চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন তো ,আপনি স্বাধীনভাবে নিজের পছন্দমতো জায়গায় বসে কাজ করছেন ; যেখানে সুপারভাইজারকে প্রতিটা কাজে কৈফিয়ত দেয়ার টেনশান নেই কিংবা পান থেকে চুন খসলে বসের বকুনি খাওয়ারও ভয় নেই। একইসাথে যেখানে নিজের প্যাশন এবং স্কিলের সাহায্যে কাজ করে প্রতিমাসে একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট ইনকাম করছেন। ভাবতে অবাক লাগছে? ভাবছেন এটা কিভাবে পসিবল? আসলে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে খুব ইজিলিই স্বাধীনভাবে কাজ করার পাশাপাশি প্রতি মাসে ভালো একটা অ্যামাউন্টের টাকা ইনকাম করা পসিবল। কিন্তু এক্ষেত্রে মেইন প্রবলেমটা আমি রিসেন্টলি খেয়াল করেছি সেটা হচ্ছে,আশেপাশে তাকালে দেখবেন অনেকেই শুধুমাত্র কিভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন সেক্টরে নিজের স্কিল ডেভেলপ করে অল্প সময়ে প্রচুর টাকা ইনকাম করা যায় সেটা শেখাচ্ছেন। কিন্তু বিগিনাররা ফ্রিল্যান্সিং কোথা থেকে কিভাবে শুরু করতে পারে সেটা সম্পর্কে তেমন কোন গাইডলাইন আমার চোখে পড়েনি। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমি স্পেসিফিকালি বিগিনারদের জন্য ধাপে ধাপে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গাইডলাইন শেয়ার করবো। আশা করি এই লেখাটা পড়লে সবাই কিছু না কিছু বেনিফিট পাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গাইডলাইন দেয়ার আগে সবাইকে একটা কোশ্চেন করতে চাই। বলতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য সবার আগে কি প্রয়োজন? এখন অনেকে হয়তো বলবেন একটা ভালো ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ প্রয়োজন, আবার কেউ হয়তো বলবেন ভালো কোনো ইনস্টিটিউট থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোর্স করা প্রয়োজন। কিন্তু আমি কী বলবো জানেন?
আমার মতে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো কেন ফ্রিল্যান্সিং করতে চান এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করে নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেটা চিন্তাভাবনার মাধ্যমে খুঁজে বের করা।
অনেকেই রয়েছেন যারা আশেপাশের মানুষকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাকসেসফুল হতে দেখে আগেপিছে কিছু না ভেবেই ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করেন। তখন নিজের মাইন্ডসেট ক্লিয়ার না থাকার কারণে বেশিরভাগ কেইসেই তারা বেশিদূর আগাতে পারেননা। একারণেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে নিজের মাইন্ডসেট থাকাটা খুবই জরুরি। তাই সময় নিয়ে আগে ভাবুন যে ঠিক কোন কারণে ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে অ্যাট্রাকটেড ফিল করছেন। পাশাপাশি এটাও ফিগার আউট করার ট্রাই করুন নিজের ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি ঠিক কতটুকু প্যাশন রয়েছে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা সেক্টর যেটাতে প্যাশনেট মানুষরাই দিনশেষে সাকসেসফুল হয়। আর এটা একটা চ্যালেঞ্জিং সেক্টরও বটে। তাই যদি প্যাশনেট না হন, তাহলে আল্টিমেটলি কিন্তু দিনশেষে রেজাল্ট জিরো ই থাকবে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য মাইন্ডসেট হয়ে গেলে আমি বলবো এরপর বোঝার ট্রাই করুন যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কী কী গোল অ্যাচিভ করতে চান।কারণ যদি এ গোলগুলো ডিফাইন করতে পারেন তাহলে দেখবেন পরবর্তীতে কাজ করার জন্য এমনিতেই মোটিভেটেড ফিল করবেন।
একজন এক্সপার্ট হিসেবে আমি সবাইকে কনফিডেন্টলি এটুকু বলতে পারি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে চাইলে বিগিনার হিসেবে প্রত্যেকের রেস্পনসিবিলিটি হলো তিনি কেন অন্য সব সেক্টর বাদ দিয়ে এই সেক্টরেই আসতে চান সেটা সম্পর্কে নিজে ক্লিয়ার থাকা এবং একইসাথে তিনি এই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর থেকে ঠিক কী কী গোল অ্যাচিভ করতে চান সেটা ডিসাইড করে ফেলা। এখন আমি সবাইকে জানাবো ধাপে ধাপে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গাইডলাইন সম্পর্কে যেগুলো ফলো করলে একজন সাকসেসফুল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।
যেকোনো কাজ গুছিয়ে করা হলে সে কাজটা পারফেক্টলি করা পসিবল হয়,তাইনা? ছোট -বড় যে কাজই হোক না কেন, যদি একদম শুরুতে কাজটা কিভাবে কমপ্লিট করলে সবচেয়ে বেশি কনভেনিয়েন্ট হবে সেই ব্যাপারে নিজের যত আইডিয়া আছে সেগুলো সাজিয়ে নেয়া যায়, তাহলে দেখবেন কাজটা অনেক স্মুদলি করতে পারবেন। ঠিক একারণেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গাইডলাইন হিসেবে আমি প্রথমেই বলবো এ সেক্টররিলেটেড নিজের যত আইডিয়া আছে সেগুলোকে শুরুতেই সাজিয়ে ফেলুন৷
কিভাবে সাজাবেন?
ধরুন, একজন মানুষ ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার হতে চাইছেন। তাহলে তার মাথায় আসা আইডিয়াগুলো কিরকম হতে পারে?তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন নিজের গ্রাফিক ডিজাইন স্কিল ডেভেলপ করতে, সেটা হতে পারে গ্রাফিক ডিজাইন শেখার মাধ্যমে অথবা প্র্যাকটিসের মাধ্যমে যেটুকু নলেজ আছে সেটাকে বাড়ানোর মাধ্যমে। তারপর তিনি নিজের পোর্টফোলিও রেডি করবেন। পোর্টফোলিও রেডি হওয়ার পর তিনি কিভাবে ক্লায়েন্ট খুঁজবেন সেটা ডিসাইড করবেন, কেমন ধরণের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করবেন সেটা ঠিক করবেন, হয়তো এরপর সেল্ফ ব্র্যান্ডিং করবেন। অর্থাৎ সেই মানুষটা বিগিনার থেকে একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেগুলো করবেন।
ঠিক এভাবেই আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের যেই সেক্টরে কাজ করতে ইন্টারেস্টেড, সেই সেক্টরে কিভাবে কাজ করবেন সেটা রিলেটেড নিজের মাথায় যতটুকু আইডিয়া আছে সেগুলোকে সাজিয়ে ফেলুন ৷ এক্ষেত্রে একটা আইডিয়া মাথায় আসলে যে সেটাকে কাজে লাগাতেই হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই৷ বরং শুরুতে নিজের আইডিয়াগুলো সাজিয়ে ফেললে পরবর্তীতে যখন একচুয়াল প্ল্যানিং করবেন তখন বেনিফিট পাবেন।
নিজের পছন্দের ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কিভাবে সামনে আগাবেন সেটার আইডিয়াগুলো সাজিয়ে ফেলার পরের স্টেপ হচ্ছে একটা প্রোপার প্ল্যানিং করা। কারণ আইডিয়া তো অনেকরকমই হয়, কিন্তু সব আইডিয়া কিন্তু কাজে লাগানো যায়না। একারণে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রোপারলি কাজ শুরু করার জন্য প্রোপার প্ল্যানিংয়ের ইম্পরট্যান্স অনেক বেশি। কারণ প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে কোন কোন আইডিয়া ইমপ্লিমেন্ট করা হবে সেটা ডিসাইড করা হয়। যার ফলে একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার তার সেক্টরে কমপ্লিটলি ফোকাসড থাকতে পারেন। যখন প্ল্যানিং করবেন, তখন খুঁটিনাটি প্রতিটা বিষয় সেই প্ল্যানে ইনক্লুড করবেন। মনে রাখবেন, এই প্ল্যান যত ডিটেইলড হবে ততই ভালো।
নিজের ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্ল্যানিংয়ে যেগুলো ইনক্লুড করতে পারেন –
- দিনে কাজের পেছনে কতটুকু টাইম দেবেন।
- নিজের পোর্টফোলিও কিভাবে বানাবেন।
- ক্লায়েন্টের সামনে নিজের পজিটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করার জন্য কিভাবে ওয়েবসাইট বানাবেন।
- যে সার্ভিসগুলো অফার করবেন সেগুলোর প্রাইসিং লো হবে নাকি হাই হবে।
- ক্লায়েন্টদের কাছে রিচআউট করার জন্য কেমন ধরণের স্ট্র্যাটেজি ইউজ করবেন।
- সোশাল মিডিয়াতে কিভাবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করবেন।
- ক্লায়েন্টদের জন্য কোন স্পেশাল অফার থাকবে কিনা৷
- যদি কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন রান করেন সেটা কিভাবে রান করবেন।
- কিভাবে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেবেন।
- কিভাবে সবচেয়ে ইফেকটিভ ওয়েতে ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করবেন।
মোটকথা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার এই প্ল্যান এমন হবে যাতে করে এই স্পেসিফিক প্ল্যানটা রেডি করার পর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য নিজে কমপ্লিটলি প্রিপেয়ার্ড থাকতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য মাইন্ডসেট হয়ে গেছে, আইডিয়া গ্যাদার করা হয়ে গেছে,এমনকি প্ল্যানিংও রেডি। এরপর কী করবেন?
এরপর যেটা করতে হবে সেটা হলো একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা শুরু করতে হবে। অর্থাৎ ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করে তাদের ডিমান্ড বুঝে তাদেরকে সার্ভিস দিতে হবে। একজন বিগিনারকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গাইডলাইন হিসেবে আমি যেটা সাজেস্ট করবো সেটা হলো শুরুটা খুব ধীরে ধীরে করতে হবে। বেশিরভাগ নতুন ফ্রিল্যান্সারই শুরুর দিকে কাজের কোয়ালিটি বেটার করার দিকে কনসেনট্রেশান না দিয়ে কিভাবে বেশি ইনকাম আসবে সেদিকে বেশি ফোকাস করেন। অনেকসময় তাড়াহুড়াও করেন। ফলে দেখা যায় কখনোই ভালো রেজাল্ট পাওয়া পসিবল হয়না।
এজন্যে আমি বলবো ধীরে ধীরে আগাতে। নিজের প্ল্যান ফলো করে সেই অনুযায়ী কাজ করুন। নিজের মাইন্ডসেট এমন রাখুন যে অল্প সময়ে বেশি ইনকাম নাও আসতে পারে, তাই ইনকামের দিকে ফোকাস না করে নিজের স্কিল কিভাবে ডেভেলপ করা যায় সেদিকে বেশি ফোকাস রাখতে হবে। সবসময় মনে রাখবেন, শেখার কোন শেষ নেই। তাই প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু করে ডেভেলপ করুন। যে সেক্টরে কাজ করবেন সে সেক্টরে এমনভাবে নিজের এক্সপার্টাইজ বাড়ান যাতে করে ক্লায়েন্টরা নিজে থেকেই সার্ভিস নিতে আসে।
শুরুতে অনলাইনের মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্ট খুঁজতে পারেন। এতে করে এক্সপেরিয়েন্স বাড়বে।এরপর যখন নিজের পোর্টফোলিও স্ট্রং হবে তখন নিজের ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করে এবং পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পেতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাকসেসফুল হতে চাইলে ক্লায়েন্টদের সাথে সঠিকভাবে কমিউনিকেট করুন যাতে করে তাদের মধ্য থেকেই রিপিট ক্লায়েন্ট পেতে পারেন। যখন একজন ক্লায়েন্টের কাজ করবেন, তখন তার ডিমান্ড পুরোপুরি বুঝে নিয়ে কাজ করে দিন। এতে করে দেখবেন এই ক্লায়েন্টদের রিকমেন্ডেশনে আরো বেশি ক্লায়েন্ট পাবেন। সর্বোপরি নিজের কাজে রেগুলারলি ইফোর্ট দিন। দেখবেন এভাবে ধীরে ধীরে কাজ করলে খুব তাড়াতাড়ি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাকসেসফুল হতে পারবেন।
এটুকুই ছিলো বিগিনারদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গাইডলাইন। ইচ্ছা আছে এই বিষয়ে ভবিষ্যতে আরো আর্টিকেল লেখার। কারণ আমি পারসোনালি বিলিভ করি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ডিটেইলে গাইডলাইন না পাওয়ার কারণেই অনেকের মধ্যে পটেনশিয়াল থাকার পরেও তারা সাকসেসফুল হতে পারেনা। পরিশেষে এটুকু বলবো, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এক- দুই রাতের মধ্যে সাকসেসফুল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন ভুলে যান। নিজের স্কিল ডেভেলপ করুন এবং ধীরে ধীরে নিজের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করুন। দেখবেন সময় লাগলেও যে সফলতা হাতের মুঠোয় পাবেন সেটার স্বাদ কতটা বেশি!