আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার স্টেপস

কেউ যখন অনেক প্ল্যানিংয়ের পর সাহস করে একটা বিজনেস শুরু করেন, হোক সেটা অনলাইন বিজনেস কিংবা অফলাইন বিজনেস, তার মাথায় যে চিন্তাটা অনবরত ঘুরপাক খেতে থাকে সেটা হলো তিনি কিভাবে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে পাবেন এবং তাদের আকর্ষণ করতে পারবেন। সাধারণত আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার কাজটা যারা নতুন বিজনেস শুরু করেছেন তাদেরকে প্রতিনিয়তই করতে হয় । সত্যি বলতে যেকোন বিজনেসের শুরুর দিকে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার কাজটাকে বেশ কঠিন মনে হলেও এ কাজটাকে সহজ করে দিতে পারে কিছু সিম্পল টেকনিক। আজকের লেখায় আমি শেয়ার করবো যেকোন বিজনেসে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার স্টেপস সম্পর্কে যেগুলো ফলো করলে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার কাজটাকে কারোই আর অতটা কঠিন বলে মনে হবেনা। 

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা ?

আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার স্টেপস সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে আসি আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা সে সম্পর্কে । প্রতিটা বিজনেসের সাকসেসের পেছনেই আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের অবদান থাকে। 

ক্লায়েন্ট হলো যারা কোন কোম্পানি থেকে সে কোম্পানির প্রোডাক্ট কিনে থাকে অথবা সার্ভিস নিয়ে থাকে। তাহলে একজন ক্লায়েন্ট এবং আইডিয়াল ক্লায়েন্টের মধ্যের পার্থক্য কোথায়? একজন সাধারণ ক্লায়েন্ট একটা কোম্পানি থেকে  কোন প্রোডাক্ট একবারই কেনেন। কিন্তু একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট নিজের যেকোন প্রয়োজনে একটা নির্দিষ্ট কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকেই ট্রাস্ট করেন । 

তাই একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সাধারণত কোন কোম্পানির একটা প্রোডাক্ট ফ্রিকুয়েন্টলি কিনে থাকেন বা কোন একটা স্পেসিফিক সার্ভিস বারবার নিয়ে থাকেন ৷ শুধু তাই নয়, তিনি এ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিতে তার আশেপাশের মানুষকেও রিকমেন্ড করেন। অর্থাৎ,সহজ ভাষায় একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কোম্পানির প্রতি সবসময় লয়াল থাকেন। তাই বলা যায়, নিজের বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতে, মানুষের কাছে পরিচিতি বাড়াতে একজন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট অত্যন্ত মূল্যবান। 

আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার স্টেপস

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা কেন প্রয়োজন? 

যেকোন বিজনেসে সাকসেসফুল হতে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করাকে অন্যতম প্রধান ডিউটি হিসাবে কাউন্ট করা হয়। কারণ আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করার মাধ্যমেই বুঝতে পারবেন বিজনেস মার্কেটিং সঠিকভাবে করতে হলে ঠিক কোথায় ফোকাস করা প্রয়োজন।পাশাপাশি আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে কিভাবে নিজের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস প্রমোট করলে তা সবচেয়ে বেশি রিচ পাবে সেটাও বুঝতে পারবেন। এছাড়াও আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করার আরেকটা মেইন বেনিফিট হলো ক্লায়েন্টদের চাহিদা বুঝতে পারা এবং তারা কোন ধরণের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস বেশি চায় সেটা বুঝতে পারা ।  

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে পেলে ইফেক্টিভভাবে বিজনেস মার্কেটিং করা যায়। যার ফলে মার্কেটিংয়ের পেছনে অতিরিক্ত টাকা কিংবা সময় কোনোটাই দিতে হয়না। আর ইফেক্টিভ বিজনেস মার্কেটিং করতে পারলে বিজনেসের গ্রোথ হয় ,নেটওয়ার্কিং বাড়ে এবং ইভেনচুয়ালি বিজনেসে সাকসেস পাওয়া পসিবল হয়। সুতরাং নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন একটা বিজনেসকে সাকসেসফুল করতে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে! 

আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার টিপস 

অনেকেই মনে করেন, আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করা বুঝি খুব কঠিন কাজ। কিন্তু আসলে যদি সবাই কিছু সহজ স্টেপ ফলো করেন তাহলেই দেখবেন নিজেদের আইডিয়াল ক্লায়েন্টরা ইমপ্রেসড হয়ে যাচ্ছে। তাই চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই  আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার স্টেপস গুলো যেগুলো সবার জন্যই হেল্পফুল হবে । 

টিপস ০১ : কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট তা ডিসাইড করা 

আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার স্টেপস নিয়ে বলতে গেলে একদম শুরুরদিকের মেইন একটা স্টেপ হলো কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট তা ডিসাইড করা। কারণ আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা তা ডিসাইড করার আগ পর্যন্ত যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, তাদেরকে আকর্ষণ করা যাবেনা। 

এই স্টেপে অনেকে একটা বড় ভুল করে থাকেন। সেটা হলো সব ক্লায়েন্টকেই আইডিয়াল ক্লায়েন্ট ভেবে টার্গেট করে বসেন। কিন্তু এতে ভালো তো হয় ই না বরং হিতে বিপরীত হয়৷ সবসময় মনে রাখবেন, সবাইকে টার্গেট করা আর কাউকে না করার মধ্যে বেসিক কোন ডিফারেন্স নেই। তাই কখনোই সব ক্লায়েন্টকে আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হিসেবে টার্গেট করতে যাবেননা।

বরং কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারে সে সম্পর্কে আগে ঠিকমতো রিসার্চ করুন। শুরুতেই চিন্তা করুন কেমন ধরণের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারলে আপনার ভালো লাগবে। তারপর দেখুন কোন ক্লায়েন্ট কি করে, তারা কেমন ধরণের প্রোডাক্ট প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পছন্দ করে । 

এভাবে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে রিসার্চ করার পর কারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট হতে পারে সেই ব্যাপারে ধারণা পেয়ে যাবেন। এরপর সে মানুষগুলোর সাথে সোশাল মিডিয়া অথবা ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের সাথে কথা বলুন । 

টিপস ০২ : অফারগুলো ক্লিয়ার এবং সিম্পল রাখা 

ধরুন একটা কোম্পানি অনেক ধরণের সার্ভিস অফার করছে। তারা ক্লায়েন্টদের সামনে প্রতিটা অফার সম্পর্কে এত বেশি ডিটেইলে লিখলো যে শেষমেশ ক্লায়েন্ট কোন অফারটা নিবে এটা বুঝতে না পেরে কনফিউজড হয়ে ওই কোম্পানির কোন অফারই একসেপ্ট করলোনা। এই ঘটনাটা কিন্তু খুবই কমন একটা ঘটনা। 

তাই আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে চাইলে অবশ্যই যে অফারগুলো দিচ্ছেন সেগুলো ক্লিয়ারলি তুলে ধরবেন এবং লেখার ভাষা যতটা সিম্পল হয় ততটাই ভালো। পাশাপাশি  অফারগুলো সম্পর্কে যখন লিখবেন তখন আইডিয়াল ক্লায়েন্টরা কেমন ধরণের সার্ভিস চাচ্ছে এটা মাথায় রাখবেন যেন অফারগুলো দেখার পর তারা সেগুলো অ্যাকসেপ্ট করতে আগ্রহী হয়। 

মনে রাখবেন, যখনই ক্লায়েন্ট কনফিউজড হয়ে যাবে তখনই তার আপনার থেকে সার্ভিস নেয়ার বিষয়টা অনিশ্চিত হয়ে যাবে। এটা যেন না হয় সেজন্যে সবসময় নিজের কোম্পানির দেয়া অফারগুলো যতটা সম্ভব ক্লিয়ার এবং সিম্পল রাখবেন। দেখবেন এতে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। 

টিপস ০৩ : নিজের সার্ভিসের প্রাইসিং সঠিকভাবে করা 

যারা বিজনেসের সাথে যুক্ত আছেন তারা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের প্রাইসিং করার গুরুত্ব সম্পর্কে খুব ভালোমতো জানলেও হয়তো এটা জানেননা যে নিজের সার্ভিসের প্রাইসিং ঠিকমতো করা আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে কতটা কাজে লাগে। 

যখন সার্ভিসের প্রাইসিং করতে যাবেন, তখন এমনভাবে করবেন যেন এমন ক্লায়েন্ট পান যারা বিজনেসের জন্য ইনভেস্টমেন্ট হতে পারে। যদি সার্ভিসের প্রাইসিং অনেক লো রাখেন, তাহলে দেখবেন এমন ক্লায়েন্ট পাবেন যারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট তো নয় ই , বরং তারা এই লো প্রাইসিংয়েও বারগেইনিং করবে। তাই যদি নিজের সার্ভিসের ভ্যালু ঠিক রেখে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে চান, তাহলে সার্ভিসের স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে প্রাইসিং করুন৷ দেখবেন খুব দ্রুতই আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে পারবেন। 

টিপস ০৪ : আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সম্পর্কে অডিয়েন্সদের জানানো 

নিজের প্রশংসা শুনতে তো সবাই পছন্দ করে। এই প্রশংসা করাই কিন্তু হতে পারে আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার উপায়। তাই আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের ব্যাপারে নিজের অডিয়েন্সদের জানান। 

এজন্যে কিন্তু এলাকায় এলাকায় মাইকিং করার দরকার নেই৷ নিজের কোম্পানির সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল যেমন : ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে  যারা ফলোয়ার কিংবা অডিয়েন্স হিসাবে আছেন তাদেরকে নিজের আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের সম্পর্কে জানান। ফেসবুকের পোস্টে জানাতে পারেন, কিংবা ইন্সটাগ্রামের স্টোরিতেও জানাতে পারেন। সোশাল মিডিয়ায় আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের পরিচয় দিয়ে নিজের কোম্পানির প্রতি লয়াল থাকার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দিন, প্রতিশ্রুতি দিন সামনে আরো ভালোমতো সার্ভিস দেয়ার।

আইডিয়াল ক্লায়েন্ট সম্পর্কে অডিয়েন্সদের জানানোর এই স্টেপটা অনেকেই এড়িয়ে যান। কিন্তু যদি এই স্টেপটা ফলো করেন, দেখবেন ক্লায়েন্টরা খুশি হবে। আর এর ফলে তাদের আকর্ষণ করাটাও অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। 

এ চারটা স্টেপ আইডিয়াল ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার জন্য খুবই ইফেকটিভ। যারা নতুন বিজনেস শুরু করেছেন তারা আইডিয়াল ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে এবং তাদের ইম্প্রেস করতে বিভিন্নভাবে স্ট্রাগল করে থাকেন। তাই যারা বিজনেসে বিগিনার তারা এ স্টেপগুলো একবার ফলো করে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি হতাশ হতে হবেনা। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: