আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার।

যারা বিভিন্নরকম বিজনেসের সাথে যুক্ত রয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই “আইডিয়াল ক্লায়েন্ট” টার্মটার সাথে অলরেডি  পরিচিত। তবে অনেকেই রয়েছেন যারা এখনো এ টার্মটার সাথে পরিচিত নন। তাদের জন্য বলছি, আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হলো কোন একটা কোম্পানির সেসব লয়াল ক্লায়েন্ট যারা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে একটা স্পেসিফিক বিজনেস কোম্পানি থেকেই সে কোম্পানির প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস বারবার নিয়ে থাকেন৷ যারা বিজনেসে নতুন, তারা “আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের কিভাবে খুঁজে বের করবো ?” এ প্রশ্নটা রেগুলারলি করে থাকেন। আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আইডেন্টিফাই করতে খুব ইফেকটিভলি হেল্প করে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার। তাই আজকের লেখায় আমি আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার সম্পর্কে ডিটেইলে আলোচনা করবো যেখান থেকে সবাই বিশেষ করে বিজনেসে বিগিনাররা উপকৃত হবেন বলে আশা করছি। 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার কী? 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার সম্পর্কে জানার আগে চলুন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সম্পর্কে আরেকটু জেনে নেয়া যাক। শুরুতেই বলেছি, আইডিয়াল ক্লায়েন্টরা কোনো একটা কোম্পানির প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস বারবার নিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, তারা এ প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসগুলো অন্যদের নিতেও রিকমেন্ড করেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন,এই ক্লায়েন্টরা একটা বিজনেসকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে এবং একইসাথে বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার।

সুতরাং বলা যেতে পারে, প্রতিটা বিজনেস সাকসেসফুল করার অন্যতম মেইন কন্ডিশন হচ্ছে বিজনেসে কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সেটা আইডেন্টিফাই করা। সত্যি বলতে এটা আইডেন্টিফাই করতে গিয়ে প্রায় সবাই ই একটা মেজর মিসটেক করে ফেলেন। সেটা হলো তাদের কোম্পানি থেকে একবার প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পারচেজ করা প্রত্যেকটা ক্লায়েন্টকেই তারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হিসাবে টার্গেট করার প্ল্যান সেট করে ফেলেন। এতে করে তারা অনেক বেশি পরিমাণ ক্লায়েন্টকে ফোকাসে রেখে কাজ করেন৷ কিন্তু এটা করার কারণে বিজনেসের মার্কেটিং তো ইফেকটিভলি হয়ইনা, উপরন্তু রিয়েল আইডিয়াল ক্লায়েন্টদেরও আইডেন্টিফাই করা যায়না৷ 

এখন নিশ্চয়ই সবার মনে প্রশ্ন জাগছে যে তাহলে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের খুঁজে পাবেন কিভাবে?

জেনে রাখুন, একটা বিজনেসে কোন ধরণের ক্লায়েন্টরা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সেটা আইডেন্টিফাই করার জন্যে এবং কাদেরকে ফোকাস করে মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি বানালে লাভবান হওয়া যাবে সেটা বোঝার জন্যেই বেসিকালি আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার ব্যবহার করা হয়। 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার হলো এমন একজন ক্লায়েন্টের ডেসক্রিপশন যেটা কোন বিজনেসের একটা স্পেসিফিক ক্যাটাগরির ক্লায়েন্টদের রিপ্রেজেন্ট করে। এই অ্যাভাটারে এমন একজন ক্লায়েন্টের পারসোনাল এবং প্রফেশনাল সবরকমের ইনফরমেশনযুক্ত ডিটেইলড প্রোফাইল ফুটিয়ে তোলা হয়, যেমন ধরণের ক্লায়েন্টের সাথে একজন বিজনেসম্যান সবসময় কাজ করতে চান । 

সুতরাং, যদি সহজ ভাষায় বলতে চাই, আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার হলো যেকোনো বিজনেসের ক্ষেত্রে একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্টের রিপ্রেজেন্টেশন। এজন্যে এ অ্যাভাটার ব্যবহার মাধ্যমে কারা একটা বিজনেসের আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারেন সেটার ব্যাপারে খুব ইজিলি আইডিয়া পাওয়া যায়। জেনে রাখা ভালো, এই অ্যাভাটার কিন্তু কোন রিয়েল লাইফ ক্লায়েন্টের ডেসক্রিপশন নয় । তবে এটাতে এমনভাবে একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্টের ডেসক্রিপশন সাজানো থাকে যাতে করে একজন বিজনেসম্যান তার কোম্পানির সমস্ত ক্লায়েন্টের মধ্য থেকে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা এটা আইডেন্টিফাই করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি বানিয়ে প্রফিট জেনারেট করতে পারেন । 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটারে কী কী ইনফরমেশন রাখা উচিৎ ? 

যেহেতু আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার বানানোর ফলে একজন বিজনেস ওউনার তার কোম্পানি থেকে সার্ভিস নেয়া সমস্ত ক্লায়েন্টদের মধ্যে থেকে কোন ধরণের ক্লায়েন্টদেরকে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হিসাবে টার্গেট করতে পারেন সেটা ক্লিয়ারলি বুঝতে পারেন, সুতরাং এ অ্যাভাটার বানানোর সময় সেটাতে যত বেশি ইনফরমেশন রাখতে পারবেন ততই ভালো । সাধারণত এ ধরণের অ্যাভাটার বানানোর সময় নিচের ইনফরমেশনগুলো অবশ্যই রাখতে হয় –

  • তাদের নাম কী? 
  • তাদের বয়স কত? 
  • তাদের জেন্ডার কী? 
  • তাদের পেশা অর্থাৎ তারা কী করেন? 
  • তাদের লোকেশন কোথায়?  (লোকেশন ইনক্লুড করার ক্ষেত্রে বাড়ি এবং অফিস দুটোর লোকেশন ই রাখার চেষ্টা করবেন) 
  • ম্যারিটাল স্ট্যাটাস কী? 
  • তাদের পরিবারে কে কে আছেন? 
  • তারা কোন রিলিজিওন ফলো করেন ? 
  • তারা কোন কোন সোর্স থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ইনফরমেশন কালেক্ট করে থাকেন? 
  • তাদের ইন্টারেস্ট সেক্টরগুলো কী কী? 
  • তাদের লাইফের টপ প্রায়োরিটি বা ভ্যালুসগুলো কী? 
  • কেন তারা আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড হবে? 

আবারও বলছি, যখন নিজের বিজনেসের জন্য অ্যাভাটার বানাবেন, তখন সেটাতে ক্লায়েন্টের ইনফরমেশন যেন যথেষ্ট ডিটেইলড থাকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। কোনভাবেই কম ইনফরমেশন দিয়ে অ্যাভাটার বানাতে যাবেননা।পাশাপাশি এটা বানানোর আগে অবশ্যই সময় নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে রিসার্চ করে নেবেন। 

অ্যাভাটার বিজনেসে কেন প্রয়োজন?

যখন কেউ দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে একটা বিজনেস দাঁড় করান, তখন তার মূল লক্ষ্য থাকে বিজনেসটা সাকসেসফুল করা। আর এটা নিশ্চয়ই সবাই এতক্ষণে বুঝে গেছেন যে একটা বিজনেসকে সাকসেসফুল করার জন্য এমন কিছু ক্লায়েন্ট কিংবা কাস্টমার প্রয়োজন যারা একইসাথে সে বিজনেস কোম্পানি থেকে বারবার প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পারচেজ করবেন এবং বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতেও হেল্প করবেন। 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার মূলত এমন ধরণের ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতেই ব্যবহার করা করে থাকে৷ এ অ্যাভাটার সঠিকভাবে টার্গেটেড ক্লায়েন্টদের কাছে বিজনেস মার্কেটিং করতে হেল্প করে এবং ক্লায়েন্টদের সাথে আরো ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করতেও কাজে আসে।

এগুলো ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে একটা বিজনেসে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। চলুন দেরি না করে সে কারণগুলো জেনে নেয়া যাক৷ 

১।অনেকেই ভেবে থাকেন, যারা একটা কোম্পানি থেকে একবার প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নেয় ,তারা সবাই ই বুঝি আইডিয়াল ক্লায়েন্ট। এ ভুল ধারণার ফলে তারা সবধরনের ক্লায়েন্টকে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট ধরে নিয়েই কাজ করতে চান। এতে করে দিনশেষে তারা আশানুরূপ সংখ্যক ক্লায়েন্ট পাননা৷ আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার ব্যবহার করার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা পসিবল হয়৷ কারণ যখন কেউ এ অ্যাভাটার ব্যবহার করেন, তখন তিনি সবাইকে ফোকাস না করে কিছু ক্রাইটেরিয়া ফলো করে একটা স্পেসিফিক এরিয়ার ক্লায়েন্টদেরকে টার্গেট করে মার্কেটিং করতে পারেন। অর্থাৎ এ অ্যাভাটার একজন বিজনেস ওউনারকে সঠিক এরিয়ার ক্লায়েন্টদের প্রতি ফোকাসড রাখতে হেল্প করে। 

২। যারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারেন তাদের দিকে ফোকাস করেই মার্কেটিং করা যায় । একারণে তখন যেসব ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় তারা সাধারণত বারবার ওই কোম্পানি থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পারচেজ করে থাকেন৷ সুতরাং এই অ্যাভাটার ব্যবহার করার ফলে বেশি বেশি রিপিট ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল হয়। 

৩। ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন প্রোডাক্ট রিলেটেড ইনফরমেশন জানতে কোন ধরণের মিডিয়াগুলো ব্যবহার করেন সেটা বোঝা যায়। এতে করে ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার জন্য সে স্পেসিফিক মিডিয়াগুলোতে নিজের বিজনেসের মার্কেটিং করা পসিবল হয়। 

৪।যখন কেউ তার পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট সম্পর্কে যথেষ্ট ইনফরমেশন রাখেন, তখন সে ক্লায়েন্টকে তার বিজনেস থেকে সার্ভিস নিতে কনভিন্স করাটা অনেকটা ইজি হয়ে যায়। যেহেতু আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার থেকে একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সম্পর্কে ডিটেইলে জানার সুযোগ থাকে, সুতরাং তখন ঠিক কিভাবে ক্লায়েন্টদের কনভিন্স করার চেষ্টা করলে তারা প্রোডাক্ট পারচেজ করবে সেটাও বোঝা যায়, যা ইভেনচুয়ালি বিজনেসে সেল বাড়িয়ে প্রফিট জেনারেট করতে হেল্প করে। 

। এই অ্যাভাটার ব্যবহারের অন্যতম প্রধান বেনিফিট হলো এটা বিজনেস ক্লায়েন্টদের কাছে প্রতিটা মেসেজ যেন সঠিকভাবে পৌঁছানো হয় সেটা নিশ্চিত করে। এর কারণে মার্কেটিং স্পিড যেমন বাড়ে তেমনিভাবে বিজনেস মার্কেটিংয়ের পেছনে বাড়তি টাকাও খরচ করতে হয়না। পাশাপাশি এ অ্যাভাটার সময়ের অপচয় কমাতেও সমানভাবে ইফেকটিভ! 

৬।যেহেতু আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অ্যাভাটার ব্যবহার করলে ক্লায়েন্টরা কেমন ধরণের প্রোডাক্ট পারচেজ করতে ইন্টারেস্টেড সেটা বোঝা যায়, একারণে নিজের বিজনেসের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কেমন হওয়া উচিৎ সেটা নিয়ে আইডিয়া পাওয়া যায় । একইসাথে প্রোডাক্টের সেল বাড়ানোর জন্য আই ক্যাচিং কন্টেন্ট কিভাবে বানাতে হবে সেটাও বোঝা যায় । 

৭।বিজনেসে সাকসেস আনার একটা সিক্রেট হলো ক্লায়েন্টদের সাথে সঠিকভাবে কমিউনিকেট করা। এ অ্যাভাটার বেটার কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স দিতে খুবই হেল্পফুল। এর ফলে ক্লায়েন্টদের সাথে ইন্টারেক্ট করাও অনেক সহজ হয়ে যায়। 

 সুতরাং,এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এই অ্যাভাটার প্রতিটা বিজনেসে সাকসেস আনতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! তাই, পরিশেষে নিঃসন্দেহে বলতে পারি, নিজের বিজনেসকে সাকসেসফুল করতে চাইলে অবশ্যই এটা ব্যবহার করুন। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: