ফলো-আপ মার্কেটিং

প্রতিটা বিজনেসে ক্লায়েন্ট পাওয়ার মাধ্যমে সেলস জেনারেট করা কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটা। এক্সামপল হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস নিয়ে একটু বলা যাক। জেনারেলি একটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে সেলস বাড়াতে চাইলে ক্লায়েন্টদের কাছে রিচ করে তাদেরকে বিভিন্নভাবে অ্যাট্রাক্ট করতে হয় যাতে করে তারা সেই বিজনেস কোম্পানি থেকে তাদের সার্ভিস পারচেজ করেন। ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এই কাজটা আরো ইফেকটিভলি করা পসিবল হয়। আমি অনেক ফ্রিল্যান্সারকে দেখেছি যারা এই মার্কেটিংটা করেননা, কিংবা করলেও হয়তো এক দুইবার ট্রাই করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রেসপন্স না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন। অথচ বিজনেসে ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অল্প পরিশ্রমে বেশি সেলস জেনারেট করা অসম্ভব কিছু নয়। কী? আরো জানতে ইচ্ছা করছে তাইনা? আজকের লেখায় আমি ফলো-আপ মার্কেটিং সম্পর্কে কিছু ইফেকটিভ টিপস অ্যান্ড ট্রিকস শেয়ার করবো যেগুলো সঠিকভাবে ফলো করলে আপনারা শিওরলি নিজেদের বিজনেসে ভালো একটা আউটপুট পাবেন। 

ফলো-আপ মার্কেটিং কী? 

যখন একজন ফ্রিল্যান্সার তার বিজনেসে একটা নতুন সার্ভিস লঞ্চ করেন, তখন তার মূল উদ্দেশ্য কী থাকে বলুন তো? তিনি চান তার পটেনশিয়াল এবং এক্সিসটিং দুই ধরণের ক্লায়েন্টই যেন এ সার্ভিসের ব্যাপারে জানতে পারেন। একারণে তখন তিনি সেসব ক্লায়েন্টদের সাথে ইমেইল বা ফোনকলের মাধ্যমে কমিউনিকেট করার ট্রাই করেন। এসময় দেখা যায়, হয়তো অনেক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পজিটিভ রেসপন্স আসে যারা এ নতুন লঞ্চ করা সার্ভিস পারচেজ করতে চান। আবার অনেকের কাছ থেকে পজিটিভ রেস্পন্স আসেনা, হয়তো তারা বলেন যে এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে পরে জানাবেন। কিছু কিছু ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আবার পজিটিভ-নেগেটিভ কোন ধরণের রেস্পন্সই আসেনা। 

এক্ষেত্রে যেসব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কোন রেস্পন্স পাওয়া যায়নি, মেইনলি তাদেরকে টার্গেট করেই পরবর্তীতে ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের স্ট্র‍্যাটেজি ডেভেলপ করা হয়। সুতরাং, সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ফলো-আপ মার্কেটিং হলো ক্লায়েন্টদের সাথে পুনরায় এমনভাবে কমিউনিকেট করা যাতে করে তারা কোন বিজনেস কোম্পানি থেকে তাদের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পারচেজ করেন। অন্যান্য মার্কেটিংয়ের সাথে ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের ডিফারেন্স হলো, এই মার্কেটিং একটা সিস্টেমেটিক মেথোডে করা হয়, অর্থাৎ প্রত্যেকবার সেইম মেথোড ফলো করা হয়। যার ফলে এই মার্কেটিং থেকে কেমন রেজাল্ট পাওয়া যাবে সেটা আগেই প্রেডিক্ট করে নেয়া যায় এবং এই রেজাল্ট বেশিরভাগ সময়েই কনসিসটেন্ট হয়ে থাকে। 

ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা 

মার্কেটিং এক্সপার্টদের মতে, ফলো-আপ মূলত তিন ধরণের ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে করা যেতে পারে। প্রথম ক্যাটাগরির ক্লায়েন্টরা হলো সাস্পেক্ট। সাস্পেক্ট হলো তারা যারা আপনার টার্গেট করা মার্কেটপ্লেসে রয়েছেন৷ দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছেন প্রোস্পেক্ট, যারা মার্কেটিং করার পর রেসপন্স করলেও এখনও পারচেজ করেননি। ফলো-আপের তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ক্লায়েন্ট যারা অলরেডি একবার প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পারচেজ করে ফেলেছেন। 

ফলো-আপ মার্কেটিং করার ফলে ক্লায়েন্টদের মনে একটা বিজনেস কোম্পানি সম্পর্কে পজিটিভ ইম্প্যাক্ট তৈরি করা যায়। তারা মনে করেন যেহেতু একটা কোম্পানি তাদের সাথে কমিউনিকেট করার জন্য এতটা ইফোর্ট দিচ্ছে, সুতরাং তাদের কাছ থেকে একবার পারচেজ করে দেখা যেতেই পারে। তখন তারা নিজেদেরকে ওই কোম্পানির সাথে আরো বেশি কানেক্টেড ভাবতে শুরু করেন এবং মূলত এই চিন্তা থেকেই পরবর্তীতে দেখা যায়, তারা হয়তো তাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কোন প্রোডাক্ট পারচেজ করেছেন কিংবা কোন সার্ভিস পারচেজ করে ফেলছেন।

এভাবেই ইফেকটিভ ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিজনেস সেলস জেনারেট করা পসিবল হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ক্লায়েন্টের সামনে নিজের কোম্পানীর ভ্যালু বাড়ানোর মাধ্যমে বিজনেসে বেশি বেশি সেলস জেনারেট করতে ফলোআপ মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। 

ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে যে স্ট্র‍্যাটেজিগুলো ফলো করতে পারেন

আমি লেখার শুরুতেই বলেছি, ফলো-আপ মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস সাকসেসফুল করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও অনেক ফ্রিল্যান্সারই ক্লায়েন্টদেরকে ফলো-আপ করেননা। তারা এটার কারণ হিসেবে দাবি করেন নিজেদের সময়ের অভাব এবং একবার ফলো-আপ করার পরেও ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রেসপন্স না পাওয়া। কিন্তু জানেন ফলো-আপ মার্কেটিং সাকসেসফুল না হওয়ার আসল কারণটা কী? সেটা হলো প্রোপার স্ট্র‍্যাটেজি ফলো না করা। 

একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখবেন, একজন ক্লায়েন্ট প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ফলো-আপ ইমেইল, মেসেজ বা কল পেয়ে থাকেন। সুতরাং এত এত কোম্পানির ভিড়ে যদি আপনি আপনার ফলো-আপে ক্লায়েন্টদেরকে এক্সট্রা কিছু অফার করতে না পারেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে যতই ট্রাই করুননা কেন, কখনোই পজিটিভ রেজাল্ট পাবেননা। তাই ফলো-আপ মার্কেটিং সাকসেসফুল করতে চাইলে ফলো করতে পারেন এই স্ট্র‍্যাটেজিগুলো –

  • অনেকেই রয়েছেন যারা ফলো-আপ করার মাধ্যম হিসেবে শুধুমাত্র ফোনকলকেই বুঝে থাকেন। আবার অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র ইমেইল সেন্ড করলে, ক্লায়েন্টের লিংকডইনে বা সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে একটা মেসেজ সেন্ড করলেই হয়তো ফলো-আপের রেস্পনসিবিলিটি শেষ। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা সেরকম নয়। বরং ফলো-আপ মার্কেটিং সাকসেসফুল করার স্ট্র‍্যাটেজি হিসেবে আমি বলবো বিভিন্ন মেথোডে ক্লায়েন্টকে ফলো-আপ করুন। যেমন ধরুন, ক্লায়েন্টকে কয়েকবার কল করার পরেও তিনি কল পিক না করলে তখন তাকে ইমেইল করতে পারেন। কিংবা যদি লিংকডইনে কানেক্টেড থাকেন তাহলে একটা মেসেজ সেন্ড করতে পারেন। এভাবে সিচুয়েশন বুঝে কল করুন কিংবা মেসেজ সেন্ড করুন। এক্ষেত্রে আমি আরেকটা বিষয় বলতে চাই, সেটা হলো ক্লায়েন্টের কমফোর্টের দিকে সবসময় ফোকাস করবেন। কোন ক্লায়েন্ট যদি ফোনকলে কমফোর্টেবল না হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে বারবার কল না করে ইমেইল কিংবা মেসেজ সেন্ড করুন। 

  • যখন ক্লায়েন্টকে ফলো-আপ ইমেইল সেন্ড করবেন, তখন সাবজেক্ট লাইন স্পেসিফিক রাখুন ৷ অযথা বাড়তি কথা লিখে সাবজেক্ট লাইন বড় না করে ঠিক কী কারণে ইমেইল সেন্ড করছেন, সেটা এক লাইনে মেনশন করুন। এতে করে ক্লায়েন্টের অ্যাটেনশন পাওয়া ইজি হবে। 
  • মনে রাখবেন, ক্লায়েন্টরা কেউই কিন্তু সারাদিন ফ্রি থাকেননা। তারা বিজি লাইফ লিড করেন। কাজেই কখনোই আকারে খুব বেশি বড় ইমেইল বা মেসেজ সেন্ড করতে যাবেননা। বরং যতটুকু পসিবল অল্পসংখ্যক বাক্যের মাধ্যমে যা বলতে চাইছেন সেটা তুলে ধরুন। এই ব্যাপারটা ফোনকলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ বড় মেসেজ কিংবা ইমেইলের পাশাপাশি যদি ক্লায়েন্টরা কাউকে ফোনকলে অহেতুক বেশি কথা বলতে শোনেন, তাহলে তারা বিরক্ত হতে পারেন। এর ফলে হিতে বিপরীত হওয়ার পসিবিলিটিই বেশি। 
  • কখনোই এমনভাবে কথা বলবেননা কিংবা ইমেইল-মেসেজ সেন্ড করবেননা, যাতে করে ক্লায়েন্টের মনে হয় যে শুধুমাত্র সেল জেনারেট করার জন্যই তার সাথে কমিউনিকেট করা হচ্ছে। বরং শুরুতেই ক্লায়েন্টের বিজনেসের খোঁজ নিন, তাকে জিজ্ঞেস করুন তার বিজনেসে তিনি কী কী প্রবলেম ফেইস করছেন। যদি ফলো-আপের আগের রিসার্চে ক্লায়েন্টের ফেস করা প্রবলেম অলরেডি জেনে থাকেন, তাহলে সেই প্রবলেম আপনি কিভাবে সলভ করতে পারবেন সেটা মেনশন করতে পারেন। সাথে কিছু হেল্পফুল আর্টিকেল, ভিডিও এবং ডিসকাউন্ট কোড অফার করতে পারেন। মোটকথা, এমনভাবে ফলো-আপ করবেন যাতে করে একজন ক্লায়েন্ট রিয়েলাইজ করতে পারেন যে তিনি যদি ওই কোম্পানি থেকে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস পারচেজ করেন, তাহলে তিনি আসলেই বেনিফিট পেতে পারবেন। 
  • যদি এমন হয় কল, মেসেজ, ইমেইল সেন্ড করার পরেও ক্লায়েন্ট রেসপন্স করেননি, তাহলে ফলো-আপ করার সময় তাকে মেনশন করবেন যে আগেও এই কোম্পানি থেকে তার সাথে কমিউনিকেট করার ট্রাই করা হয়েছিলো। এর ফলে ক্লায়েন্টের অ্যাটেনশন নিজের দিকে নেয়া ইজি হবে। 
  • যখন কোন ক্লায়েন্ট ফলো-আপে রেসপন্স করবেন এবং আরো ডিটেইলড ডিসকাশন চাইবেন, তখন সেই ডিসকাশন একটা নির্দিষ্ট দিনের স্পেসিফিক সময়ে স্কেজিউল করুন। এতে করে নিজের প্রোফেশনালিজম দেখাতে পারবেন যা ক্লায়েন্টের সামনে কোম্পানির ভ্যালু বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে। 
  • ফলো-আপ মার্কেটিং সাকসেসফুল করতে যে ভুলটা কখনোই করা যাবেনা সেটা হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সংখ্যকবার ফলো-আপ করার ট্রাই করা। কারণ এটা ক্লায়েন্টের মনে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ক্রিয়েট করে। যদি দেখেন অনেকবার ফলো-আপের পরেও ক্লায়েন্টের সাইড থেকে পজিটিভ -নেগেটিভ কোন ধরণের রেসপন্সই আসছেনা, তাহলে সেই সময়ে ফলো-আপ করা বন্ধ করে দিন এবং অন্য ক্লায়েন্ট টার্গেট করুন। 

সুতরাং এটুকুই ছিলো ফলো-আপ মার্কেটিং নিয়ে আজকের আলোচনা। আশা করি আজকের পর থেকে একজন ফ্রিল্যান্সারও তার বিজনেস সাকসেসফুল করার জন্য সুপার হেল্পফুল এই মার্কেটিংকে হেলাফেলা করবেননা। ফলো-আপ মার্কেটিংয়ে একবার সাকসেস আসতে শুরু করলেই দেখবেন ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়বে এবং বিজনেসে সেলস জেনারেট হবে। পাশাপাশি যদি ভালো সার্ভিস দিতে পারেন, তাহলে রিপিট ক্লায়েন্টেরও অভাব হবেনা। শুধু তাই নয়, যেসব ক্লায়েন্ট অলরেডি সার্ভিস নিয়েছেন, তাদের রিকমেন্ডেশন থেকেও আরো ক্লায়েন্ট পাওয়ার চান্স বেড়ে যাবে। তাই, যদি অল্প ইফোর্টে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে বেশি বেশি সেলস জেনারেট করতে চান, তাহলে ফলো-আপ মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্য আজ থেকেই কাজ করা শুরু করে দিন। 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: