ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর টিপস

একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দিতে হয়। এক্ষেত্রে কমিউনিকেট করার ল্যাংগুয়েজ হিসেবে ইংলিশকেই বেছে নেয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা এ ব্যাপারটায় বেশ স্ট্রাগল করে থাকেন ৷ সবসময় বাকিদের সাথে বাংলায় কমিউনিকেট করায় এবং ইংলিশের ভিত্তি দূর্বল থাকায় তারা ক্লায়েন্টদের সাথে ঠিকমতো কথা বলতে পারেননা। এর ফলে দেখা যায়, তারা ক্লায়েন্টদের রিকয়ারমেন্ট বুঝতে পারেননা এবং পরবর্তীতে তাদেরকে বেস্ট সার্ভিস দিতে পারেননা। অথচ একটু প্র‍্যাকটিস করলেই ইংলিশে পারদর্শী হওয়া পসিবল। আজকের এই লেখায় আমি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এই টিপসগুলো ফলো করলে একজন ফ্রিল্যান্সারকেও আর ক্লায়েন্টদের সাথে ইংলিশে কথা বলতে অসুবিধা ফেস করতে হবেনা। 

ফ্রিল্যান্সারদের ইংলিশে স্কিলড হতে হবে কেন? 

ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে শুরুতেই যেকোনো সেক্টরে স্কিল ডেভেলপ করে তারপর কাজ শুরু করাকেই সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেয়া হয়। কিন্তু এ সেক্টরে ভালো করতে হলে যে ইংলিশে ভালো দখল রাখতে হয় -এ ব্যাপারটাকে কেউ শুরুর দিকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। এটা একদমই ঠিক নয়। 

একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন। সেটা হলো ফ্রিল্যান্সিং একটা ইন্টারন্যাশনাল পেশা। এখানে ক্লায়েন্টরা কাউকে হায়ার করার সময় তার স্কিল দেখেন। তাই একজন স্কিলড ফ্রিল্যান্সারকে যেকোনো সময় যেকোনো দেশে বসবাসকারী ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিতে হয়। আর এই সার্ভিস দেয়ার জন্য কমিউনিকেট করার ল্যাংগুয়েজ হিসেবে মূলত ইংলিশকেই প্রেফার করা হয়।

কারণ বেশিরভাগ দেশের ক্লায়েন্টরাই ইংলিশ জানেন, তাই এই ল্যাংগুয়েজেই তারা কমিউনিকেট করতে কমফোর্টেবল। একারণেই যখন কেউ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে আসেন, তখন তাকে নিজের সেক্টরে এক্সপার্ট হওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই ইংলিশে স্কিলড হতে হয়। ইংলিশে স্কিলড ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই ক্লায়েন্টের ডিমান্ড বুঝে তাদেরকে সার্ভিস দিতে পারেন। আর ক্লায়েন্টরাও নির্দ্বিধায় কথা বলার স্কোপ পান। 

ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর টিপস

আমি জানি একজন ফ্রিল্যান্সার দিনের বড় একটা সময় ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দেয়ার পেছনে ব্যয় করেন। তাই ইংলিশ শেখার জন্য সময় দেয়াটা একটু কঠিনই বটে। কিন্তু ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর ক্ষেত্রে রেগুলার প্র‍্যাকটিসের কোনো বিকল্প নেই। তাই এখন আমি যে টিপসগুলো দেবো সেগুলো নিয়ম করে প্রতিদিন প্র‍্যাকটিস করবেন৷ তাহলেই ভালো আউটপুট পেতে পারবেন। 

টিপস ০১

বাইরের দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে ইফেকটিভলি কমিউনিকেট করার জন্য নিজের ইংলিশ ভোকাবুলারি স্ট্রং থাকা খুবই প্রয়োজন। সবসময় মনে রাখবেন, যিনি যত বেশি ইংলিশ ওয়ার্ড জানবেন, তিনি তত সুন্দরভাবে ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলতে পারবেন। নিজের ভোকাবুলারি বাড়াতে প্রতিদিন অন্তত একটা করে নতুন ওয়ার্ড শেখার ট্রাই করুন। একটার বেশি পারলে তো খুবই ভালো, তবে প্রতিদিন অন্তত যেন একটা ওয়ার্ড শেখা হয় তা নিশ্চিত করুন। 

ভোকাবুলারি বাড়ানোর জন্য প্রথমে ভালো একটা ডিকশনারি কিনুন। সেখান থেকে প্রতিদিন একটা করে নতুন ওয়ার্ড অর্থসহ শিখুন এবং এই ওয়ার্ড দিয়ে কিভাবে বাক্য তৈরি করা যায় সেটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করুন। এতে করে যে লাভটা হবে তা হলো প্রতিদিন নতুন ওয়ার্ড শেখার পাশাপাশি কিভাবে সেগুলো রিয়েল লাইফে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন সেটাও বুঝতে পারবেন। 

যদি ডিকশনারি কেনা পসিবল না হয়, তাহলে হাতে থাকা স্মার্টফোনটা কাজে লাগিয়ে ফেলুন। প্লে-স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে যেকোনো একটা ডিকশনারি ইনস্টল করে ফেলুন৷ এতে করে নিজের সুবিধাজনক যেকোনো সময়ে  ইংলিশ স্কিল বাড়াতে পারবেন। 

টিপস ০২

বর্তমানে ইংলিশ শেখার জন্য বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে নিজের স্কিল ডেভেলপের সুযোগ রয়েছে। এসব চ্যানেল বিগিনার ফ্রেন্ডলি হওয়ায় একদম শুরু থেকে ইংলিশ শেখানো হয়। এসব ইউটিউব ভিডিওতে গ্রামার, ভোকাবুলারি, রাইটিং এবং স্পোকেন ইংলিশ শেখানো হয়। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্টদেরকে ইংলিশে মেসেজ বা ইমেইল দেয়ার সময় গ্রামার নিয়ে আর ক্লায়েন্টদের সাথে ফোনকল বা ভিডিওকলে কথা বলার সময় স্পোকেন ইংলিশ নিয়ে স্ট্রাগল করে থাকেন। এ দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে ইউটিউবের ভিডিও টিউটোরিয়ালের হেল্প নিতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের রুটিনে একটা নির্দিষ্ট সময় ভিডিও দেখার জন্য বরাদ্দ রাখুন। 

টিপস ০৩

নিজের পছন্দমতো যেকোনো অনলাইন বা অফলাইন ইংলিশ কোর্স করতে পারেন। যেহেতু এ কোর্সগুলো টাকার বিনিময়ে করতে হয়, সেজন্যে এ কোর্সগুলো কমপ্লিট করার জন্য আলাদা মোটিভেশন কাজ করে। যদি এসব কোর্সের মডিউল ইন্টারেস্টিং হয় এবং প্র‍্যাকটিসের সুযোগ থাকে, তাহলে সহজেই নিজের স্কিল ডেভেলপ করা পসিবল হয়। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন এবং অফলাইন দুটি মাধ্যমেই হাই কোয়ালিটির অনলাইন কোর্স অফার করছে। সেগুলো নিয়ে রিসার্চ করে নিজের জন্য পারফেক্ট কোর্স খুঁজে বের করুন। 

তবে এক্ষেত্রে আমার সাজেশন থাকবে, যেসব কোর্সে মেন্টরের সাথে সরাসরি কমিউনিকেট করার সুযোগ রয়েছে, সেগুলোকে প্রায়োরিটি দিতে। কেননা অনেক সময় দেখা যায়, ফ্রিল্যান্সাররা নিজেরা অনেককিছু বুঝতে পারেননা। তখন যদি মেন্টরের সাথে কথা বলে নেয়া যায়, তাহলে ইনস্ট্যান্টলি নিজের কনফিউশান ক্লিয়ার করে নিতে পারবেন। 

টিপস ০৪ 

ইংলিশ স্কিল ডেভেলপ করতে ওয়েব ব্লগ বা নিউজপেপার আর্টিকেল পড়তে পারেন। যদি বাড়িতে ইংলিশ নিউজপেপার রাখেন, তাহলে সেটার নিউজগুলো পড়তে পারেন। এতে নিজের গ্রামার স্কিল বাড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন ওয়ার্ড শিখতে পারবেন। চাইলে এসব নিউজ পেপারের ওয়েব ভার্সনও পড়তে পারেন। 

এগুলো ছাড়াও আমি সাজেস্ট করবো ইংলিশে লেখা ওয়েবসাইট ব্লগ পড়ার জন্য। এর কারণ হলো এসব ব্লগ সহজবোধ্য ল্যাংগুয়েজ টোন ইউজ করে লেখা হয়, যাতে করে সবাই বুঝতে পারে। একারণেই যদি নিয়মিত ব্লগ পড়ার অভ্যাস করেন, তাহলে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বুঝতে পারবেন ঠিক কিভাবে ক্লায়েন্টদেরকে গুছিয়ে ইংলিশে মেসেজ কিংবা ইমেইল সেন্ড করা যেতে পারে।এটা একদিকে যেমন কমিউনিকেশন সহজ করবে, তেমনিভাবে দেখবেন ধীরে ধীরে নিজের কনফিডেন্সও বাড়বে। 

তবে নিউজপেপার বা ব্লগ যেটাই পড়ুন, ট্রাই করবেন টুকটাক লেখার অভ্যাস করার। ধরুন, ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড একটা ব্লগ পড়লেন। পড়ার পর সেই ব্লগ থেকে কী জানতে পারলেন সেটা সামারি আকারে নোটপ্যাডে লিখে রাখুন। এই টিপসটা ছোট্ট হলেও ইংলিশ স্কিল ডেভেলপ করতে দারুণ ইফেকটিভ। 

টিপস ০৫ 

স্পোকেন ইংলিশ যেন সবার কাছেই একটা ভীতিকর ব্যাপার। অনেক ফ্রিল্যান্সার মেসেজে সুন্দরভাবে ইংলিশে কমিউনিকেট করতে পারলেও ফোনকলে বা ভিডিওকলে ক্লায়েন্টদের সাথে ইংলিশে কথা বলতে নার্ভাস ফিল করেন। স্পোকেন ইংলিশের এই নার্ভাসনেস কাটাতে সময় করে বিভিন্ন ইংলিশ সিরিজ বা মুভি দেখুন। মুভি-সিরিজ দেখার মাধ্যমে কিভাবে ইংলিশে রিয়েল লাইফ কনভার্সেশন করা হয় তা বোঝা যায়। এর ফলে আইডিয়া পাবেন যে ঠিক কিভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে ইংলিশে কথা বলতে হবে৷ 

তবে শুধুমাত্র মুভি কিংবা সিরিজ দেখলেই হবেনা, স্কিল বাড়াতে নিজের ফ্রেন্ড অথবা ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে ইংলিশে কথা বলা প্র‍্যাকটিস করুন। হ্যাঁ শুরুতে হয়তো একটু জড়তা কাজ হবে, গ্রামারটিক্যাল মিসটেক হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তবে ডিমোটিভেটেড হলে চলবেনা। নিয়মিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সিচুয়েশনে কিভাবে কথা বলবেন সেটা প্র‍্যাকটিস করুন৷ এতে করে দেখবেন আর আগের মতো নার্ভাস লাগবেনা। 

এগুলোই ছিলো ইংলিশ স্কিল বাড়ানোর জন্য কিছু সুপার ইফেকটিভ টিপস। আমি ট্রাই করেছি যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদেরকে ফোকাস করে টিপসগুলো দিতে যেন তারা নিজের কাজের রুটিনের সাথে অ্যাডজাস্ট করে আমার দেয়া টিপসগুলো ফলো করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ইংলিশ স্কিল বাড়ানো কিন্তু কোনোভাবেই একরাতের কাজ নয়। টিপস ফলো করার সাথে সাথে কখনোই কেউ ইংলিশে এক্সপার্ট হয়ে যেতে পারেননা। তাই ধৈর্য্যের সাথে প্র‍্যাকটিস করুন। এসময় এটাও মাথায় রাখতে হবে, যেহেতু ইংলিশ আমাদের ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ নয় সুতরাং এই ভাষায় কিছুটা দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই যদি শুরুতেই নিজের ইমপ্রুভমেন্ট না দেখেন, কোনোভাবেই মন খারাপ করে পিছিয়ে আসবেননা। বরং ট্রাই করতে থাকুন, দেখবেন ধীরে ধীরে ইংলিশে নিজের ইমপ্রুভমেন্ট দেখতে শুরু করবেন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: