কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট

” সার্ভিস তো ভালো দিতে পারবো। কিন্তু ক্লায়েন্ট পাবো তো? ” “ক্লায়েন্টদের সাথে কিভাবে কনটাক্ট করবো? ” ” কিভাবে ক্লায়েন্টদের রেসপন্স বাড়াবো? ” কথাগুলো পরিচিত লাগছেনা? যারা ফ্রিল্যান্সিং কিংবা বিজনেস জগতে একদমই নতুন, তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে সবসময়ই কেমন যেন একটা কনফিউশানে ভুগতে থাকেন । আসলে তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননা কিভাবে অ্যাডের পেছনে বাড়তি টাকা খরচ না ক্লায়েন্টদের সাথে কন্টাক্ট করতে পারবেন এবং তাদের থেকে পজিটিভ রেসপন্স পেতে পারবেন।এক্ষেত্রে কোল্ড ইমেইলের ব্যবহার এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দারুণ একটা মাধ্যম হতে পারে। তাই আজকের লেখায় আমি কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পেতে যা করবেন সেটা নিয়ে ডিটেইলে আলোচনা করবো । 

কোল্ড ইমেইল কী? 

আমি যেকোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানোর আগে সে বিষয়টা সম্পর্কে সবাইকে একটা বেসিক ধারণা দিতে পছন্দ করি। তাই কিভাবে কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পাবেন তা জানার আগে আগে চলুন জেনে নেই কোল্ড ইমেইল কী। সোজা বাংলায় কোল্ড ইমেইল হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে একাধিক অপরিচিত মানুষকে ইমেইল পাঠানো।এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হলো, কেনইবা অপরিচিত মানুষকে ইমেইল পাঠাবেন? তাহলে শুনুন, গোটা পৃথিবীতে ব্যবসায়ীরা নিজের বিজনেসে সেল বাড়াতে , মার্কেটাররা নিজেদের ব্র‍্যান্ড সম্পর্কে সবাইকে জানাতে,  ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের সার্ভিস সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে কোল্ড ইমেইল ব্যবহার করে থাকেন। 

কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পেতে যা করবেন

কোল্ড ইমেইলের জনপ্রিয়তার কারণ 

যত দিন যাচ্ছে ততই কোল্ড ইমেইল সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ –

কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে একজন বিজনেসম্যান কোন ক্যাটাগরির ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে চান তা নিজেই চয়েস করার সুযোগ পান। যেটা ক্লায়েন্টকে ভালো মানের সার্ভিস প্রোভাইড করতে অনেকটা হেল্প করে। কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো ক্লায়েন্ট তো পাওয়া যায়ই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিংও বাড়ে । একারণে ফ্রিল্যান্সাররা এবং যারা বিজনেস করেন তারা ভালো ভালো ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য কোল্ড ইমেইলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। 

কোল্ড ইমেইলের ক্ষেত্রে সঠিক প্রোস্পেক্ট খুঁজে পাওয়ার ওপরেই ডিপেন্ড করে একটা বিজনেস সাকসেসফুল হবে নাকি হবেনা । এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো, প্রোস্পেক্ট হলো সেসব কোম্পানি কিংবা অরগানাইজেশান যেখানকার এমপ্লয়িরাই একটা বিজনেস কোম্পানির সম্ভাব্য ফিউচার ক্লায়েন্ট ৷ যদি সঠিকভাবে প্রোস্পেক্ট খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির সার্ভিস দেয়ার জন্য যতটুকু স্যালারি চাইবেন, সে রেটেই স্যালারি পাবেন। কোল্ড ইমেইল পাঠানোর প্রসেস খুবই সহজ । শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশন এবং ইমেইল অ্যাড্রেস থাকলে প্রতিসপ্তাহেই ইমেইল পাঠানো যায় । 

কিভাবে কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজবেন? 

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যদি সঠিকভাবে কোল্ড ইমেইলের ব্যবহার করেন, তাহলে সঠিক ক্লায়েন্ট খুঁজে পেয়ে সাকসেসফুল হওয়ার পাওয়ার পথটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তাই এখন আমি জানাবো কিভাবে কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাবেন। 

প্রোস্পেক্ট খুঁজে বের করা 

একটা কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইনকে তখনই সফল ক্যাম্পেইন বলা যায় যখন সঠিক প্রোস্পেক্ট বাছাই করতে পারবেন। এখন যাদের এ ব্যাপারে আগে থেকে আইডিয়া আছে তারা অনেকেই হয়তো ভাববেন, কোনো বি-টু-বি লিড ডাটাবেইজ থেকে কিছু ইমেইল অ্যাড্রেস কিনে নিলেই তো হয়। কিন্তু ঘটনা হলো এই ডাটাবেইজগুলোতে থাকা ইমেইল অ্যাড্রেসগুলো খুব তাড়াতাড়ি ই আউটডেটেড হয়ে যায়, তাই যদি নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে ইমেইল অ্যাড্রেস কিনেও থাকেন খুব একটা সুবিধা করতে পারবেননা৷ সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এ ডাটাবেইজগুলো থেকে ইমেইল অ্যাড্রেস কিনে কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইনে কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারবেননা। 

তাহলে প্রোস্পেক্ট কোথা থেকে খুঁজবেন?

চিন্তা নেই,আমি সবার সুবিধার জন্যে কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন রান করানোর জন্য প্রোস্পেক্ট খুঁজে বের করার কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সোর্স দিয়ে দিচ্ছি। 

  • লিংকডইন 
  • বিভিন্ন কোম্পানি এবং স্টার্ট আপ ডাটাবেইজ যেমন ক্রাঞ্চবেইজ, প্রোডাক্ট হান্ট, এঞ্জেল লিস্ট। 
  • Saas ডিরেক্টরিজ যেমন জি-টু ক্রাউড, ক্যাপটেরা, গেট অ্যাপ ইত্যাদি। 
  • নিশ ডিরেক্টরি 

প্রোস্পেক্ট কোয়ালিফাই করা 

যখন বিভিন্ন সোর্স থেকে রিসার্চ করতে করতে প্রোস্পেক্টের একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলবেন, তারপরের কাজটাই হলো প্রোস্পেক্ট কোয়ালিফাই করা। অর্থাৎ প্রোস্পেক্টের লিস্ট থেকে কাদেরকে নিয়ে কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন চালাবেন তাদের সিলেক্ট করা এবং বাকিদের ক্যাম্পেইন থেকে বাদ দেয়া। বলা যেতে পারে এটা কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পাওয়ার একটা ভাইটাল পয়েন্ট। কেননা যদি নিজের বিজনেসের জন্য পারফেক্ট প্রোস্পেক্টদের নিয়ে ইমেইল ক্যাম্পেইন না করেন, তাহলে দেখবেন আপনার সেন্ড করা ইমেইল তারা হয়তো ওপেন করেও দেখবেনা। এতে যেমন নিজের সময় এবং শ্রম দুটোরই অপচয় হবে, পাশাপাশি বিজনেসেরও ক্ষতি হবে। 

সঠিকভাবে প্রোস্পেক্ট কোয়ালিফাই করার জন্য নিচের ক্রাইটেরিয়াগুলো ফলো করতে পারেন –

১। অ্যানুয়াল রেভিনিউ

প্রোস্পেক্ট হিসেবে এমন কোনো একটি কোম্পানি বেছে নিন, যে কোম্পানির অ্যানুয়াল রেভিনিউ ১০ মিলিয়ন ডলার কিংবা তার চেয়েও বেশি। ইন্টারনেটের বিভিন্ন টুল দিয়ে কোন কোম্পানির অ্যানুয়াল রেভিনিউ কেমন তা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। যে কোম্পানিগুলোর অ্যানুয়াল রেভিনিউ এর চেয়ে কম, সে কোম্পানিগুলোকে ইগ্নোর করুন। 

২। এমপ্লয়ি কাউন্ট 

যেসব কোম্পানিতে এমপ্লয়ি সংখ্যা অন্তত ১০০-২০০ সে কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করা বেটার । কোন কোম্পানিতে কতজন এমপ্লয়ি রয়েছে তা জানার জন্য সে কোম্পানির লিংকডইন প্রোফাইল চেক করুন। এটাই কোন কোম্পানির এমপ্লয়ি কাউন্টের সবচেয়ে রিলায়াবল উপায়। 

মূলত এ দুটি ক্রাইটেরিয়া ফলো করলেই আপনারা আপনাদের কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন রান করানোর জন্য প্রোস্পেক্ট খুঁজে পাবেন। 

কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পেতে যা করবেন

কিভাবে কারো ইমেইল অ্যাড্রেস খুঁজে বের করবেন? 

প্রোস্পেক্ট খুঁজে পাওয়ার পর সবচে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ হচ্ছে সে কোম্পানির কাদেরকে ইমেইল পাঠাবেন তা ডিসাইড করা। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন হলো কখনোই কোনো কোম্পানির কমন ইমেইল অ্যাড্রেসে পিচ পাঠাবেননা কারণ এতে সেন্ড করা ইমেইল সে কোম্পানির কারো নজরে না পড়ার চান্স ই বেশি। 

তাই কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন রান করানোর আগে খুঁজে বের করুন, কোন একটা কোম্পানিতে আপনি যে ধরণের সার্ভিস অফার করতে চাচ্ছেন সেটা আপনি অফার করতে পারবেন কিনা তা ডিসাইড করার জন্য ওই কোম্পানিতে দায়িত্বরত এমপ্লয়ি কে রয়েছেন। এটা বোঝার জন্য ছোট্ট একটা এক্সামপল দিচ্ছি। ধরুন, যদি কোন একটা কোম্পানিতে ব্লগিং রিলেটেড যেকোন সার্ভিস দিতে চান তাহলে সে কোম্পানির কন্টেন্ট ম্যানেজারের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তাকে ইমেইল করলে রিপ্লাই পাওয়ার চান্স অনেক বেশি থাকবে। 

ইমেইল অ্যাড্রেস খুঁজে বের করার জন্যে লিংকডইনের সাহায্য নেয়াটাই ভালো। কারণ প্রথমত এখন  সব কোম্পানিরই লিংকডইনে প্রোফাইল থাকে। দ্বিতীয়ত লিংকডইনে কোন একটি কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে কর্মরত এমপ্লয়িদের ইমেইল অ্যাড্রেস তাদের প্রোফাইলেই দেয়া থাকে। তাই সহজেই ইমেইল অ্যাড্রেস খুঁজে পেতে পারবেন। 

পিচ লেখার জন্য কিছু টিপস 

কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে পিচ লেখার কোন বিকল্প নেই। ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে রেসপন্স পাওয়ার জন্য পিচ লেখার সময় নিচের টিপসগুলো ফলো করতে ভুলবেননা –

  • ক্লায়েন্টের যতটুকু ইনফরমেশন জানা দরকার ততটুকু ইনফরমেশন লিখুন। কেননা, যদি অযথা বাড়তি ইনফরমেশন লেখেন তা ক্লায়েন্টের বিরক্তির কারণ হবে। 
  • খুব বেশি ফরমাল ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করবেননা। যেমন : ডিয়ার স্যার, ডিয়ার ম্যাডাম ইত্যাদি লেখা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ পিচের মাধ্যমে নিজের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের মার্কেটিং করা হয় । তাই অতিরিক্ত ফরমাল ল্যাংগুয়েজের ব্যবহার এখানে প্রয়োজন নেই। 
  • অনেকেই আছেন যারা পিচের মধ্যে শুধুমাত্র নিজের সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্টের লিস্ট দিয়ে দেন। এটা না করে বরং নিজের সার্ভিস বা প্রোডাক্ট কিভাবে ক্লায়েন্টকে বেনিফিট দিতে পারে সেটা লিখুন। দেখবেন এতে করে রেসপন্স পাওয়ার পারসেন্টেজ অনেকটাই বেড়ে যাবে। 
  • ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে ইমেইল পাঠানোর উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে লিখুন। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সাবজেক্ট লাইন লেখা পরিহার করুন। 
  • মনে রাখবেন কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন করাই হয় মূলত ক্লায়েন্টের সাথে ডিসকাশন শুরু করার জন্য। তাই ইমেইলের শেষে কল অফ অ্যাকশনের প্রয়োগ করুন। যেমন : ইমেইলের শেষে ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে সে আপনার সার্ভিসের ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে ফোনকলে ডিসকাস করতে আগ্রহী কিনা। 

ফলো আপ ইমেইল পাঠানো

হতেই পারে একটা কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন করলেন, অনেক মানুষকে ইমেইল পাঠালেন। কিন্তু কয়েকজন সেই ইমেইলের কোন রেসপন্সই করলোনা। এখন কি করবেন? তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন সে কেন রেসপন্স করেনি? অবশ্যই না। 

তাহলে কি করবেন?

এক্ষেত্রে যেটা করতে হবে সেটা হলো,  ক্লায়েন্টকে ফলো আপ ইমেইল পাঠাবেন। যেখানে উল্লেখ করবেন, যে আগে একটা বিষয়ে তাকে ইমেইল পাঠিয়েছিলেন। সে যদি এ বিষয়ে ডিসকাস করতে আগ্রহী হয়ে থাকে তাহলে যেন আপনার সাথে কনটাক্ট করে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার করে ২/৩ সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ফলো আপ ইমেইল পাঠাতে পারেন। এতে করে ক্লায়েন্টের জন্য ওয়েলকামিং এনভায়রনমেন্ট তৈরি হবে। অনেক সময় দেখা যায়,  ক্লায়েন্ট রেসপন্স ও করে বসেন। তাই যদি কোন কারণে ক্লায়েন্টের রেসপন্স না পান, তাহলে অবশ্যই ফলো আপ ইমেইল পাঠাবেন৷ 

ইমেইল ডেলিভারিটি বাড়ানোর জন্য টিপস 

অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন কারণে সেন্ড করা ইমেইল ক্লায়েন্টের স্প্যাম ফোল্ডারে পড়ে থাকে। এটা যেন না হয় সেজন্যে রইলো কিছু টিপস –

  • Hunter.io কিংবা যেকোন ইমেইল ভেরিফিকেশন টুল ব্যবহার করুন। 
  • ইমেইলে যে শব্দ, ইমেজ, অ্যাটাচমেন্ট স্প্যাম ট্রিগার্ড ধরা হয় সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 
  •  প্রোস্পেক্ট ইউএস বেজড হলে ক্যান স্প্যাম রুলস ফলো করুন। আর প্রোস্পেক্ট ইউএস বেজড না হয়ে অন্য রিজিওনের হলে সে রিজিওনের অ্যান্টি স্প্যাম লেজিসলেশন সম্পর্কে ধারণা রাখুন। 

এই ছিলো কোল্ড ইমেইলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পাওয়া সংক্রান্ত আজকের আলোচনা। আশা করি সবাইকে কোল্ড ইমেইল ক্যাম্পেইন সম্পর্কে  গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইইনফরমেশন দিয়ে হেল্প করতে পেরেছি। এমন আরো ইনফরমেটিভ লেখা পেতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: