ক্লায়েন্টদের সাথে স্ট্রং লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করবেন কিভাবে?

একটা বিজনেস কতটুকু সাকসেসফুল হবে কিংবা আদৌ সাকসেসফুল হবে কিনা সেটা অনেকটাই ডিপেন্ড করে ওই বিজনেস কোম্পানি থেকে ক্লায়েন্টরা কতটুকু সার্ভিস নিচ্ছেন তার ওপর। অনেকসময় দেখবেন, একজন ক্লায়েন্ট একটা কোম্পানি থেকে একবারের বেশি সার্ভিস নিচ্ছেননা, অথচ সেইম সার্ভিস প্রোভাইড করা অন্য কোম্পানি থেকে বছরের পর বছর সার্ভিস নিয়ে যাচ্ছেন। কখনো কি ভেবে দেখেছেন ঠিক কি কারণে একজন ক্লায়েন্টের সাথে কোন বিজনেস কোম্পানির লম্বা সময় কানেকশন থাকে? আসলে এটা সম্ভব হয় ক্লায়েন্টদের সাথে স্ট্রং লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করার মাধ্যমে। 

আজকালকার দিনে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের সাথে যুক্ত রয়েছেন। এই সেক্টরে শাইন করতে হলে ক্লায়েন্টদের সাথে এ ধরণের রিলেশনশিপ মেইনটেইন করা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। অনেকে এই বিষয়টিকে শুরুতে আমলে নেননা এবং পরবর্তীতে আফসোস করতে থাকেন। আজকের আর্টিকেলে আমি ডিসকাস করবো কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার তার ক্লায়েন্টদের সাথে স্ট্রং লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করে নিজের বিজনেসের প্রোগ্রেসকে অন্য লেভেলে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। 

ক্লায়েন্টদের সাথে লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করবেন কিভাবে?

চলুন শুরুতেই এই লং-টার্ম রিলেশনশিপ বলতে কি বোঝায় সেটা জেনে নেই। একটা ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদের সাথে লং-টার্ম বা দীর্ঘ সময় ধরে রিলেশন থাকার অর্থ হলো সেই বিজনেসে এমন কিছু ক্লায়েন্ট রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে ওই কোম্পানি থেকে সার্ভিস পারচেজ করে আসছেন। বিজনেসে এমন কয়েকজন ক্লায়েন্ট থাকলে সেই বিজনেসের গ্রোথ তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি ঘটতে দেখা যায়। 

বেসিক আইডিয়া তো দিয়ে দিলাম। এবার সবার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকা সেই প্রশ্নটা হচ্ছে কিভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে ডিল করলে এই লং-টার্ম রিলেশনশিপ ডেভেলপ করতে পারবেন? আর দেরি না করে এবার জেনে আসা যাক সে উপায়গুলো সম্পর্কে। 

নিজে অর্গানাইজড হওয়া

আমার মতে বিজনেস ক্লায়েন্টদের সাথে লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করার জন্য সবচাইতে জরুরি যেটা সেটা হলো নিজে অর্গানাইজড হওয়া। একজন ফ্রিল্যান্সারকে একইসাথে অনেকজন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিতে হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্টে থাকে যথেষ্ট ভিন্নতা। তাই যিনি সার্ভিস দিচ্ছেন তিনি যদি নিজে অর্গানাইজড না হন, তাহলে কখনোই ক্লায়েন্টদের প্রোপারলি সার্ভিস দিতে পারবেননা। এতে করে লং-টার্ম রিলেশনশিপ তো দূরের কথা, ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতেই স্ট্রাগল করতে হবে৷ তাই, সবার আগে নিজে গুছিয়ে কাজ করতে শিখুন। এতে করে ক্লায়েন্টদেরকে ইমপ্রেস করা সহজ হয়ে যাবে। 

যেকোন সিচুয়েশনে অনেস্ট থাকা

অনেস্টি জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সাকসেস এনে দিতে হেল্প করে। এই অনেস্টি কিন্তু একজন ক্লায়েন্টের সাথে লং-টার্ম কাজ করার অপোরচুনিটি এনে দিতেও সক্ষম। আমি প্রতিটা ফ্রিল্যান্সারকে বলবো, সবসময় নিজের স্কিল এবং ক্যাপাবিলিটি নিয়ে ক্লায়েন্টদের সাথে অনেস্ট থাকুন। তাদেরকে কতটুকু সার্ভিস দিতে পারবেন সে ব্যাপারে আগেই আইডিয়া রাখুন এবং সে অনুসারে প্রাইসিং সেট করুন। সবসময় মনে রাখবেন, অনেস্ট থাকলে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ট্রাস্ট গেইন করা যায়, যা পরবর্তীতে বিজনেস সাকসেসফুল করতে খুব বেশি হেল্প করে। 

ক্লায়েন্টদের সার্ভিস সম্পর্কে ডিটেইলড ইনফরমেশন দেয়া

এরপর যেটা আমি বলবো তা হলো যখনই একজন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করবেন, তখন সবসময় তাকে ডিটেইলে ইনফর্ম করবেন যে তার কাজটা করার জন্য আপনি কিভাবে প্ল্যান করে এগোতে চাইছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোন প্রজেক্ট শুরু করার আগে সামনাসামনি বসে অথবা ফোনকল বা ভিডিওকলে ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করে নিতে পারলে। এতে করে যেমন প্রোজেক্ট সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব ডিটেইল ক্লায়েন্টকে দিতে পারবেন, তেমনি ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্টগুলো কি, তার কোন স্পেসিফিক চয়েস রয়েছে কিনা, তিনি প্রজেক্টের আউটকাম কিভাবে দেখতে চান ইত্যাদি বিষয় বুঝতে পারবেন। এতে করে একটা বিশাল লাভ হবে। সেটা হলো সার্ভিস ডেলিভারি ক্লায়েন্টের এক্সপেকটেশন অনুযায়ী হবে যা পরবর্তীতে তাদের সাথে স্ট্রং লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করতে হেল্প করবে। 

ডেডলাইন মেইনটেইন করা

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপ করা হচ্ছে ক্লায়েন্টদের সাথে লম্বা সময় অ্যাটাচমেন্ট ধরে রাখার আরেকটা সুপার ইফেকটিভ উপায়। একজন ফ্রিল্যান্সার যত গুছিয়েই কাজ করুননা কেন, তিনি যদি ডেডলাইন মেইনটেইন করতে না পারেন, তাহলে কিন্তু তার হার্ডওয়ার্কের কোন দামই থাকেনা। তাই সবসময় ট্রাই করুন যাতে করে প্রতিটি ক্লায়েন্টকে ডেডলাইনের মধ্যে কাজ ডেলিভারি করে দিতে পারেন। যখন ক্লায়েন্টরা দেখবেন একজন ফ্রিল্যান্সার অর্গানাইজড ওয়েতে ডেডলাইন মেইনটেইন করে সার্ভিস ডেলিভারি দিচ্ছেন, তখন তারা নিজে থেকে চাইবেন ওই ফ্রিল্যান্সারের সাথে লং-টার্ম রিলেশনশিপ মেইনটেইন করতে। তাই টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপ করুন। এটা করার জন্য টু-ডু লিস্ট মেইনটেইন করতে পারেন।

ক্লায়েন্টদের সাথে প্রোপারলি কমিউনিকেট করা

ক্লায়েন্টদের সাথে প্রোপারলি কমিউনিকেট করতে পারা একজন ফ্রিল্যান্সারের অন্যতম স্কিলগুলোর মধ্যে একটা। এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট এবং যিনি সার্ভিস প্রোভাইড করছেন তাদের মধ্যে কোনরকম ইনফরমেশনের গ্যাপ থাকেনা। যার ফলে ক্লায়েন্টদেরকে বেটার সার্ভিস দেয়া পসিবল হয়। শুধু তাই নয়, যদি ক্লায়েন্টদের সাথে ঠিকমতো কমিউনিকেট করেন, তাহলে দেখবেন তাদের সাথে খুব সহজেই অনেকদিন কাজ করতে পারবেন। 

এক্ষেত্রে আমি কিছু কমিউনিকেশন টিপস দিতে চাই। সেগুলো হলো। 

  • ক্লায়েন্টকে যে সার্ভিস দেবেন সে ব্যাপারে রেগুলারলি আপডেট দিন। হতে পারে সেটা ফোনকলের মাধ্যমে কিংবা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে। যদি সার্ভিস রিলেটেড কোনকিছুতে চেঞ্জ আনা প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা তাদের আগেই জানিয়ে রাখুন। 
  • যদি কোন কারণে ডেডলাইন মেইনটেইন করতে না পারেন, তাহলে আগেই সে ব্যাপারে ক্লায়েন্টকে ইনফর্ম করে রাখুন৷ 
  • সার্ভিস ডেলিভারি দেয়ার পর ফিডব্যাক নিতে ভুলবেননা। ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করুন তিনি স্যাটিসফাইড কিনা। এটা করলে ক্লায়েন্টরা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং এটাই তাদেরকে সেই ফ্রিল্যান্সারের সাথে লম্বা সময় কাজ করতে মোটিভেট করে। 
  • যদি রিভিশন প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি কিভাবে করলে ভালো হয় সে বিষয়ে ক্লায়েন্টের মতামত নিন। 
  • ক্লায়েন্ট যদি কোন ব্যাপারে কমপ্লেইন করেন কিংবা আনস্যাটিসফাইড থাকেন, তাহলে ধৈর্য্যসহকারে সেটা নিয়ে ডিল করুন। 

ক্লায়েন্টের সাথে নিজের নলেজ শেয়ার করা 

একজন ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস ওউনার হিসেবে যদি চান একজন ক্লায়েন্টের সাথে অনেকদিন কাজ করতে, তাহলে তার সাথে যতটা সম্ভব ফ্রেন্ডলি রিলেশন মেইনটেইন করার ট্রাই করুন৷ তার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের নলেজ শেয়ার করতে পারেন৷ যেমন ধরুনঃ একজন ফ্রিল্যান্সারের যদি মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি নিয়ে ভালো আইডিয়া থাকে, তাহলে তিনি সেই নলেজ তার ক্লায়েন্টের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এভাবে নলেজ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সাথে সার্ভিস আদান প্রদান ছাড়াও ভালো একটা ফ্রেন্ডলি রিলেশন হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে ওই ক্লায়েন্টের সাথে লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করতে হেল্প করে। 

ক্লায়েন্টের সাথে নিজের কানেকশন শেয়ার করা

ক্লায়েন্টের বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের সাথে নিজের কানেকশন শেয়ার করতে পারেন। ধরুন, ক্লায়েন্টের একজন ফ্রিল্যান্স এসইও এক্সপার্ট প্রয়োজন। যদি আপনার এই কাজে এক্সপার্ট পরিচিত কোন কানেকশন থাকে, তাহলে ক্লায়েন্টের কাছে তাকে রেফার করে দিতে পারেন। 

এটুকুই ছিলো আজকের ডিসকাশন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের ক্লায়েন্টদের সাথে স্ট্রং লং-টার্ম রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করতে পারবেন৷ সুতরাং নিজের বিজনেস যদি সাকসেসফুল করতে চান, তাহলে এ টিপসগুলো ফলো করতে কিন্তু ভুলবেননা! 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: