একজন ফ্রিল্যান্সার যদি লং-টার্মের জন্য একটা স্টেবল ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করতে চান, তাহলে তাকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বাইরে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে কিভাবে ক্লায়েন্ট জেনারেট করতে হয় সে প্রসেস সম্পর্কে নলেজ রাখতে হয়। ক্লায়েন্ট জেনারেট করার জন্য ফেসবুক গ্রুপ, লিংকডইন কিংবা ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম বেশ ইফেকটিভ। তবে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা কিন্তু ইনস্টাগ্রাম থেকে কিভাবে নিজেদের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের জন্য ক্লায়েন্ট পেতে পারেন, সে সম্পর্কে খুব একটা বেশি জানেন না৷
যদি ইনস্টাগ্রাম নিয়ে একটু বলতে যাই, এই প্ল্যাটফর্মটা গোটা বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে একটা৷ বিভিন্ন দেশের সেলিব্রিটি এবং বিজনেস ওউনাররা সবার কাছে নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে অর্থাৎ ব্র্যান্ডিং করতে ইন্সটাগ্রামের সাহায্য নিয়ে থাকেন৷
এর পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামকে কাজে লাগিয়ে সঠিক কিছু স্ট্র্যাটেজি ফলো করার মাধ্যমে এখান থেকে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের জন্য আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি বিল্ডআপ করা পসিবল।কি? আরো ডিটেইলে জানতে ইচ্ছা করছে তাইতো? কোনো চিন্তা নেই, কারণ আজকে আমি সবার জন্য আলোচনা করব কিভাবে সঠিক উপায়ে ইনস্টাগ্রামকে কাজে লাগিয়ে একজন ফ্রিল্যান্সার এনগেজড আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি বিল্ডআপ করতে পারবেন এবং সাকসেস অ্যাচিভ করতে সক্ষম হবেন।
যারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট নামক টার্মটার সাথে পরিচিত নন, তাদের জন্য লেখার শুরুতেই চলুন জেনে নেয়া যাক আইডিয়াল ক্লায়েন্ট বলতে কী বোঝায়। আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হলো কোন বিজনেসের এমন কিছু লয়াল ক্লায়েন্ট যারা সেই বিজনেস থেকে বারবার সার্ভিস নিয়ে থাকেন এবং একই সাথে তারা সেই বিজনেসকে অন্যদের কাছে রেফার করার মাধ্যমে প্রমোট করে থাকেন। যেকোনো বিজনেসের ব্র্যান্ডিং বাড়াতে এবং বেশি বেশি সেল জেনারেট করতে এই ধরনের ক্লায়েন্টদের ভূমিকা অনেক কার্যকরী। একারণেই যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার একটা এনগেজড আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি থাকা কিন্তু ম্যান্ডেটরি৷
এবার আসা যাক আজকের লেখার আসল অংশে।
যখন ফ্রিল্যান্সাররা ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে তাদের নিশের ওপর বেইজ করে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি বিল্ড আপ করতে যান, তখন তারা মনে করেন, তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে যত বেশি ফলোয়ার থাকবে, ক্লায়েন্ট পাওয়াও ততই সহজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ সহজ কথায় তারা মনে করেন “যত বেশি ফলোয়ার, ততবেশি ক্লায়েন্ট। ” তখন তারা ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন র্যান্ডম অ্যাকাউন্টের সাথে কানেক্ট হতে থাকেন এবং বুস্ট করার মাধ্যমে বিভিন্ন ফেইক ফলোয়ার দিয়ে নিজেদের ফলোয়ার লিস্ট বাড়াতে থাকেন।
কিন্তু আসল ব্যাপারটা হচ্ছে ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি বিল্ড আপ করার জন্য অ্যাকাউন্টে ফলোয়ারের সংখ্যা সেভাবে ম্যাটারই করে না। যদি কম সংখ্যক ফলোয়ার থাকে এবং তাদের সাথে প্রোপারলি কানেকশন বিল্ড আপ করতে পারেন, তাহলে দেখতে পাবেন সেই কম সংখ্যক ফলোয়ারের মধ্যে থেকেই আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পেয়ে যাবেন৷ অন্যদিকে যদি অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার ফলোয়ার থাকে কিন্তু তাদের সাথে কোন কানেকশন না থাকে, তাহলে কিন্তু কখনোই আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল হবে না।
এ কারণে কখনোই ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে ফোকাস করা যাবেনা। বরং ইনস্টাগ্রামের ফলোয়ার এবং যাদের ফলো করছেন তাদের কোয়ালিটি কেমন, একইসাথে তাদের সাথে কিভাবে প্রোপার কানেকশন মেইনটেইন করা যায় সেই বিষয়ে ফোকাস রাখতে হবে।
এবার আসা যাক কিভাবে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেতে পারবেন সে সম্পর্কে। এই কাজটা করার জন্য শুরুতেই প্রোপার রিসার্চ করে নেয়া প্রয়োজন। আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের প্রোফাইল খুঁজে পেতে হলে হ্যাশট্যাগের সাহায্য নিতে পারেন। সবাই নিশ্চয়ই জানেন ইনস্টাগ্রামের পোষ্টের রিচ বাড়ানোর জন্য হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়। শুরুতে রিসার্চের মাধ্যমে ফাইন্ড আউট করার চেষ্টা করুন যারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারেন তারা কোন হ্যাশট্যাগ গুলো ইউজ করতে পারেন। এরপর সেই হ্যাশট্যাগ গুলোর মাধ্যমে সার্চ করে তাদের প্রোফাইল খুঁজে বের করুন এবং তাদের ফলো করুন।
এর পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামে সার্চ করে এমন কিছু মানুষের প্রোফাইল খুঁজে বের করার ট্রাই করুন, যারা অলরেডি আপনার কম্পিটিটরদের সাথে কানেক্টেড রয়েছেন। কারণ যারা আপনার কম্পিটিটরদের সাথে কানেক্টেড রয়েছেন তারাই কিন্তু আপনার আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটিতে ইনক্লুডেড হতে পারেন।
যখন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারেন এমন কিছু মানুষের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়ে যাবেন, তারপরের কাজটাই হচ্ছে তাদের সাথে জেনুইন রিলেশনশিপ বিল্ড আপ করার চেষ্টা করা। আর এ রিলেশনশিপ বিল্ড আপ করার জন্য তাদের সাথে সঠিকভাবে ইন্টার্যাক্ট করতে হবে। এতে করে নিজের সাথে তাদের এনগেজ করতে পারবেন, যা পরবর্তীতে সুফল বয়ে আনবে।
এখন প্রশ্ন হলো এই কাজটা কিভাবে করবেন?
এই কাজটা কিন্তু একদমই কঠিন নয়। সবার প্রথমে তাদের ইনস্টাগ্রামের পোস্টে লাইক দিন। পাশাপাশি তাদের পোস্টের ক্যাপশন পড়ে অথবা ছবি দেখে নিজের থটস কী সেটা ডিটেইলে কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে পারেন৷
মনে রাখবেন, একটা থটফুল কমেন্টই একজন ফ্রিল্যান্সারকে তার আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের সাথে এনগেজ করতে অনেকটা হেল্প করে। কারণ যখন কেউ আপনার কমেন্ট পড়বেন, তখন তিনি বুঝতে পারবেন যিনি কমেন্ট করেছেন তিনি যথেষ্ট সময় নিয়েই পোস্টটা পড়েছেন বা ছবিটা নোটিস করেছেন৷ তখন তিনিও আপনার সাথে ইন্টার্যাক্ট করতে ইন্টারেস্টেড ফিল করবেন।
কমেন্ট করার পাশাপাশি চাইলে সেসব মানুষকে ইনবক্সেও নক করতে পারেন। তবে কখনোই ইনবক্সে কনভারসেশনের শুরুতেই নিজের সার্ভিস সেল করার চেষ্টা করবেন না। কাউকে ইনবক্স করার সময় একটা স্পেশাল ট্যাকটিক ফলো করতে হবে। সেটা হচ্ছে যাকে ইনবক্স করছেন তাকে বোঝাতে হবে যে আপনি তার সাথে কানেকশান বিল্ড আপ করার জন্য সত্যিকার অর্থেই ইন্টারেস্টেড।
তাই ইনবক্সে শুধু হাই-হ্যালো না করে তাদের প্রোফাইল এর কোন রিসেন্ট পোস্ট নিয়ে নিজের থটস বা ওপিনিয়ন শেয়ার করতে পারেন৷ এতে করে দেখতে পাবেন যাকে ইনবক্স করছেন তিনি আপনার সাথে কনভারসেশন কন্টিনিউ করবেন এবং এখান থেকেই ধীরে ধীরে সেই মানুষটার সাথে জেনুইন রিলেশনশিপ বিল্ডআপ হবে।
এভাবেই আইডিয়াল ক্লায়েন্টের সাথে রেগুলার বেসিসে কানেক্টেড থাকতে হবে, যাতে করে পরবর্তীতে তাদের কাছে নিজের সার্ভিস সেল করা পসিবল হয়। আর এনগেজিং আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি বিল্ড আপ করার অন্যতম মূলমন্ত্র হচ্ছে কনসিস্টেন্ট থাকা।
কোনোভাবেই একবার তাদের পোস্টে লাইক দিয়ে, কমেন্ট করে অথবা ইনবক্সে একবার টেক্সট দিয়ে থেমে থাকা যাবেনা। কেননা আরো অনেক ফ্রিল্যান্সারই কিন্তু এই মানুষগুলোকেই নিজেদের সার্ভিসের প্রতি অ্যাট্রাক্ট করার ট্রাই করেন। তাই, যদি একবার ইফোর্ট দিয়েই থেমে যান, তাহলে ওই ক্লায়েন্টদের নজরে আসতেই হিমশিম খেতে হবে।
তাই যাদেরকে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত করবেন, তাদের পোস্টে নিয়মিত লাইক দিন, কমেন্ট করুন এবং একইসাথে ইনবক্সেও রেগুলার বেসিসে কনভার্সেশন করার ট্রাই করুন। এতে করে দেখতে পাবেন যখন নিজের সার্ভিসের মার্কেটিং করবেন, তখন তাদের কাছ থেকে সবার আগে পজিটিভ রেসপন্স পাবেন।
এটুকুই ছিলো ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কমিউনিটি বিল্ডআপ করার গাইডলাইন। আশা করি যারা এতদিন ভাবতেন ইনস্টাগ্রাম থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল নয়, তাদের ভুল ধারণা ভাংতে পেরেছি। তাই, যদি ইনস্টাগ্রামকে কাজে লাগিয়ে নিজের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সাকসেস নিশ্চিত করতে চান, তাহলে আমার দেখানো এ গাইডলাইনগুলো ধৈর্য্য ধরে ফলো করতে থাকুন।