আইডিয়াল ক্লায়েন্ট,টার্গেট মার্কেট এবং নিশ সম্পর্কে জানুন

বর্তমানে অনলাইন বিজনেস অন্যান্য বিজনেস মডেলগুলোর তুলনায় ইয়াং জেনারেশনের কাছে অনেক বেশি ফেমাস। সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি মানুষ এই বিজনেসে ইনভলভ হওয়ার কারণে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরণের অনলাইন বিজনেসের সংখ্যা বাড়ছে। যেমনঃ অনলাইন শপের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছে বিভিন্ন প্রোডাক্ট সেল করা, ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দেয়া ইত্যাদি। যারা অনলাইন বিজনেস নিয়ে ইন্টারনেটে রিসার্চ করেছেন কিংবা যারা এটার সাথে অলরেডি ইনভলভড, তারা ডেফিনিটলি টার্গেট মার্কেট, নিশ, আইডিয়াল ক্লায়েন্টের ব্যাপারে লাইফে একবার হলেও শুনেছেন ৷ এগুলো খুব সিম্পল কিছু টার্ম হলেও অনেকে, বিশেষ করে যারা নিউবি তারা এগুলোর মধ্যে ডিফারেন্স কোথায় সেটা ফাইন্ড আউট করতে পারেননা। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমি আইডিয়াল ক্লায়েন্ট, টার্গেট মার্কেট এবং নিশ এ তিনটি টার্ম সম্পর্কে আলোচনা করবো যাতে করে এগুলোর বেসিক ডিফারেন্স সবাই বুঝতে পারেন।

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট বলতে কী বোঝায়? 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট নামক টার্মটা টার্গেট মার্কেট এবং নিশ দুটার সাথেই রিলেটেড। তাই এটা সম্পর্কে শুরুতেই বলে নিচ্ছি। আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হচ্ছে একটা বিজনেসের সেসব সম্মানিত ক্লায়েন্ট যারা সে বিজনেস থেকে তাদের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস মাল্টিপল টাইমে পারচেজ করে থাকেন। এ ক্লায়েন্টদেরকে লয়াল ক্লায়েন্টও বলা হয় কেননা তারা যে শুধুমাত্র প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস বারবার পারচেজ করেন তাই ই নয় , বরং তারা অন্যদেরকেও এগুলো নিতে রিকমেন্ড করেন। আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে পারলে কমিউনিকেশনের ব্যাপারটা অনেক ইজি হয়ে যায় এবং নিজের এক্সপেকটেড রেটে পেমেন্ট পাওয়া পসিবল হয় ৷ তাই বলা যেতে পারে , কোন বিজনেসকে সাকসেসফুল করার জন্য এ ক্লায়েন্টদের ভূমিকা অনেক বেশি থাকে। 

টার্গেট মার্কেট কী? 

বলুন তো একটা বিজনেস স্টার্ট করার টাইমে একজন মানুষ কোন বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কনসার্নড থাকে ? কনফিউজড লাগছে তাইনা ? আচ্ছা আমি ই বলে দিচ্ছি। কোনো একটা বিজনেস ; স্পেসিফিকালি অনলাইন বিজনেস বা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসগুলো স্টার্ট করার টাইমে কিভাবে ক্লায়েন্টদের ডিফাইন করে তাদের কাছে রিচ করে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস সেল করা পসিবল হবে সেই বিষয়টা একজন মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভাবায়। টার্গেট মার্কেট নামক টার্মটা কিন্তু এই কাস্টমার বা ক্লায়েন্টদের ডিফাইন করার সাথেই রিলেটেড। 

একটা বিজনেসে সেল বাড়িয়ে প্রফিট জেনারেট করার জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি কাস্টমার। যা পেতে হলে প্রয়োজন প্রোপারলি বিজনেস মার্কেটিং করা। তবে এক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্ট হচ্ছে বেশি বেশি কাস্টমার পাওয়ার জন্য যদি নিজের আশেপাশে যারা আছেন সবাইকে টার্গেট করে মার্কেটিং করার ট্রাই করেন , তাহলে দেখবেন পরিশ্রম আর সময় খরচ হচ্ছে ঠিকই , কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। একারণেই প্রতিটা বিজনেসের একটা স্পেসিফিক টার্গেট মার্কেট থাকা ম্যান্ডেটরি। 

এবার চলুন জেনে আসা যাক এই টার্গেট মার্কেট বলতে আসলে কি বোঝানো হয়। খুব সহজ বাংলায় টার্গেট মার্কেট বলতে সেসব মানুষকে বোঝানো হয় যাদেরকে টার্গেট করে আপনি আপনার বিজনেসের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন রান করবেন। টার্গেট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা সেটা ডিফাইন করা পসিবল হয়।

তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, টার্গেট মার্কেটিং করার সময় যারা একটা বিজনেসের পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট নন তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষদের ফোকাসে রেখে মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। এই নির্দিষ্ট গ্রুপের  মানুষগুলো কোনো না কোনোভাবে সে বিজনেসের প্রোভাইড করা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের প্রতি ইন্টারেস্টেড ফিল করেন এবং তাদেরকে অ্যাট্রাকটেড ফিল করানো গেলে তারা পরবর্তীতে পারচেজের দিকেও আগান। 

যেমন ধরুন,

একজন গ্রাফিক ডিজাইনার যদি তার নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস স্টার্ট করতে চান, সেইক্ষেত্রে তাকে এমন মানুষদের টার্গেটে রেখে মার্কেটিং করতে হবে যাদের বিভিন্ন গ্রাফিক ডিজাইন কন্টেন্ট প্রয়োজন। যেমনঃ যারা ডিজিটাল মার্কেটার, ব্লগার, ইউটিউবার অথবা ই-কমার্স সেলার তাদের প্রতিনিয়তই বিভিন্ন গ্রাফিক ডিজাইন কন্টেন্ট, যেমনঃ লোগো, ম্যাগাজিন কভার, ব্যানার, সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করার ইমেইজ, পিন্টারেস্ট পিন ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। তাই, একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের উচিৎ এমন ধরণের মানুষদেরকে টার্গেট অডিয়েন্স হিসেবে ধরে সেভাবে তাদের সামনে মার্কেটিং করা। 

এটা বলা যেতে পারে, টার্গেট মার্কেট হলো নিজের বিজনেসে কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সেটা ডিফাইন করার ইনিশিয়াল পয়েন্ট। কারা টার্গেট অডিয়েন্স অর্থাৎ কাদেরকে টার্গেট করে নিজের মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি ইমপ্লিমেন্ট করবেন সেটা আইডেন্টিফাই করতে পারলেই দেখবেন কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সেটা বুঝতে পারবেন।

নিশ কী? 

বিজনেস এক্সপার্টরা নিশকে টার্গেট মার্কেটের সাবসেট বলে থাকেন। নিশ হচ্ছে নিজের টার্গেট মার্কেটকে এমনভাবে ন্যারো ডাউন করা যাতে করে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে আরো ইফেকটিভলি রিচ করা পসিবল হয়। অন্য কথায়, নিশ হচ্ছে আপনি এক্সাক্টলি যে সেক্টরে বিজনেস করছেন সেটা এবং একইসাথে স্পেসিফিকালি কাদের জন্য সার্ভিস প্রোভাইড করছেন এই দুটো বিষয় ডিফাইন করা যাতে করে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের কাছে রিচ আউট করা ইজি হয়ে যায়। 

অনেকেই মনে করে থাকেন যে অনলাইনবেজড বিজনেস, বিশেষ করে এখনকার জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসগুলোতে নিশ সিলেক্ট করার দরকার নেই, বরং ক্লায়েন্টদেরকে যত বেশি প্রকারের সার্ভিস অফার করতে পারবেন, ততই বোধহয় ভালো। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা এমন নয়। কেননা যখন ক্লায়েন্টদেরকে নিশ সিলেক্ট না করে, অর্থাৎ কোন ধরণের ক্লায়েন্টদেরকে কী কী সার্ভিস অফার করবেন সেটা ডিফাইন না করেই কাজ করতে যাওয়া হয়, তখন দেখা যায় টার্গেটেড অডিয়েন্সদের ফোকাসে রেখে ইফেকটিভলি মার্কেটিং করা পসিবল হয়না। তাই বলা যেতে পারে,বিজনেসে নিজের ফোকাস সঠিক এরিয়াতে রেখে যেন মার্কেটিং করা পসিবল হয় সেটার জন্যই আগে নিশ সিলেক্ট করে নিতে হয় ৷ পাশাপাশি এক্সপার্টরা বিজনেসে লংটার্মে সাকসেসফুল হতে হলে নিশ সিলেকশন করে নেয়ার ওপর সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন । 

আমি আগেই বলেছি নিশ সিলেক্ট করার সময়ে টার্গেট মার্কেট অর্থাৎ টার্গেট অডিয়েন্সকে ন্যারো ডাউন করে ফেলা হয়। নিশ সিলেক্টের সময় স্পেসিফিকালি যারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট তাদেরকে টার্গেটে রাখা হয়। একই সাথে এখানে একজন বিজনেসম্যান বা ফ্রিল্যান্সার কোন স্কিলে ফোকাস করছেন সেটাও উল্লেখ করা হয়। ও হ্যাঁ, স্কিল অফ ফোকাস হচ্ছে আপনি আপনার ক্লায়েন্টদেরকে এক্সাক্টলি কোন ধরণের সার্ভিস প্রোভাইড করছেন সেটা।

তাহলে চলুন এখন নিশের কিছু প্র‍্যাকটিকাল এক্সামপল জেনে নেই। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের ক্ষেত্রে নিশের কিছু এক্সামপল হতে পারে সোশাল মিডিয়া ম্যানেজারদের জন্য সোশাল মিডিয়া পোস্ট ডিজাইন করা, ই-কমার্স সেলারদের জন্য তাদের বিজনেস ব্র‍্যান্ডের লোগো ডিজাইন করা , ব্লগারদের জন্য বুক কভার ডিজাইন করা , ট্রাভেল এজেন্সির জন্য ইনভিটেশন কার্ড ডিজাইন করা ইত্যাদি। আবার একজন ভিডিও এডিটরের ক্ষেত্রে নিশ হতে পারে ইউটিউবারদের ভিডিও এডিট করা। অনেকেই রয়েছেন যারা রাইটিংয়ের সাথে যুক্ত, তাদের ক্ষেত্রে নিশ হতে পারে ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের অ্যাকাডেমিক রাইটিং করা, ব্লগারদের ওয়েবসাইটের জন্য ব্লগ লেখা ইত্যাদি। 

নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পেরেছেন যে নিশ কিভাবে সিলেক্ট করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয় জেনে রাখা উচিৎ। প্রথমটা হলো চাইলে একটা স্কিল অফ ফোকাস সিলেক্ট করে মাল্টিপল ক্যাটাগরির ক্লায়েন্টকে ফোকাস করতে পারেন। যেমনঃ একজন গ্রাফিক ডিজাইনার চাইলে একইসাথে ডিজিটাল এজেন্সি ওউনার এবং অনলাইন কোচদের জন্য ব্র‍্যান্ড ডিজাইনার হিসেবে সার্ভিস অফার করতে পারেন। আবার একইসাথে চাইলে একটার বেশি স্কিল অফ ফোকাস সিলেক্ট করে স্পেসিফিক ধরণের ক্লায়েন্টকে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট ধরে তাদেরকে সার্ভিস অফার করতে পারেন। যেমনঃ একজন গ্রাফিক ডিজাইনার চাইলে ই-কমার্স বিজনেস ওউনারদের জন্য লোগো ডিজাইন এবং সোশাল মিডিয়া পোস্ট ডিজাইনের সার্ভিস অফার করতে পারেন। এখানে ব্যাপারটা হচ্ছে হয় স্কিল অফ ফোকাস একটা রাখবেন নাহয় স্পেসিফিক একধরণের ক্লায়েন্টদের দিকে ফোকাস করবেন। কোনোভাবেই মাল্টিপল স্কিল অফ ফোকাস এবং মাল্টিপল ক্যাটাগরির ক্লায়েন্ট এ দুটা একসাথে সিলেক্ট করতে যাবেননা। 

এটুকুই ছিলো আইডিয়াল ক্লায়েন্ট, টার্গেট মার্কেট এবং নিশের কনসেপ্ট নিয়ে আজকের ডিসকাশন। আজকে আমি ট্রাই করেছি এই তিনটা টার্ম নিয়ে একদম বিস্তারিতভাবে ডিসকাস করতে যাতে করে সবাই এ তিনটার মধ্যকার পার্থক্য খুঁজে বের করতে পারেন। আমি লাস্টে সবাইকে বলতে চাই, যদি কোনো সেক্টরে সাকসেসফুল হতে চান, সবসময় সে সেক্টরটা সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জানার ট্রাই করবেন। দেখবেন এতে করে নিজের নলেজ বাড়বে এবং পাশাপাশি সাকসেসফুল হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যাবেন। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: