ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি হলো একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্যারিয়ারকে সাকসেসের টপ লেভেলে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম স্টেপ। মূলত এটার মাধ্যমেই একজন ফ্রিল্যান্সার লং-টার্ম স্ট্যাবিলিটি পেতে সক্ষন হন৷ তবে হ্যাঁ, এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা নিজেদের এজেন্সি স্টার্ট করেছেন ঠিকই, কিন্তু দিনশেষে সাকসেসফুল হতে পারেননি।
কেন জানেন? তারা নিজেরা স্কিলড ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাদের এজেন্সির টিমটা পারফেক্ট ছিলোনা। আসলে প্রতিটা ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির সাফল্যের পেছনের মূল প্রভাবকটাই হচ্ছে সেই এজেন্সির এক্সপার্ট ও এক্সপেরিয়েন্সড টিম মেম্বাররা। একটা এক্সপার্ট টিম না থাকলে কিন্তু কোনো এজেন্সির পক্ষেই এই কম্পিটিশনের যুগে টিকে থাকা পসিবল নয়৷ আজকের লেখায় আপনাদের জানাবো ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির টিম বিল্ডিং কিভাবে করা যেতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি কি?
চলুন লেখার শুরুতেই জেনে আসা যাক ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি কাকে বলে সে সম্পর্কে। সহজ ভাষায় ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি হচ্ছে এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেখানে একজন এজেন্সি ওউনারের আন্ডারে কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার টিম হিসেবে ক্লায়েন্টদেরকে বিভিন্ন নিশ রিলেটেড সার্ভিস প্রোভাইড করেন। এর পাশাপাশি এমন অনেক এজেন্সিও রয়েছে যেখানে কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার নিজেরা পার্টনারশিপের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস প্রোভাইড করেন।
সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির টিম মেম্বাররা একেকজন একেক ধরনের কাজ করে থাকেন। যেমন: কয়েকজন সরাসরি ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস প্রোভাইড করেন, কয়েকজন এজেন্সির মার্কেটিংয়ের কাজটা করেন, আবার কয়েকজন কাস্টমার সার্ভিস রিলেটেড বিভিন্ন কাজ, যেমন: ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেয়া, তাদের কোশ্চেনের অ্যান্সার দেয়া, তাদের কাছ টেস্টিমনিয়াল কালেক্ট করা ইত্যাদি কাজ করেন। অর্থাৎ এই ধরণের এজেন্সিতে টিম ওয়ার্ক খুবই ভাইটাল রোল প্লে করে।
ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির মূল বেনিফিট হলো সার্ভিস প্রোভাইড করার জন্য কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার অ্যাভেইলেবল থাকায় একসাথে অনেকজন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস প্রোভাইড করা যায়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে রেভিনিউয়ের পরিমাণটাও বেশি হয়। সবচেয়ে বড় কথা যদি প্রোপার মার্কেটিং ও হাই কোয়ালিটির সার্ভিস প্রোভাইড করার মাধ্যমে নিজের এজেন্সির রেপুটেশন একবার বাড়াতে পারেন, তাহলে ক্লায়েন্ট পাওয়া নিয়ে আর ভাবতে হয় না।
আমি জানি এখন আপনারা জানতে চাইবেন ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি কখন শুরু করা যেতে পারে। বলছি!
যখন একজন ফ্রিল্যান্সার অনেক বছর ধরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে যুক্ত থাকেন, তখন তার এই ফিল্ড নিয়ে এনাফ এক্সপার্টাইজ এবং এক্সপেরিয়েন্স থাকে। সেই সাথে কিভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করা যায় কিংবা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপ করা যায় সে ব্যাপারেও তার নলেজ থাকে। এই সময়টাই ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি শুরু করার পারফেক্ট টাইম। অর্থাৎ এই এজেন্সি কিন্তু বিগিনারদের জন্য মোটেও অ্যাপ্রোপ্রিয়েট নয়।
ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি সাকসেসফুল করতে টিম মেম্বাররা কিভাবে ভূমিকা রাখেন?
একজন ফ্রিল্যান্সার যখন নিজের এজেন্সি স্টার্ট করেন, তখন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো এমন টিম মেম্বারদের হায়ার করা, যাদের ওই এজেন্সির নিশ রিলেটেড সার্ভিসগুলো সম্পর্কে এনাফ এক্সপেরিয়েন্স ও এক্সপার্টাইজ দু’টোই রয়েছে। এ দুটো ক্রাইটেরিয়া মিট আপ করা ফ্রিল্যান্সারদের নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির এক্সপার্ট টিম গড়ে ওঠে।
যদি আপনার এজেন্সির টিম মেম্বাররা যথেষ্ট এক্সপার্ট না হন, তাহলে তারা ক্লায়েন্ট ঠিক কি চাইছেন সেটা ধরতে পারবেননা। এতে করে সার্ভিসের কোয়ালিটি ড্রপ করবে, যা কোনো ক্লায়েন্টই পছন্দ করেন না। শুধু তাই নয়, এক্সপার্ট টিম না থাকলে ডেডলাইন মেইনটেইন করে ক্লায়েন্টকে সার্ভিস ডেলিভারি দেয়াও পসিবল হয়না। এতে করে কিন্তু দিনশেষে আপনার এজেন্সির রেপুটেশনই খারাপ হবে।
পক্ষান্তরে এক্সপার্ট টিম থাকলে ক্লায়েন্টের ডিমান্ড যত ক্রিটিক্যালই হোক না কেন, তাকে অন টাইম সার্ভিস ডেলিভারি করা পসিবল হয়। সেই সাথে এক্সপার্ট টিম থাকলে কাস্টমার সার্ভিসের কোয়ালিটিও ভালো হয়। এতে ক্লায়েন্টের স্যাটিসফ্যাকশন বাড়ে, যা তাকে একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্টে কনভার্ট করতে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়, তখন ওই ক্লায়েন্টের রেকোমেন্ডেশন শুনে আরো অনেকেরই ওই এজেন্সি থেকে সার্ভিস নিতে আসার পসিবিলিটি তৈরি হয়। উপরন্তু এক্সপার্ট টিম থাকলে ওই ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিও কম্পিটিটরদের চাইতে অনেক বেটার ওয়েতে এক্সিকিউট করা যায়, এতে করেও ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়ে। এভাবেই একটা এক্সপার্ট টিম যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সিকে সাকসেসফুল করে তুলতে সাহায্য করে।
কিভাবে নিজের এজেন্সির জন্য টিম বিল্ড আপ করবেন?
আমরা এখন চলে এসেছি আমাদের আজকের ডিসকাশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন আমি আপনাদের জানাবো কিভাবে আপনারা নিজেদের ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির জন্য এক্সপার্ট টিম বিল্ড আপ করতে পারেন সে সম্পর্কে।
টিম বিল্ডিংয়ের আগে নিজের ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির গোল এবং টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া রাখুন। সব সময় মনে রাখবেন প্রতিটা ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সিই স্পেসিফিক গোল ও টার্গেট মার্কেটের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। যদি এগুলো নিয়ে ক্লিয়ার আন্ডারস্ট্যান্ডিং না থাকে, তাহলে আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না আপনার পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট কারা হতে পারেন। একইসাথে এটাও বুঝতে পারবেননা যে টিম মেম্বার হিসেবে আপনার কেমন স্কিল থাকা ফ্রিল্যান্সারদের প্রয়োজন। এর ফলস্বরূপ তখন র্যান্ডমলি টিম মেম্বার করতে হবে, যা এজেন্সির গ্রোথের জন্য কখনোই ভালো নয়। তাই একজন এজেন্সি ওউনার হিসেবে নিজের গোল ও টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে অবশ্যই আইডিয়া রাখুন।
যখন নিজের এজেন্সির ফোকাস ও টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে বুঝে যাবেন, তারপরের কাজটাই হলো ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করা। চাইলে ফ্রিল্যান্সারদেরকে প্রজেক্ট বেসিসে কিংবা লং-টার্ম কাজের জন্য কন্ট্রাক্ট করার মাধ্যমে হায়ার করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো ফ্রিল্যান্সারদের কোথা থেকে হায়ার করবেন। খুব সহজ! শুরুতেই নিজের পার্সোনাল নেটওয়ার্কে খোঁজ করুন আপনার রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করতে পারেন এমন ফ্রিল্যান্সার অ্যাভেইলেবল করেছেন কিনা। যদি থেকে থাকে, তাহলে তাদেরকে অফার করতে পারেন।
যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটি কিংবা ফেসবুক গ্রুপে খোঁজ করতে পারেন। যদি এসব প্ল্যাটফর্ম থেকেও যোগ্য কাউকে না পান, সেক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাড ক্যাম্পেইন রান করাতে পারেন। এবার ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করার একটা গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেই। সেটা হলো হায়ারিং পোস্ট করার সময় ফ্রিল্যান্সারদের তাদের সিভি ও পোর্টফলিও দুটোই সেন্ড করতে বলুন। এতে করে তাদের ক্যাপাবিলিটি ও এক্সপেরিয়েন্স সম্পর্কে খুব সহজেই আইডিয়া পেতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন নিজের এজেন্সির জন্য কারা সবচাইতে বেশি সুইটেবল।
ফ্রিল্যান্সারদের সিভি ও পোর্টফলিও দেখার পর তাদের একটা শর্টলিস্ট রেডি করে ফেলুন এবং এই শর্ট লিস্টেড ফ্রিল্যান্সারদের সাথে ভিডিও বা ফোন কলে মিটিং করুন। ফাইনালি হায়ার করার আগে এভাবে মিটিং করার ফলে তাদের কমিউনিকেশন স্কিল সম্পর্কেও আইডিয়া পেয়ে যাবেন, যা এজেন্সি রান করানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেহেতু এই এজেন্সি টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়, তাই টিম মেম্বার হিসেবে প্রত্যেকের কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকা খুবই জরুরি।
মিটিং করার পর যে ফ্রিল্যান্সারদেরকে সবচাইতে পারফেক্ট মনে হবে, তাদেরকেই টিম মেম্বার হিসেবে হায়ার করুন। এক্ষেত্রে প্রোপার ডকুমেন্টের মাধ্যমে তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে নিতে পারেন৷ অনেক এজেন্সি ওউনার আবার নতুন ফ্রিল্যান্সারদের এজেন্সিতে কাজ করার সুযোগ দিতে চান। সেক্ষেত্রে কন্ট্রাক্ট করার সময় ভালোভাবে কাজ করতে পারলে তবেই লং-টার্ম কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে সে বিষয়টা মেনশন করে দিতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সারদেরকে হায়ার করার পর তারা কে কোন কাজ করবেন সেটা প্রোপারলি ডিভাইড করে দিন। যেমন: কারা মার্কেটিং করবেন, কারা এজেন্সির সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজ করবেন, কারা ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দেবেন ইত্যাদি রেসপনসিবিলিটি ভালোমতো ডিফাইন করে দিন। এতে করে কাজের সময় ওভারল্যাপিং হবেনা। সেই সাথে এজেন্সি ভালোমতো অপারেট করাও পসিবল হবে।
এখানেই কিন্তু টিম বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ নয়। বরং টিম বিল্ডিং এখান থেকে শুরু। একজন ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির ওউনার হিসেবে টিম মেম্বারদের সাথে সবসময় কমিউনিকেট করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কাছ থেকে কাজের আপডেট নিন। তাদের কোনো কনফিউশন থাকলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব ক্লিয়ার করার চেষ্টা করুন।
সেই সাথে তারা টাইম মেইনটেইন করে কাজ করছেন কিনা, তাদের কাজের কোয়ালিটি আপ টু দ্যা মার্ক হচ্ছে কিনা এবং তারা নিজেদের দায়িত্বের প্রতি সিনসিয়ার কিনা ইত্যাদি বিষয়ও অবশ্যই মনিটরিংয়ে রাখুন।
এছাড়াও টিম মেম্বাররা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন কিনা, তারা এই এজেন্সিতে কাজ করে স্যাটিসফাইড কিনা ইত্যাদি বিষয়েও নিয়মিত ভাবে তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন। এর পাশাপাশি এজেন্সিতে কোন প্রবলেম রয়েছে কিনা ও এজেন্সির ডেভেলপমেন্টের জন্য ফিউচারে কী কী করা যেতে পারে এসব বিষয়েও তাদের থেকে পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
মোট কথা টিম মেম্বারদের সাথে কোলাবরেট করার চেষ্টা করুন। সব সময় তাদের সাথে ফ্রেন্ডলি রিলেশনশিপ মেইনটেইন করুন। যখন তারা ভাল কাজ করবে, তাদেরকে সেটা জন্য রিওয়ার্ড দিন। তাদের যেকোনো প্রবলেমে পাশে থাকার চেষ্টা করুন। এভাবে করে যখন নিজের ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সির জন্য টিম বিল্ড আপ করবেন, তখন সার্ভিসের কোয়ালিটি ভালো হবে এবং সবার প্রোডাক্টিভিটি অনেক গুণে বাড়ানো সম্ভব হবে। যা ইভেনচুয়ালি এজেন্সির গ্রোথ বাড়াতেও সহায়তা করবে।