, তাই তারা ক্লায়েন্টের সংখ্যাও লিমিটেড রাখেন। আবার ফ্রিল্যান্সিং করলে অনেকসময় বড় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না, কারণ বেশিরভাগ রিনাউনড কোম্পানি অন টাইম ও হাই কোয়ালিটি সার্ভিস পেতে ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সিই বেশি প্রেফার করেন। 

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে প্রফিটেবল হলেও কমপ্লিট স্ট্যাবিলিটি নিশ্চিত করতে চাইলে ক্যারিয়ারকে আরেকটু অ্যাডভান্সড লেভেলে নিতেই হবে, আর এই কাজটিই করা হয়ে থাকে এজেন্সি তৈরি করার মাধ্যমে। 

কিভাবে?

যেহেতু এজেন্সিতে কয়েকজন এক্সপার্ট ও এক্সপেরিয়েন্সড ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন, তাই প্রোপার টিমওয়ার্কের মাধ্যমে একসাথে অনেকজন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া সম্ভব হয়। তাই রেভিনিউয়ের অ্যামাউন্ট বাড়ে।

সেই সাথে এজেন্সির মাধ্যমে টাইমলি ক্লায়েন্টদের প্রজেক্ট ডেলিভারি করাও সম্ভব হয় বলে রিপিট ক্লায়েন্টদের সংখ্যাও বাড়ে। আর আপনারা নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝে গেছেন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সাকসেসফুল করতে এই রিপিট ক্লায়েন্টদের ভূমিকা কত ভ্যালুয়েবল! তারা আপনার এজেন্সির প্রতি লয়ালিটি তো দেখাবেনই, সেই সাথে তাদের রিকোমেন্ডেশনে আরো অনেকেই আপনার থেকে সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড হবেন। 

সবচেয়ে বড় কথা, যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সিতে অনেক বছর ধরে কাজ করছেন এমন ফ্রিল্যান্সাররা থাকেন এবং টিমওয়ার্কের মাধ্যমে সব কাজ করা হয়, তাই এটি বিল্ডআপ করলে বড় বড় কোম্পানিগুলোকে ইজিলি অ্যাট্রাক্ট করা পসিবল হয়। আর যেহেতু এ ধরণের কোম্পানির প্রজেক্টগুলো বড় পরিসরের হয়, ফলে রেভিনিউ যেমন বাড়ে, তেমনি নিজের পোর্টফোলিও স্ট্রং হয়, এর ফলস্বরূপ আরো কোম্পানির সাথে লং-টার্ম কাজের অপোরচুনিটি তৈরি হয়।

ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি কাদের জন্য পারফেক্ট?

একটি বিষয় আপনাদের ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত, সেটি হলো যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নতুন, তাদের জন্য এজেন্সি একদমই পারফেক্ট নয়।

কেন জানেন?আমি শুরুতেই বলেছি ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি রান করার জন্য এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সারদের প্রয়োজন হয়। এজেন্সিতে ওয়ার্কলোড বেশি থাকে, টিম মেম্বারদের সাথে কোলাবরেট করতে হয়, এবং সেই সাথে ক্লায়েন্টদের টপ নচ সার্ভিস প্রোভাইড করতে হয়। এর পাশাপাশি এজেন্সির গ্রোথ বাড়াতে মার্কেটিংয়ের জন্যও এক্সট্রা এফোর্ট দিতে হয়। এই সব কাজ পারফেক্টলি হ্যান্ডেল করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে লম্বা সময় কাজ করার এক্সপেরিয়েন্স ও স্কিল প্রয়োজন।

যারা নতুন, তারা এজেন্সি ম্যানেজমেন্ট স্কিল তো দূরের কথা, তারা ক্লায়েন্টদের ডিমান্ড বুঝে তাদের প্রজেক্ট ডেলিভার করতেই হিমশিম খেয়ে যান। তাছাড়া এজেন্সি সাকসেসফুল করার জন্য যে স্পেশাল স্ট্র‍্যাটেজি বা ট্যাকটিকগুলো জানা থাকা দরকার, সেগুলোও তাদের জানা থাকে না। ফলে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা এজেন্সি শুরু করলে তা কখনোই সাকসেসফুল হয়না।

তাহলে কাদের জন্য এজেন্সি পারফেক্ট? 

যদি আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের বয়স অন্তত ৩-৪ বছর হয়, তাহলে আপনি এজেন্সি বিল্ড আপ করার জন্য মাইন্ডসেট করতে পারেন। কারণ তখন সলিড ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স যেমন থাকে, তেমনি ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপ, নেগোসিয়েশন কিংবা মার্কেটিং নলেজও স্ট্রং থাকে। ফলে ভুল করার পসিবিলিটি অনেক কম থাকে ও জার্নিও তুলনামূলকভাবে স্মুদ হয়। 

এর পাশাপাশি যদি এ দু’টো বিষয় আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে ফ্রিল্যান্সিংকে এজেন্সিতে কনভার্ট করার সময় এসে গেছে। 

  • যদি লক্ষ্য করেন আপনার ওয়ার্কলোড অনেক বেড়ে গেছে এবং আপনি একই সাথে অনেকজন ক্লায়েন্টকে হাই কোয়ালিটির সার্ভিস দিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে যদি এজেন্সি ডেভেলপ করেন, তাহলে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে যে কাজের অর্ডার পাবেন, তা আপনার টিম মেম্বারদের মধ্যে ডিভাইড করে দিতে পারবেন এবং এতে করে অনেকজন ক্লায়েন্টের সাথে রেগুলারলি কাজ করতেও কোন সমস্যা হবে না। 
  • যদি নিজের বর্তমান ক্লায়েন্টদের আরো বেশি সার্ভিস অফার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন অথবা ক্লায়েন্টরা আপনার কাছ থেকে আপনার নিশের বাইরের বিভিন্ন সার্ভিস চেয়ে থাকেন। যেমন ধরুন, একজন ক্লায়েন্ট আপনার কাছ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ব্যানারের পাশাপাশি অ্যাড কপিও ডিমান্ড করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যেহেতু আপনি একজন ডিজাইনার, তাই আপনার পক্ষে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাড কপি ডেলিভার করা সম্ভব নয়। আবার আপনি ক্লায়েন্টকে অ্যাড কপি ডেলিভার করতে চান, যাতে করে তার সাথে লম্বা সময় কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি শুরু করেন এবং একজন রাইটার হায়ার করেন, তাহলে কিন্তু একটি প্লেস থেকেই আপনার ক্লায়েন্ট দু’রকমের সার্ভিস নিতে পারবেন। এভাবেই ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বিল্ডআপ করে ক্লায়েন্টদের বিভিন্ন সার্ভিস করে নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করা যায়। 

এটুকুই ছিল আজকের আলোচনা। পরবর্তী লেখায় আপনাদের জানাবো কিভাবে আপনারা নিজেদের ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বিল্ড আপ করতে পারেন। তাই আমাদের সাথেই থাকুন। 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: