ফ্রিল্যান্সিংয়ে আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট কিভাবে হ্যান্ডেল করা উচিৎ?

ক্লায়েন্ট স্যাটিসফ্যাকশন প্রতিটা ফ্রিল্যান্সারের টপ প্রায়োরিটিগুলোর মধ্যে একটা। একজন ফ্রিল্যান্সার যখন তার ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস প্রোভাইড করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার লক্ষ্য থাকে যেন তিনি তার ক্লায়েন্টদেরকে নিজের কাজ দিয়ে পুরোপুরি স্যাটিসফাই করতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, সর্বোচ্চ ইফোর্ট দেয়া সত্ত্বেও ক্লায়েন্টরা সার্ভিস নেয়ার পর সেটাতে স্যাটিসফাইড হননা। তারা হয়তো পুরো কাজটা আবার পুনরায় করে দিতে বলেন, অথবা কাজের স্পেসিফিক একটা অংশ নতুন করে করতে বলেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্লায়েন্ট এতটাই আনস্যাটিসফাইড হন যে তিনি পেমেন্ট পর্যন্ত করতে চাননা। আমি জানি এমন সিচুয়েশনে কোনো ফ্রিল্যান্সারই পড়তে চাননা। সত্যি বলতে, এরকম ঘটনা অনেকের সাথে হরহামেশাই ঘটে থাকে। কিন্তু এমন অনেকেই রয়েছেন, বিশেষ করে যারা নতুন তারা এরকম সিচুয়েশনে ক্লায়েন্টদেরকে কিভাবে হ্যান্ডেল করলে বেটার হয় সেটা ডিসাইড করতে পারেননা। যেটার ইমপ্যাক্ট পরবর্তীতে তাদের ক্যারিয়ারের ওপরে এসে পড়ে। তাই আজকে আমি সবার জন্য শেয়ার করবো কিভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট দেরকে হ্যান্ডেল করা উচিৎ। আশা করি পুরো আর্টিকেলটা সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। 

আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট কারা এবং কেন তাদেরকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করা প্রয়োজন?

মূলত ক্লায়েন্ট হলো তারা যারা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বিভিন্ন সার্ভিস নিয়ে থাকেন। যেমনঃ গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি রিলেটেড সার্ভিস। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের মূল উপার্জন এই ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দেয়ার মাধ্যমেই হয়ে থাকে৷ যারা এই সার্ভিস নিয়ে খুশি থাকেন তাদেরকে স্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট বলা হয়৷ স্যাটিসফাইড ক্লায়েন্টরা জেনারেলি রিপিট ক্লায়েন্ট হয়ে থাকেন। 

 

পক্ষান্তরে, আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট হলো সেসব ক্লায়েন্ট যারা ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে সার্ভিস নেয়ার পর সেসব সার্ভিস নিয়ে খুশি কিংবা স্যাটিসফাইড থাকেননা। তাদের হয়তো সে সার্ভিসের কোয়ালিটি আপ টু দা মার্ক লাগেনা আবার অনেকসময় সার্ভিসের কিছু অংশ তাদের চাহিদামতো হয়না।

আমার মতে, এমন টাইপের ক্লায়েন্ট পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যদি এ ক্লায়েন্টদের সাথে সঠিকভাবে ডিল করা না হয়, তাহলে কিন্তু বিভিন্নরকম প্রবলেম ফেইস করতে হতে পারে। যেমনঃ আমরা সবাই কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে রিপিট ক্লায়েন্ট বা আইডিয়াল ক্লায়েন্টের গুরুত্ব কতটুকু সেটা জানি। এখন ক্লায়েন্ট যদি কোনো কারণে সার্ভিস পেয়ে স্যাটিসফাইড না হন এবং এ ব্যাপারটা নিজে যদি সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে না পারেন, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে এই ক্লায়েন্ট আপনার কাছ থেকে আর সার্ভিস নিতে আসবেননা। শুধু তাই নয়, এই ক্লায়েন্টরা তাদের পরিচিতদের কাছে আপনাকে রিকমেন্ডও করবেনা। এতে করে কিন্তু ক্লায়েন্টের সংখ্যা কমে যাওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যাবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে টিকে থাকতে হলে আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট যারা রয়েছেন তাদেরকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। 

যারা সার্ভিস নিয়ে স্যাটিসফাইড নন তাদের কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন? 

আমি আগেই বলেছি,  অনেকসময় নিজেরদিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরেও ক্লায়েন্টের কাছ থেকে স্যাটিসফ্যাকশন আসেনা। যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদেরকে এই বিষয়টা তাদের ক্যারিয়ারের শুরুতেই মেনে নিতে হবে। কারণ যেটা আপনার কাছে পারফেক্ট মনে হচ্ছে সেটা ক্লায়েন্টদের কাছে ইমপারফেক্ট মনে হতেই পারে। কেননা প্রতিটা মানুষের কাছে পারফেকশনের ডেফিনিশন আলাদা। তাই ক্লায়েন্ট কেন সার্ভিস পেয়ে খুশি নন এটা নিয়ে মন খারাপ না করে কিভাবে এটা সলভ করা যায় সেদিকে ফোকাস করা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। তাই এখন আমরা আজকের আর্টিকেলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে কথা বলবো। সেটা হলো ঠিক কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করতে পারেন।  

আমার মতে যখন একজন ক্লায়েন্ট এটা ইনফর্ম করেন যে যিনি সার্ভিস পেয়ে খুশি নন,সেই মোমেন্টে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো শান্ত থাকা এবং মাথা ঠান্ডা রাখা। কখনোই ক্লায়েন্টের সার্ভিস পছন্দ হয়নি এমন কথা শুনে মাথা গরম করা যাবেনা। কারণ এটা একইসাথে অভদ্রতা এবং আনপ্রোফেশনাল। বরং যতটুকু সম্ভব ঠান্ডা মাথায় তার সাথে কমিউনিকেট করার ট্রাই করুন। পোলাইটলি নিজের ভুল স্বীকার করুন। এতে করে বুঝতে পারবেন ক্লায়েন্টের প্রবলেম ঠিক কোন জায়গায়। অনেকসময় এমন হয়, ক্লায়েন্টের ডিসস্যাটিসফ্যাকশন থেকেই নতুন কিছু শেখা যায়। তাই সবদিক বিবেচনা করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, মাথা গরম করে ক্লায়েন্টের সাথে কথা না বলাই বেটার। তাই ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলার আগে কিছুটা সময় নিন, এতে করে ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করা পসিবল হবে৷ 

ইফেকটিভ কমিউনিকেশনের কথা বলতেই আরেকটা বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি। সেটা হলো, অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্টদের সাথে তাদের প্রোভাইড করা সার্ভিসের ঠিক কোথায় প্রবলেম সেটা নিয়ে ডিটেইলে ডিসকাস করতে চাননা। এটা অনেক বড় একটা মিসটেক। কারণ যদি ডিটেইলে ক্লায়েন্টের সাথে ডিসকাস না করেন তাহলে কিন্তু দিনশেষে তাকে বেটার সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারবেননা। একারণেই সবসময় ট্রাই করবেন ফোন-কল, ভিডিওকল বা ই-মেইল – যে মাধ্যমেই কমিউনিকেট করুননা কেন, সেখানে যেন ঠিক কোথায় সমস্যা হয়েছে এবং কোন জায়গাগুলোতে রিভিশন দরকার সেগুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে নেয়া হয়। 

ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলার পর যখন ক্লিয়ার হয়ে যাবেন যে তাকে প্রোভাইড করা সার্ভিসের ঠিক কোথায় রিভিশন প্রয়োজন, তখন সে অনুযায়ী কাজ করা স্টার্ট করুন। এক্ষেত্রে যদি বাড়তি ফি ছাড়াই রিভাইসের কাজ করেন তাহলে সেটা করতে পারেন। অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা তাদের প্রোভাইড করা সার্ভিসের মধ্যে কোনোপ্রকার বাড়তি ফি ছাড়াই রিভিশনের কাজ করে থাকেন৷ নিজে যদি এভাবে সার্ভিস দিয়ে থাকেন তাহলে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি ফি ছাড়া রিভাইস করে তাকে পুনরায় ডেলিভারি দিতে পারেন৷ 

কিন্তু যদি এমন হয় যে ক্লায়েন্টের চাহিদামতো রিভাইস দিতে গেলে কাজ অনেক কমপ্লিকেটেড হয়ে যাবে কিংবা আপনি বাড়তি ফি ছাড়া রিভিশনের কাজ করেননা, তাহলে ক্লায়েন্টকে সে ব্যাপারে আগেই ইনফর্ম করুন। যাতে করে তিনি এই বাড়তি পেমেন্ট করার ব্যাপারে অবগত থাকেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি রিটেন ডকুমেন্টের মাধ্যমে এটা করতে পারেন। এছাড়াও ই-মেইল অথবা ফোনকলের মাধ্যমেও ক্লায়েন্টকে জানাতে পারেন। 

এরপর ক্লায়েন্টের চাহিদামতো রিভাইস করে ডেলিভারি দিয়ে তার কাছ থেকে ফিডব্যাক নিতে ভুলবেননা। সবসময় মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে ফিডব্যাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পজিটিভ ফিডব্যাক যেমন কাজের মোটিভেশন বাড়াতে হেল্প করে তেমনি নেগেটিভ ফিডব্যাক থেকেও অনেককিছু শেখা যায়। তাই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অবশ্যই ফিডব্যাক নেবেন৷ 

আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট ডিল করার ক্ষেত্রে আমি একটা কথা বলতে চাই।

সেটা হলো,একবার রিভাইস করে ক্লায়েন্টকে সার্ভিস পুনরায় ডেলিভারি দেয়ার পরও যদি ক্লায়েন্ট বারবার রিভাইস দিতে বলেন তাহলে মোটামুটি শিওর হয়ে নিতে হবে যে তিনি কোনোভাবেই এই সার্ভিস নিতে ইন্টারেস্টেড নন। সেক্ষেত্রে চাইলে তাকে তার পেমেন্টের কিছুটা অংশ রিফান্ড করতে পারেন যদি সেটা আপনার ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস পলিসিতে থাকে৷ আর যদি পেমেন্ট করা অ্যামাউন্ট নন-রিফান্ডেবল হয় সেটাও ক্লায়েন্টকে অবশ্যই জানিয়ে দিন৷ এতে করে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হবেনা এবং ব্যাপারটা ঝামেলাবিহীন ভাবে শেষ হবে। 

সুতরাং এটুকুই ছিলো আনস্যাটিসফাইড ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করা নিয়ে আজকের ডিসকাশন। আমি নতুন-পুরাতন দুই ধরণের ফ্রিলান্সারদেরকেই বলতে চাই, এ ধরণের সিচুয়েশন ফেইস করলে কখনোই নিজের স্কিল নিয়ে প্রশ্ন তুলবেননা বা নিজেকে অন্য ফ্রিল্যান্সারদের তুলনায় কম স্কিলড মনে করবেননা। মনে রাখবেন, মানুষই ভুল করে। আর প্রতিটা ভুল থেকেই নতুন কিছু শেখা যায়। তারাই লাইফে সাকসেসফুল হয় যারা নিজের ভুল থেকে কিছু না কিছু শিখতে পারে। তাই ক্লায়েন্ট আপনার সার্ভিসের কোয়ালিটিতে খুশি না হলে সেটাকে একটা লার্নিং অপোরচুনিটি হিসাবে দেখুন৷ নিজেকে আরো বেশি ডেভেলপ করার চেষ্টা করুন। দেখবেন দিনশেষে নিজের স্কিল যেমন ডেভেলপ হবে, তেমনিভাবে নিজের বিজনেসের গ্রোথও বাড়াতে পারবেন৷ 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: