ফ্রিল্যান্সাররা সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করেন কেন?

ফ্রিল্যান্সিং নিঃসন্দেহে এ যুগের ইয়াং জেনারেশনের অন্যতম পছন্দের ক্যারিয়ার চয়েসগুলোর মধ্যে একটা। এখন অনেকেই বাড়িতে বসে নিজের সুবিধাজনক সময়ে কাজ করে সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হওয়ার উদ্দেশ্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন সেক্টরে (যেমনঃ গ্রাফিক ডিজাইন, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং) নিজেদের স্কিল ডেভেলপ করে কাজ করা শুরু করছেন। ফ্রিল্যান্সিং তো অবশ্যই প্রফিটেবল, তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা জানেন? আমি ই বলে দিচ্ছি। সেটা হলো ক্লায়েন্ট পাওয়া এবং সেল বাড়ানো। যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নতুন, তাদের মধ্যে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন যাদেরকে সেল বাড়ানোর জন্য কখনোই কোনরকম স্ট্রাগল করতে হয়নি। বেশিরভাগই আসলে বুঝে উঠতে পারেননা যে কেন নিজের যথেষ্ট স্কিল থাকা সত্ত্বেও সেল বাড়ছেনা। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে হেল্প করার জন্য আজকে আমি শেয়ার করবো ঠিক কোন কারণে ফ্রিল্যান্সাররা সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করেন এবং কিভাবে এই স্ট্রাগল থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। 

কেন ফ্রিল্যান্সাররা সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করেন? 

যদি একটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সাকসেসফুল করতে হয়, তাহলে অন্যতম কন্ডিশন হলো সেই বিজনেসে বেশি বেশি ক্লায়েন্ট পাওয়া যাতে করে সেল বাড়ানো পসিবল হয়৷ শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসই নয়, বরং প্রত্যেকটা বিজনেসেই যদি সাকসেসের দেখা পাওয়ার ইচ্ছা থেকে থাকে,তাহলে সেল বাড়ানোটা কিন্তু ম্যান্ডেটরিই বলা যায়। 

ফ্রিল্যান্সাররা সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করেন কেন?

সেল বাড়ানোর এই ম্যান্ডেটরি কাজটা করতে যেয়েই ফ্রিল্যান্সাররা বেশিরভাগই সময়ে বিপাকে পড়ে যান। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন সিনারিওটা হচ্ছে তাদের স্কিল আছে ঠিকই, কিন্তু কোনোভাবেই তাদের সেল বাড়তে চায়না। চলুন এখন জানার চেষ্টা করি ঠিক কোন কারণগুলোর জন্য ফ্রিল্যান্সাররা  সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করেন৷ 

১। কোথা থেকে শুরু করা যায় সেই ব্যাপারে কনফিউশান 

যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে নতুন, তারা কোথা থেকে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন সেটা বুঝে উঠতে পারেননা। সঠিক গাইডলাইনের অভাবে তারা সবসময় কনফিউশানে ভুগতে থাকেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কনফিউশানের জায়গা হলো নিজের সার্ভিসের প্রাইসিং কিভাবে করা যায়, কাদেরকে ক্লায়েন্ট হিসাবে টার্গেট করা যায় এবং কিভাবে তাদেরকে রিচ করা যায় ইত্যাদি। এই কনফিউশান থেকেই ফ্রিল্যান্সাররা ইনডিসিশনে ভুগে সঠিক ডিসিশন নিতে পারেননা। যার ফলে তারা সেল বাড়াতে স্ট্রাগলের সম্মুখীন হন। 

২। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রিজেক্টেড হওয়ার ভয় 

যেকোন কাজ সাকসেসফুল করার পথে বিভিন্ন বাধা -বিপত্তি ফেইস করতে হয়। ফ্রিল্যান্সিংও এর ব্যতিক্রম নয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে যারা যুক্ত রয়েছেন তারা নিশ্চয়ই খুব ভালোমতো জানেন যে এটা এমন একটা সেক্টর যেখানে কমবেশি সবাইকেই কখনো না কখনো ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রিজেক্টেড হতে হয়৷ সত্যি বলতে এই সেক্টরে এমনটা হওয়া খুবই ন্যাচারাল। কেননা একেকজন ক্লায়েন্টের ডিমান্ড একেকরকম থাকে৷ আর যদি ক্লায়েন্টের ডিমান্ড ফ্রিল্যান্সার ফুলফিল করতে না পারেন, তখনই ক্লায়েন্ট তাকে রিজেক্ট করে অন্য একজনকে হায়ার করেন। 

সবাই হয়তো জেনে অবাক হবেন যে এই রিজেক্টেড হওয়ার ভয়ই ফ্রিল্যান্সারদের সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে যারা নতুন তারা এই রিজেকশন নিতে পারেননা এবং একবার রিজেক্টেড হলে তারা কাজ করার মোটিভেশান হারিয়ে ফেলেন৷ যে কারণে তারা ক্লায়েন্ট পাননা এবং সেলও বাড়েনা। 

৩। কোল্ড ইমেইল সঠিকভাবে না পাঠানো 

কোল্ড ইমেইল যে ক্লায়েন্ট পেতে কতটা হেল্পফুল এটা তো সবাই জানেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্ষেত্রেও নিজের পছন্দের ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে কোল্ড ইমেইলের ব্যবহার এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। তবে অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা এই কোল্ড ইমেইলের ভেতরে শুধুমাত্র নিজের এবং নিজের সার্ভিসের ব্যাপারেই ইনফরমেশন দেন। কিন্তু তাদের এ অফার করা সার্ভিসের মাধ্যমে ক্লায়েন্টরা কিভাবে বেনিফিট পেতে পারেন সেটা তারা উল্লেখ করেননা। একারণে দেখা যায় ক্লায়েন্টরা সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড ফিল করেননা এবং তারা সে ইমেইলগুলোর রিপ্লাইও দেননা। একারণেই দেখা যায়, স্কিল থাকার পরেও ফ্রিল্যান্সারদের সেল বাড়তে চায়না। 

৪। ফ্রিল্যান্সিংয়ে লেগে থাকার মেন্টালিটির অভাব 

কোন কাজেই খুব সহজে সফলতা আসেনা। বরং সফলতার জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম এবং সেটার পেছনে লেগে থাকার মেন্টালিটি। অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করা খুবই সহজ এটা ভেবে কাজ করা শুরু করেন। কিন্তু কয়েকদিন পর যখন দেখেন যে সেল বাড়ছেনা, ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অর্ডার আসছেনা, যাদেরকে কোল্ড ইমেইল সেন্ড করা হচ্ছে তারা সেভাবে পজিটিভলি রিপ্লাই দিচ্ছেনা, তখনই অনেকেই ফলোআপ করার ট্রাই না করে হাল ছেড়ে দেন। এটা করা কখনোই উচিত নয়। কেননা যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ে পারসিসটেন্ট না থাকতে পারেন, অর্থাৎ সহজ ভাষায় যদি লেগে থাকতে না পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টদের সাথে ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করা পসিবল হয়না। যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা সেল বাড়াতে স্ট্রাগল করেন।

৫। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে যথেষ্ট সময় না দেয়া 

বলা হয়ে থাকে, “সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।” তাই যদি সাকসেসফুল ফ্রিল্যান্সার হতে চান অথচ ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে সেভাবে সময়ই না দেন তাহলে কিন্তু কখনোই আশানুরূপ সেল পাবেননা। অনেকেই রয়েছেন যাদেরকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি একইসাথে নিজেদের পড়াশোনা, অন্য বিজনেস কিংবা জবেও সময় দিতে হয়। তখন দেখা যায় টায়ার্ডনেস, আলসেমি কিংবা ব্যস্ততাজনিত কারণে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সময় দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একারণে তখন ক্লায়েন্টদের সাথে ঠিকমতো কমিউনিকেট করা হয়না যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররাও সেল বাড়াতে পারেননা। 

কিভাবে সেল বাড়ানোর স্ট্রাগল ওভারকাম করা যায়? 

ফ্রিল্যান্সাররা সেল বাড়াতে কেন স্ট্রাগল করে সেটা তো জানলেন। চলুন এবার জেনে আসা যাক কিভাবে এই স্ট্রাগল ওভারকাম করা যেতে পারে। 

  • ক্লায়েন্টদেরকে যে সার্ভিসগুলো অফার করবেন, সেগুলো সম্পর্কে ডিটেইলড ইনফরমেশন ইনক্লুড করুন এবং সঠিকভাবে প্রাইসিং করুন৷ পাশাপাশি কারা ক্লায়েন্ট হতে পারে সেটা রিসার্চের মাধ্যমে খুঁজে বের করুন এবং তাদেরকে রিচ করার ট্রাই করুন। দেখবেন খুব দ্রুতই সেল বাড়বে।
  • যদি নিজেকে একজন সাকসেসফুল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেখতে চান, তাহলে রিজেকশনের ভয় পাবেননা। সবসময় ক্লায়েন্টের কাছ থেকে না শোনার জন্য মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড থাকুন। নিজের মাইন্ডসেট এভাবে করুন “যদি একটা কাজ পাই সেটাই ভালোভাবে করবো যেন আরো দশটা কাজ পাওয়ার পসিবিলিটি তৈরি হয়। ” দেখবেন নিজের কনফিডেন্স ফিরে পাবেন৷
  • কোল্ড ইমেইল পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য হলো যারা পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট তাদের সাথে রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করা যাতে করে তারা একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড হন । একারণে সবসময় কোল্ড ইমেইলে আপনার কাছ থেকে সার্ভিস নিলে কিভাবে ক্লায়েন্টরা বেনিফিট পাবে কিংবা কিভাবে তাদের ডিমান্ড ফুলফিল হবে সেটা উল্লেখ করুন। কেননা ক্লায়েন্টরা তাদের নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই এ সার্ভিসগুলো নিয়ে থাকেন। তাই, কোল্ড ইমেইলে যতটা সম্ভব সহজ ভাষা ব্যবহার করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রিপ্লাই পাওয়া নিশ্চিত করুন।

  • ফ্রিল্যান্সিংয়ে সেল বাড়িয়ে ফেলা মোটেও একরাতের কাজ নয়। বরং এক্ষেত্রে প্রয়োজন সঠিকভাবে ইফোর্ট দেয়া। যদি ক্লায়েন্ট কোল্ড ইমেইল সেন্ড করার পর রিপ্লাই না দেন, তাহলে ফলোআপ করুন এবং ক্লায়েন্টের মনে পজিটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করার ট্রাই করুন। এক্ষেত্রে ইমেইল ক্যাম্পেইন করতে পারেন। এছাড়াও অটোমেশন ইমেইল সিস্টেম রাখতে পারেন যে সিস্টেমে ক্লায়েন্ট রিপ্লাই না দিলে অটোমেটিকালি ফলোআপ করা যাবে। মনে রাখবেন, ফলোআপ ইমেইলের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের নিজের সার্ভিসের প্রতি ইন্টারেস্টেড করে তুলে খুব ইজিলি সেল বাড়ানো পসিবল।
  • একটা বিষয় সবসময় মনে রাখবেন, সাকসেসফুল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে আপনাকে এটার পেছনে সময় দিতেই হবে। তবে এ কাজটা চাইলে কিছুটা সহজ করে ফেলতে পারেন। কিভাবে? যদি ফ্রিল্যান্সিং টাইম ম্যানেজমেন্ট রিলেটেড কোন প্রবলেম ফেইস করেন তাহলে বিভিন্ন অনলাইন টুলের সাহায্য নিতে পারেন যেগুলো এই টাইম ম্যানেজের কাজকে অনেকটা কনভেনিয়েন্ট করে দেবে। চাইলেই বিভিন্ন ফ্রি কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট টুল যেমন Trello, Asana ইউজ করতে পারেন। ইনভেস্ট করার ক্যাপাসিটি থাকলে পেইড টুলস ও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন কোল্ড ইমেইল এর জন্য আমি Lemlist এন্ড Find That Lead ইউস করি। এই টুলগুলো ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেলসহ নিজের প্রোডাক্টিভিটিতেও অনেক হেল্প করে এবং কাজটা অনেক সহজ করে দেয়।

পরিশেষে বলতে চাই, যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সেল বাড়াতে স্ট্রাগল  করেন তাহলে হতাশ হবেননা। বরং কেন সেল বাড়ছেনা সেই কারণগুলো খুঁজে সেগুলোর সলিউশন বের করার চেষ্টা করুন৷ দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি সেল বাড়িয়ে সাকসেসফুল হতে পারবেন। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: