লাইফে নিজেকে একটা সিকিওরড এবং সাকসেসফুল পজিশনে নিয়ে যেতে চাইলে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি যেটা খুব প্রয়োজন সেটা হচ্ছে প্যাশন। একজন মানুষ যে সেক্টরেই কাজ করুননা কেন, তিনি যদি সে সেক্টরের প্রতি প্যাশনেট হয়ে থাকেন, তাহলে দেখা যায় নিজের ডিজায়ার্ড সাকসেস অ্যাচিভ করার কঠিন পথ অনেকটাই ইজি হয়ে যায়। চলুন এখন কথা বলি এখনকার হাইপড ক্যারিয়ার ফিল্ড ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। ফ্রিল্যান্সিং কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা সেক্টর যেখানে একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রতিনিয়ত ক্লায়েন্টের বিভিন্ন রকম রিকয়ারমেন্ট নিয়ে ডিল করতে হয়। তাই এ সেক্টরে শাইন করতে হলে প্যাশনেট হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। তবে রিয়ালিটিতে দেখা যায়, বহু ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা এনাফ পটেনশিয়াল থাকার পরেও এ সেক্টরে প্যাশন হারিয়ে ফেলেন। ফলস্বরূপ দেখা যায় পরবর্তীতে তাদেরকে সাফার করতে হয়। একারণেই আমি আজকে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন ধরে রাখার ইফেকটিভ কিছু টিপস শেয়ার করবো যেগুলো ফলো করলে যারা এ ব্যাপারে স্ট্রাগল করছেন তাদের অনেক বেশি হেল্প হবে।
প্যাশন বলতে কী বোঝায়?
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন ধরে রাখবেন কিভাবে সেটা তো অবশ্যই জানাবো, কিন্তু তার আগে বলুন তো প্যাশন বলতে এক্সাক্টলি কী বোঝানো হয়? অনেকেই প্যাশন আর এক্সপার্টাইজ এই দুটাকে সেইম মনে করেন। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা মোটেও সেইম নয়। আমি ডিটেইলে বুঝিয়ে বলছি। ধরুন, একজন মানুষ কোনো একটা কাজ বছরের পর বছর ধরে করতে করতে এখন সেই কাজটা নিঁখুতভাবে করতে পারেন। তখন কিন্তু সেই মানুষটার ওই স্পেসিফিক কাজে যে এক্সপার্টাইজ সেটাকে প্যাশন বলা যাবেনা। আবার ধরুন কারো যদি কোনো ট্যালেন্ট থাকে সেটাকেও প্যাশন বলা যাবেনা, কারণ ট্যালেন্ট অনেকেরই থাকলেও সবাই কিন্তু নিজেদের সেই ট্যালেন্টের প্রতি প্যাশনেট থাকেননা।
তাহলে প্যাশন কী?
প্যাশন হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট কাজের প্রতি ভালোবাসা কাজ করা। এটাকে অন্যভাবে কাজের প্রতি এন্থুসিয়াজমও বলা যেতে পারে। কেউ যখন কোনো কাজের প্রতি প্যাশনেট থাকেন, তখন যেকোনো পরিস্থিতিতেই তিনি সে কাজ কমপ্লিট করতে রেডি থাকেন। তাকে কখনোই সে কাজ কমপ্লিট করার জন্য পুশ করতে হয়না। কেননা কেউ কোনো কাজে প্যাশনেট হলে সেই কাজটা করতে তিনি আপনাআপনি মোটিভেটেড ফিল করেন।
অর্থাৎ এই প্যাশন মানুষের মধ্যে একটা অন্যরকম পজিটিভ এনার্জি নিয়ে আসে, যেটার কারণে তখন আর কেউ একটা কাজ শেষ করতে কতটুকু সময় লাগবে সেটা নিয়ে ভাবেননা, তারা তাদের কাজ নিয়ে স্ট্রেসডও হননা। বরং তারা চিন্তা করেন কিভাবে নিজের ফোকাস ঠিক রেখে কাজটা নিঁখুতভাবে কমপ্লিট করতে পারবেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, জীবনে চলার পথে সাকসেসফুল হতে হলে এই প্যাশনের ভূমিকা অনেক।
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন থাকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ?
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের সম্ভাবনা সম্পর্কে তো এখন সবাই জানেন। সবার অলরেডি জানা থাকা এই সেক্টরের অন্যতম বড় অ্যাডভান্টেজগুলো হলো নিজের পছন্দমতো সময়ে রিমোটলি কাজ করতে পারা এবং স্কিল থাকলে অল্প সময়েই ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারা। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন কতটুকু ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করে সেটা কতজন জানেন?
ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমনঃ গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। জেনারেলি একজন ফ্রিল্যান্সার এই কাজের ধরণগুলো থেকে নিজের পছন্দমতো একটা ধরণ বেছে নিয়ে ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস অফার করেন। ক্লায়েন্টরা ফ্রিল্যান্সারদের কাছে নিজেদের ডিমান্ড তুলে ধরেন।
অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ক্লায়েন্টের ডিমান্ড কিছুটা ক্রিটিকাল বা কমপ্লিকেটেড থাকে যেটা ফুলফিল করার জন্য তুলনামূলক বেশি সময় এবং ইফোর্টের প্রয়োজন হয়। এখন যদি একজন ফ্রিল্যান্সার প্যাশনেট না হন, তাহলে কিন্তু তিনি ক্লায়েন্টের এ ধরণের ডিমান্ডগুলো ফুলফিল করতে গিয়ে স্ট্রেসড ফিল করবেন এবং কাজ করার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলবেন। তাই বলা যেতে পারে, প্যাশন না থাকলে এই সেক্টরে চ্যালেঞ্জ নিতে পারাটাও বেশি কঠিন। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো পজিশনে যেতে হলে প্রতিনিয়ত নিজের স্কিল আপডেট করতে হয়। প্যাশন থাকলে স্কিল আপডেট করাও ইজি হয়ে যায়, কেননা তখন নিজে থেকেই কাজ সম্পর্কে আরো বেশি জানার জন্য মোটিভেটেড ফিল করা যায়। সুতরাং এসব কারণে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন থাকা খুবই জরুরি।
কিভাবে নিজের প্যাশন ধরে রাখবেন?
যারা অলরেডি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশনেট তাদেরকে আমি লাকি ই বলবো। কেননা যখন প্যাশন থাকে, তখন একটা কাজ যত ক্রিটিকালই হোকনা কেন, সেটা কমপ্লিট করতে কেউ প্রেশারাইজড ফিল করেননা। বরং তারা আনন্দের সাথে কাজটা কমপ্লিট করেন৷ চলুন এখন জেনে আসা যাক কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন ধরে রাখতে পারেন।
- নিজের কাজগুলোকে অন্য সবকিছুর আগে প্রায়োরিটি দিন। মনে রাখবেন, আপনি ফ্রিল্যান্সিং করুন কিংবা কোনো বিজনেস, সেটাতে প্যাশনেট থাকার জন্য কাজকে প্রায়োরিটি দিতেই হবে। “যত বাধাই আসুকনা কেন, হাতের কাজগুলো আগে শেষ করতেই হবে ” – নিজের মাইন্ডসেট এমন রাখুন। এক্ষেত্রে যে কাজগুলো একটু ডিফিকাল্ট, সেগুলো আগে কমপ্লিট করতে পারেন। দেখবেন কঠিন কাজগুলো আগে করে ফেললে আরো বেশি প্যাশনেট ফিল করবেন।
- যারা ক্রিয়েটিভ সেক্টরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করেন, তাদের জন্য প্যাশন ধরে রাখতে কাজের প্রতি ইন্সপিরেশন ধরে রাখা জরুরি। একইসাথে এই সেক্টরে প্যাশনের সাথে কাজ করতে মোটিভেটেডও থাকতে হয়। তাই সবসময় ট্রাই করবেন যাতে কোনোভাবেই ইন্সপিরেশন আর মোটিভেশন এই দুটার ঘাটতি না হয়।
- ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন বজায় রাখার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো কমিটেড থাকা। কেননা যদি কমিটমেন্ট না থাকে, তাহলে কেউ প্যাশনেট থাকবেন সেটা এক্সপেক্টই করা যায়না। তাই সবসময় কাজের প্রতি নিজের যে কমিটমেন্ট সেটা ধরে রাখুন। ব্যাপারটা এমন নয় যে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে হবে। বরং একদিনে যেটুকু কাজ করবেন বলে ডিসাইড করবেন সেটুকু কাজই ঠিকমতো করুন। দেখবেন আর যাই হোক, প্যাশনের অভাব কখনোই হবেনা।
প্যাশন কমে গেলে সেটা কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন?
প্যাশনেটলি একটা কাজ করা খুব আনন্দের তাইনা? কিন্তু প্যাশন কমে যাওয়ার পর সেই সেইম কাজ করতে গেলেও কিন্তু সে কাজের প্রতি অনীহা কাজ করে এবং বিরক্তি চলে আসে। ফলস্বরূপ দেখা যায়, নিঁখুতভাবে সে কাজটা করা যায়না।
আসলে প্যাশন কমে যাওয়াকে আমি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা বলবোনা। আমরা সবাই মানুষ। আর ন্যাচারালিই সবসময় কোনো কাজের প্রতি সমানভাবে প্যাশন কাজ করেনা। স্পেশালি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে এটা খুবই কমন একটা ঘটনা। দেখা যায় ক্লায়েন্টদেরকে একই ধরণের সার্ভিস বারবার অফার করতে করতে ফ্রিল্যান্সারদের শুরুর দিকে যে প্যাশন কাজ করে সেটা অনেকটাই কমে যায়। যেকারণে তারা কাজের প্রতি হেলাফেলা করে পরবর্তীতে নিজেরাই সাফার করেন। তাহলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন কমে গেলে কী করবেন? চলুন এবার জেনে আসা যাক কিছু ইফেকটিভ টিপস যেগুলো আপনাদের প্যাশন পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হেল্পফুল হবে।
১। কাজ থেকে একটা ব্রেক নিন। আমি জানি যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাদেরকে প্রচুর বিজি থাকতে হয়৷ কাজের চাপেই অনেক সময় দেখা যায় নিজের প্যাশনটাই হারিয়ে যেতে বসে। এই অবস্থায় যদি কাজ থেকে ব্রেক নিয়ে কয়েকদিন রেস্ট করেন, তাহলে দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আবার প্যাশনেট ফিল করবেন।
২। যখনই মনে হবে প্যাশন কমে যাচ্ছে এবং লো ফিল করছেন, তখনই চিন্তা করবেন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার থেকে নিজের প্রাপ্তিগুলো কী কী। নিজের ফার্স্ট আর্নিং যেদিন হয়েছিলো সেদিনের এক্সাইমেন্টের কথা মনে করুন, ক্লায়েন্টদের দেয়া পজিটিভ রিভিউগুলোর কথা মনে করুন৷ হিসাব করার ট্রাই করুন কতজন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। যখন এভাবে নিজের অ্যাচিভমেন্টগুলো নিয়ে ভাববেন, দেখবেন আবার ফুল এনার্জিতে কাজ করার ইচ্ছা জেগে উঠবে।
৩। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যারা জড়িত তারা মোস্টলি নিজের বাসায় ওয়ার্কস্পেস ক্রিয়েট করে সেখান থেকে ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দেন। আমি বলবো প্যাশন ফিরিয়ে আনতে ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্টটাও একটা ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করে। তাই নিজের ওয়ার্কস্পেসটা রিঅর্গানাইজ করুন। লোকেশন চেঞ্জ করতে পারেন, নতুন কিছু ফার্নিচার আনতে পারেন, লাইটিং চেঞ্জ করতে পারেন৷ এছাড়াও যেটা করতে পারেন সেটা হচ্ছে পুরনো জিনিসপত্র যেগুলোর আর প্রয়োজন নেই, সেগুলো ফেলে দিতে পারেন। দেখবেন অটোমেটিকালি বেটার ফিল করবেন যা ধীরে ধীরে কাজের প্রতি প্যাশন ফিরিয়ে আনবে।
৪। যখন প্যাশন কমে যায়, তখন বেশিরভাগই মেন্টালি ডিপ্রেসড ফিল করেন৷ তখন এমন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হয় যিনি এই সিচুয়েশনটা ফিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আমি বলবো এমন কোনো ফ্রিল্যান্সার যিনি অনেকদিন ধরে এ সেক্টরে কাজ করছেন, তার সাথে ডিসকাস করে দেখতে পারেন। দেখবেন তখন তার সাথে নিজের প্রবলেম শেয়ার করে হালকা তো লাগবেই, পাশাপাশি এটা প্যাশন ফিরিয়ে আনতেও হেল্প করবে।
৫। এখন আমি যে টিপসটা দেবো সেটা কমবেশি সবার ক্ষেত্রেই খুব ভালো কাজ করে। সেটা হলো সার্ভিস দেয়ার বিনিময়ে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে যে রেটে পেমেন্ট নিয়ে থাকেন সেটা বাড়িয়ে দেয়া। যদি এমন হয় যে অনেকদিন ধরে ফ্রিল্যান্সিং করছেন, নিজের এক্সপার্টাইজ বেড়েছে কিন্তু আগেরমতো প্যাশন কাজ করছেনা, সেইক্ষেত্রে যদি পেমেন্ট রেট বাড়িয়ে দেন, তাহলে সেটা কাজ করার মোটিভেশান বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
৬। নিজের ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার পেছনের কারণটা নিয়ে ভাবুন। ঠিক কী কারণে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে এত ইফোর্ট দিচ্ছেন সেটা চিন্তা করুন৷ তারপর এই সেক্টরে কাজ করে জীবনে কী কী অ্যাচিভ করতে চান সেটা একটা কাগজে লিখে ফেলুন। দেখবেন আবার প্যাশনেটলি কাজ করার ইচ্ছা হবে। এরপর নিজের পোর্টফোলিও ইমপ্রুভ করার ট্রাই করুন। তারপর আবার কাজ করা স্টার্ট করুন। সে সময় যদি কোনো প্রবলেম ফেইস করেন, তাহলে অন্যদের সাহায্য নিন। যদি ক্লায়েন্ট বা প্রোজেক্টরিলেটেড কোনো প্রবলেম থাকে, সেগুলোও যত দ্রুত পারা যায় সলভ করুন৷ কেননা ঝুটঝামেলাবিহীন পরিবেশে কাজ করতে এমনিতেই ভালো লাগে। আর পাশাপাশি প্যাশন রিগেইন করাও পসিবল হয়৷
তো এটুকুই ছিলো ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্যাশন ধরে রাখার উপায় সংক্রান্ত আজকের ডিসকাশন। আমি পরিশেষে বলবো অন্যেরা কে কী করছে সেটার পেছনে না ছুটে নিজের প্যাশন কোথায় সেটা ফাইন্ড আউট করার ট্রাই করুন। যে কাজে প্যাশনেট সেটার পেছনে সময় দিন। আর সবসময় মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিংসহ যেকোন কাজে সাকসেসফুল হতে হলে প্যাশন যেমন ইম্পর্ট্যান্ট, একইসাথে ডিটারমিনেশন, হার্ডওয়ার্ক, স্কিল ইত্যাদিও ইম্পর্ট্যান্ট। কারণ এ সবকিছুর কম্বিনেশনেই দিনশেষে সাকসেস হাতের মুঠোয় ধরা দেয়।