নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে কী করবেন?

আজকালকার যুগে যারা কারো আন্ডারে না থেকে নিজেরমতো করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান, তাদের অনেকেই বিভিন্ন রকমের বিজনেসের সাথে নিজেদের ইনভলভড করছেন। এই বিজনেসগুলোতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন বিজনেস ক্লায়েন্টরা। যদি একদম সহজভাবে বলতে যাই, ক্লায়েন্ট হচ্ছেন সেসব মানুষ যারা কোন একটা বিজনেস কোম্পানি থেকে নিজেদের চাহিদামতো প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিয়ে থাকেন। সুতরাং নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ছোট কিংবা বড় যেকোন বিজনেস যদি সাকসেসফুল করতে চান, সেখানে ক্লায়েন্টরা খুব ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করে থাকে। একারণে নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়ানোটা একজন বিজনেস ওউনারের অন্যতম রেসপনসিবিলিটি গুলোর মধ্যে একটা। তাই আজকের লেখায় আমি বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে হেল্পফুল এমন কিছু উপায় সম্পর্কে ডিসকাস করবো যেগুলো সম্পর্কে জানলে সবারই উপকার হবে। 

বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে যা করবেন

যখন ক্লায়েন্টদেরকে একটা বিজনেসের প্রতি ইন্টারেস্টেড করে তোলা যায়, তখন বিজনেসে প্রফিট জেনারেট করা অনেক ইজি হয়ে যায়। এর পাশাপাশি রিপিট ক্লায়েন্টদের সংখ্যা বাড়ে এবং সবার সামনে নিজের কোম্পানির পরিচিতি বাড়ানো যায়। মোটকথা একটা বিজনেসের গ্রোথ বাড়িয়ে বিজনেসটাকে সাকসেসফুল করার কঠিন কাজটা সহজ করে ফেলা যায়। তাই চলুন দেরি না করে জেনে আসা যাক কিভাবে নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে পারেন। 

১।কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট তা আইডেন্টিফাই করা 

সত্যি বলতে কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সেটা আইডেন্টিফাই না করে যদি নিজের বিজনেসের প্রতি সবার আকর্ষণ বাড়াতে চান তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। উল্টো নিজের সময় এবং শ্রম দুটিই জলে যাবে। তাই শুরুতেই যেটা করা উচিত তা হলো কারা সত্যিকার অর্থে বিজনেসের আইডিয়াল  ক্লায়েন্ট সেটা খুঁজে বের করে ফেলা। এতে করে যেমন টার্গেটেড অডিয়েন্সদের সহজে রিচ করা যায়, তেমনিভাবে তুলনামূলক কম খরচে নিজের বিজনেসের মার্কেটিং আরো ইফেকটিভলি করা পসিবল হয়। একারণে শুরুতেই নিজের বিজনেসে কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারে সেটা রিসার্চের মাধ্যমে খুঁজে বের করে ফেলুন। দেখবেন বাকি কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে। 

২।নিজের বিজনেসকে সঠিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করা

বিজনেসে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা হতে পারে সেটা খুঁজে বের করার পরের কাজটা হলো তাদের সামনে নিজের বিজনেসকে সঠিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করা।

ধরুন, রহিমের একটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস ওয়েবসাইট রয়েছে। সে যথেষ্ট স্কিলড একজন মানুষ। কিন্তু সে তার ওয়েবসাইটের ইনফরমেশনগুলো রেগুলার আপডেট করেনা। এমনকি তার অফার করা সার্ভিসের ডেসক্রিপশনটাও সে ডিটেইলে লেখেনি। এতে কী হবে জানেন? তার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ক্লায়েন্টরা কখনোই তার বিজনেসের প্রতি আকর্ষিত হবেনা। 

এমনটা যেন না ঘটে সেজন্যে সবসময় ক্লায়েন্টদের সামনে নিজের বিজনেসকে সঠিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করবেন। বিজনেস সোশাল মিডিয়াবেজড হোক কিংবা ওয়েবসাইট বেজড, সবসময় বিজনেস রিলেটেড ইনফরমেশনগুলো আপডেটেড রাখবেন। পাশাপাশি যে সার্ভিসগুলো অফার করবেন সেগুলো সম্পর্কে ডিটেইলে লিখবেন যাতে করে ক্লায়েন্টদের বুঝতে কোন অসুবিধা না হয়। সবসময় মনে রাখবেন, নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে কিভাবে বিজনেসকে ক্লায়েন্টদের সামনে রিপ্রেজেন্ট করছেন সেটা ভাইটাল রোল প্লে করে। 

৩।নিজে ট্রান্সপারেন্ট থাকা এবং অথেনটিক ইনফরমেশন প্রোভাইড করা

বিজনেসে টিকে থাকতে হলে এবং ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে চাইলে নিজের ট্রান্সপারেন্সি বজায় রাখার কোন অলটারনেটিভ নেই। তাই সবসময় নিজের এথিকস বজায় রাখার চেষ্টা করুন৷ সবসময় ক্লায়েন্টদের ট্রাস্ট গেইন করার জন্য কাজ করুন।কারণ শুধুমাত্র নিজের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস অফার করা বিজনেসের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, বরং বিজনেসে সবসময় ক্লায়েন্টদের ট্রাস্ট গেইন করার জন্য কাজ করতে হয়। একারণে কখনোই এমন কিছু করবেননা যাতে করে ক্লায়েন্টদের মনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। 

পাশাপাশি যখন কোন ক্লায়েন্ট প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস রিলেটেড কোনো প্রশ্ন করবে, তখন সবসময় অথেনটিক ইনফরমেশন প্রোভাইড করুন। নিজের সেল বাড়ানোর জন্য কখনোই কোন ভুলভাল ইনফরমেশন দেবেননা। বরং যেটা সত্যি সেটাই বলুন৷ দেখবেন ক্লায়েন্টদেরকে খুব সহজে নিজের বিজনেসের প্রতি ইন্টারেস্টেড করে তুলতে পারবেন। 

৪।ক্লায়েন্টদের এক্সপেকটেশন বোঝা 

কম্পিটিটিভ এই যুগে ক্লায়েন্টদের এক্সপেকটেশন না বুঝে বিজনেস করতে আসলে টিকে থাকা মুশকিল। কেননা ক্লায়েন্টরা কেমন ধরণের প্রোডাক্ট কিংনা সার্ভিস নিতে প্রেফার করবেন সেটাই যদি না বোঝেন তাহলে নিজের বিজনেসের প্রতি তাদের আকর্ষণ কখনোই বাড়াতে পারবেননা। তাই সবসময় তাদের এক্সপেকটেশন বোঝার চেষ্টা করুন। 

যেহেতু প্রতিটা ক্লায়েন্ট আলাদা তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের এক্সপেকটেশনও আলাদা হবে। একারণে বিজনেসে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস যেটাই অফার করে থাকুন না কেন, সেখানে পর্যাপ্ত ভ্যারিয়েশন রাখার ট্রাই করুন। এতে করে দেখবেন বেশিরভাগ ক্লায়েন্টের এক্সপেকটেশন ফুলফিল করতে পারবেন। 

৫।ক্লায়েন্টদের সাথে ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করা

ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে, কমিউনিকেশন ইজ দা কি। এই কথাটা নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আগ্রহী করে তুলতেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বিজনেসে বিভিন্নসময় ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করতে হয়। যখনই ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করতে যাবেন, চেষ্টা করবেন অ্যাকটিভ লিসেনিং প্র‍্যাকটিস করার অর্থাৎ তাদের প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার । এতে করে তাদের কাছে একজন ভালো শ্রোতা হিসেবে পরিচিতি পেতে পারবেন। 

ক্লায়েন্টদের সাথে ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করলে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস সম্পর্কে তাদের এক্সপেকটেশন এবং ডিমান্ড আরো ক্লিয়ারলি বুঝতে পারবেন। যেটা ইভেনচুয়ালি বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতেও হেল্পফুল হবে। পাশাপাশি যেকোন ব্যাপারে যদি তাদের ফিডব্যাক কিংবা পরামর্শ থাকে সেটাও জানতে পারবেন৷ সবচেয়ে বড় কথা, ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করলে ক্লায়েন্টরা নিজেদেরকে ভ্যালুয়েবল মনে করবে, যা আপনার বিজনেসের প্রতি তাদের আকর্ষণ আপনাআপনি ই বাড়িয়ে দেবে। 

৬।ক্লায়েন্টদের যেকোন বিষয়ে আপডেটেড রাখা 

একটা বিষয় সবসময় মনে রাখবেন, নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে তাদের সাথে যত বেশি কানেক্টেড থাকতে পারবেন ততই ভালো। একারণে বিজনেস রিলেটেড যেকোন বিষয়ে তাদেরকে আপডেটেড রাখুন। ধরুন, নিউ ইয়ার উপলক্ষে ক্লায়েন্টদের ডিসকাউন্ট দিলে কিংবা কোন একটা স্পেশাল অফার দিলে সেটা তাদেরকে জানান। এছাড়াও যদি বিজনেস রিলেটেড কোন ইভেন্ট থাকে কিংবা কোন নতুন খবর থাকে সেটাও তাদেরকে জানান। শুধু তাই ই নয়, যদি কোন সার্ভিস ডেলিভারি দিতে দেরি হয় সে ব্যাপারেও ক্লায়েন্টদেরকে অনেস্টলি জানান। দেখবেন এতে করে ক্লায়েন্টরা নিজেদেরকে ইম্পর্ট্যান্ট মনে করবে এবং বিজনেসের প্রতি তাদের আকর্ষণ বেড়ে যাবে। 

৭।কাস্টমার সার্ভিসকে প্রায়োরিটি দেয়া

কাস্টমার সার্ভিস প্রতিটা বিজনেসের এমন একটা পার্ট যেটা ছাড়া বলতে গেলে বিজনেস সাকসেসফুল হওয়া কখনোই পসিবল নয়। শুধু তাই নয়, উন্নত মানের কাস্টমার সার্ভিস পেলে ক্লায়েন্টদের স্যাটিসফ্যাকশন বাড়ে যা তাদেরকে কোন একটা বিজনেস কোম্পানি থেকে বারবার তাদের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিতে অনুপ্রাণিত করে। 

একারণে সবসময় নিজের বিজনেসে কাস্টমার সার্ভিসকে প্রায়োরিটি দিন। ক্লায়েন্টের যেকোনো সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সলভ করার ট্রাই করুন। তারা যদি কোন নেগেটিভ ফিডব্যাক দেয় সেগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনুন। তাদের জিজ্ঞেস করা প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো দিন। প্রতিটা ক্লায়েন্টকে সমানভাবে ট্রিট করুন। তারা সার্ভিস নিক কিংবা না নিক, প্রত্যেকের সাথে ধৈর্য্যসহকারে রেস্পেক্ট দিয়ে কথা বলুন। সবসময় মনে রাখবেন, যদি উন্নতমানের কাস্টমার সার্ভিস অফার করতে পারেন, তাহলে নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। 

৮।লয়াল ক্লায়েন্টদের জন্য বিভিন্ন অফার রাখা

সাধারণত যেকোন বিজনেসে তাদেরকেই লয়াল ক্লায়েন্ট বলা হয় যারা একাধিকবার প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নেন। নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে যারা লয়াল ক্লায়েন্ট তাদের জন্য বিভিন্ন এক্সাইটিং অফার রাখতে পারেন। কারণ অফার পেতে সবাই ভালোবাসে। আর যদি লয়াল ক্লায়েন্টদেরকে অফার দেন তাহলে তারা বাকিদেরকেও আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিতে রেকমেন্ড করবে। পাশাপাশি তারা নিজেরাও পারচেজ করবে। এতে করে যেমন সেল বাড়বে তেমনিভাবে নিজের বিজনেসের  ব্র‍্যান্ডিং ও হবে। 

৯।নিজের নলেজ শেয়ার করা 

বিজনেসে ক্লায়েন্টদের সাথে কানেকশন বাড়াতে নিজের বিভিন্ন নলেজ তাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন৷ যেমন : যদি নিজের স্পেসিফিক কোন স্কিল থাকে সেটা সম্পর্কে ছোট ছোট টিপস সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন। যখন ক্লায়েন্টরা দেখবে যে বিজনেসের প্রোমোশন ছাড়াও আপনি নিজের নলেজ তাদের সাথে শেয়ার করছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই বিজনেসের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়বে। তাই যদি নিজের কোন স্কিলবিষয়ক নলেজ থাকে সেগুলো ক্লায়েন্টদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেননা।  

১০।সঠিকভাবে আনহ্যাপি ক্লায়েন্টদের হ্যান্ডেল করা

যারা বিজনেস করেন, তাদেরকে মাঝেমধ্যে আনহ্যাপি ক্লায়েন্টদের হ্যান্ডেল করতে হয়। এটা প্রতিটা বিজনেসেই হয়ে থাকে। তবে অনেকেই রয়েছেন, যারা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিয়ে খুশি নন এমন ক্লায়েন্টদের সাথে মিসবিহেভ করেন। এতে করে কিন্তু বিজনেসে লাভের চেয়ে লস ই বেশি হয়। একারণে সবসময় আনহ্যাপি ক্লায়েন্টদেরকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করুন। তারা ঠিক কোন কারণে খুশি নন সেটা বুঝে সলভ করার চেষ্টা করুন। যদি সলভ করা পসিবল না হয়, অন্ততপক্ষে পোলাইটলি স্যরি বলুন৷ এতে করে ক্লায়েন্ট আনহ্যাপি হলেও বিজনেসের ওপর কোন নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বেনা এবং নিজের ইমেইজ ও ঠিক রাখতে পারবেন।

মূলত এগুলোই ছিলো নিজের বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ বাড়াতে সুপার ইফেকটিভ কিছু উপায় যেগুলো ফলো করে ছোট-বড় যেকোন বিজনেসে খুব অল্প সময়েই বেশি সংখ্যক ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল হবে। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: