ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি

একটা বিজনেসের প্রতি ক্লায়েন্টদেরকে অ্যাট্রাক্ট করার জন্য প্রোপার মার্কেটিংয়ের ইম্পর্ট্যান্স সবসময়ই অনেক বেশি। তবে সবসময় কিন্তু এই মার্কেটিংয়ের মেথড একরকম থাকেনা। যেমনঃ আজকে থেকে কিছু বছর আগে নিজেদের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের মার্কেটিংয়ের জন্য বিজনেস কোম্পানিগুলো নিউজপেপারে কিংবা টেলিভিশনে অ্যাড দেয়াই বেশি প্রেফার করতো।  কারণ এ দুটা মাধ্যম ইউজ করে ক্লায়েন্টদের কাছে রিচআউট করা ইজি হতো। কিন্তু এখন নিউজপেপার এবং টেলিভিশন অ্যাডের পাশাপাশি ইন্টারনেটে, বিশেষ করে সোশাল মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে টার্গেট করে বিজনেসের মার্কেটিং করা হয়। ইনবাউন্ড মার্কেটিং হচ্ছে একধরণের মার্কেটিং মেথড যেটার সাহায্যে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে নিজের বিজনেসের দিকে অ্যাট্রাক্ট করানো পসিবল হয়। আজকের লেখায় আমি শেয়ার করবো কিছু ইফেকটিভ ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি যেগুলো ফলো করলে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্টদেরকে শিওরলি অ্যাট্রাক্ট করতে পারবেন। 

ইনবাউন্ড মার্কেটিং কী? 

আমি জানি আজকের ডিসকাশনের টপিকটা অনেকের কাছেই নতুন। তাই ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি সম্পর্কে জানার আগে চলুন ইনবাউন্ড মার্কেটিং কী সেটা জেনে নেই। 

ইনবাউন্ড মার্কেটিং এমন একপ্রকার মার্কেটিং যেখানে প্রথমে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেমনঃ ব্লগ, সোশাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন থেকে কারা একটা বিজনেসের ক্লায়েন্ট হতে পারে সেটা আইডেন্টিফাই করা হয়। পরবর্তীতে তাদের সামনে এমনভাবে কন্টেন্ট শো করা হয় যাতে করে তারা সেই বিজনেস কোম্পানি থেকে পারচেজ করতে ইন্টারেস্টেড হন।

এক্ষেত্রে কন্টেন্ট হিসাবে বিভিন্ন ছবি, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক, পডকাস্ট, ই-বুক কিংবা প্রেজেন্টেশন শো করা হয়। ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়ে ব্যবহৃত এ কন্টেন্টগুলো এমনভাবে ক্রিয়েট করা হয় যাতে করে এগুলো দেখার পর পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের মাথায় কাজ করে যে এ কোম্পানি থেকে অফার করা সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্ট তাদেরকে বেনিফিট দিতে পারে। এই ভাবনা থেকেই তারা পরবর্তীতে সে কোম্পানি থেকে পারচেজ করে থাকেন। 

সুতরাং সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়ের মেইন ফোকাস এরিয়া হলো পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে এমনভাবে নিজের বিজনেসের প্রতি অ্যাট্রাক্ট করা যাতে করা তারা সেই বিজনেস কোম্পানি থেকে তাদের সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্ট পারচেজ করেন। এজন্যে ইনবাউন্ড মার্কেটিংকে ক্লায়েন্ট সেন্টারড মার্কেটিংও বলা হয়। সঠিকভাবে ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি ক্রিয়েট করে সেগুলো ফলো করা হলে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে সেলস জেনারেট করা পসিবল হয়।   

ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়ের প্রসেস 

বিজনেস মার্কেটিং তো বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। প্রতিটা মার্কেটিং প্রসেস একটা আরেকটার থেকে আলাদা। তাই যদি ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনাকে এই মার্কেটিংয়ের একচুয়াল প্রসেস সম্পর্কেও নলেজ রাখতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের ক্ষেত্রে ইনবাউন্ড মার্কেটিং প্রসেসের শুরুতেই যেটা করা হয় সেটা হলো যারা পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট, তাদেরকে বিভিন্ন কন্টেন্টের সাহায্যে অ্যাট্রাক্ট করা। আমি একটা রিয়েল লাইফ এক্সামপলের মাধ্যমে প্রসেসটা বোঝানোর ট্রাই করছি। যেমন ধরুন, কারো ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইন বিজনেস রয়েছে৷ তিনি ক্লায়েন্টদেরকে অ্যাট্রাক্ট করার জন্য একটা ভিডিও ক্রিয়েট করলেন যেখানে তিনি দেখালেন যে তার একজন ক্লায়েন্ট কিভাবে তার কাছ থেকে সার্ভিস নিয়ে বেনিফিট পেয়েছেন। তিনি ভিডিওর শেষে কল টু অ্যাকশনও রাখলেন। তিনি কল টু অ্যাকশন হিসাবে বললেন যেসব ক্লায়েন্ট এরপর ওনার কাছ থেকে সার্ভিস নিতে চান, তাদের জন্য স্পেশাল ডিসকাউন্ট কুপন রয়েছে যা পেতে হলে ক্লায়েন্টদেরকে তাদের ইমেইল অ্যাড্রেস প্রোভাইড করতে হবে। 

এরপর ওই গ্রাফিক ডিজাইনার কী করবেন জানেন?

তিনি সেই ভিডিওটার লিংক সোশাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের সামনে প্রেজেন্ট করবেন। এতে করে সেসব ক্লায়েন্টরা সেই ভিডিওটা দেখতে ইন্টারেস্টেড ফিল করবেন এবং ভিডিওটা দেখার জন্য ওই ডিজাইনারের ওয়েবসাইট একবার হলেও ভিজিট করবেন। এরপর যখন তারা ফুল ভিডিওটা দেখবেন, তখন তারা নিশ্চিতভাবে ভিডিওর শেষের কল টু অ্যাকশনেও রেস্পন্স করবেন। যার ফলে তাদের কাছে ডিসকাউন্ট কুপনের ইমেইল চলে যাবে। 

এই ক্লায়েন্টরা হয়তো শুরুতেই এই ডিসকাউন্ট কুপন ইউজ করে সার্ভিস পারচেজ করবেননা। তাই তাদেরকে আবার রিমাইন্ডার ইমেইল সেন্ড করা হবে৷ এক্ষেত্রে যে বড় পসিবিলিটি রয়েছে সেটা হলো রিমাইন্ডার ইমেইল পাওয়ার পর অনেক ক্লায়েন্টই সার্ভিস পারচেজ করে ফেলবেন। এরপর ডিজাইনার ক্লায়েন্টদেরকে তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী সার্ভিস প্রোভাইড করবেন এবং ক্লায়েন্টদের স্যাটিসফ্যাকশন বাড়ানোর জন্য তাদেরকে আরো ডিসকাউন্ট কুপন অফার করবেন। মূলত এই প্রসেস ফলো করেই ইনবাউন্ড মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি 

এখন আমরা চলে এসেছি আজকের ডিসকাশনের সবচাইতে ইম্পর্ট্যান্ট অংশে। এখন আমি ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো প্রোপারলি ফলো করার মাধ্যমে এই মার্কেটিংয়ে সাকসেস পাওয়া পসিবল হবে। 

এতক্ষণে হয়তো সবাই বুঝে গেছেন, ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়ে ভালো কোয়ালিটির কন্টেন্ট ক্রিয়েট করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এখানে কন্টেন্টের মাধ্যমে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে অ্যাট্রাক্ট করা হয়, তাই সে কন্টেন্টগুলো যেন অ্যাট্রাকটিভ হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। ভালো কোয়ালিটির কন্টেন্ট বানানোর জন্য শুরুতেই জানতে হবে অডিয়েন্স কারা। এক্ষেত্রে অডিয়েন্স কারা বলুন তো? অডিয়েন্স হলো সেসব মানুষ যারা বিজনেসের পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট। পর্যাপ্ত রিসার্চের মাধ্যমে ডিফাইন করুন কারা অডিয়েন্স হিসাবে আপনার তৈরি করা কন্টেন্টগুলো দেখবে। যদি ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে নিশবেজড সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকেন, তাহলে বের করার ট্রাই করুন কাদের এক্সাক্টলি কোন কারণে এ ধরণের সার্ভিসগুলো পারচেজ করা প্রয়োজন। 

এর পাশাপাশি বোঝার ট্রাই করুন যে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টরা কেমন ধরণের প্রবলেম ফেইস করছেন। এক্ষেত্রে আমি একটা সাজেশন দিতে চাই। সেটা হলো যদি অলরেডি নিজের কোন ক্লায়েন্ট থেকে থাকে, তাহলে তাদেরকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন যে তারা কেমন ধরণের প্রবলেম ফেইস করে থাকেন। তাহলে সেখান থেকে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের প্রবলেমগুলো কেমন হতে পারে সেটা নিয়েও আইডিয়া পেয়ে যাবেন। 

পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টরা কোন ধরণের প্রবলেম ফেইস করছেন সেটা ফাইন্ড আউট করার পর নিজের প্রোভাইড করা সার্ভিসের মাধ্যমে কিভাবে তাদের সেসব স্পেসিফিক প্রবলেম সলভ করতে পারবেন সেটা সম্পর্কে ভাবুন। মনে রাখবেন, যদি  ক্লায়েন্টদের প্রবলেম সলভই করতে না পারেন, তাহলে যতই ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি ফলো করুননা কেন, কাজের কাজ কিছুই হবেনা। তাই কিভাবে ক্লায়েন্টদের ফেইস করা প্রবলেমগুলো নিজের প্রোভাইড করা সার্ভিসের মাধ্যমে সলভ কর‍তে পারবেন সেটা নিয়ে যত পারেন ঘাঁটাঘাঁটি করুন। এক্ষেত্রে যার নিজের ফিল্ডে যত বেশি এক্সপার্টাইজ থাকবে, কাজটা তার জন্য তত বেশি ইজি হয়ে যাবে! 

ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি হিসাবে ক্লায়েন্টদেরকে বিনামূল্যে ভ্যালু প্রোভাইড করাটাকে ইম্পর্ট্যান্স দেয়া হয়ে থাকে। কারণ এই মার্কেটিংয়ে ক্লায়েন্টদের জন্য যেন ইমপ্যাক্টফুল হয় সেভাবেই কন্টেন্ট ক্রিয়েট করা হয়ে থাকে। তাই এমনভাবে কন্টেন্ট ক্রিয়েট করুন যেন সেগুলো ক্লায়েন্টদেরকে ভ্যালু প্রোভাইড করে। এক্ষেত্রে কন্টেন্ট হিসাবে বিভিন্ন টপিকে ফ্রি ই-বুক প্রোভাইড করা খুবই জনপ্রিয়। হয়তো অনেক ওয়েবসাইটেই দেখেছেন যেখানে বলা হয় ইমেইল অ্যাড্রেস প্রোভাইড করলে ফ্রি ই-বুক প্রোভাইড করা হবে। এটা কিন্তু ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়েরই একটা পার্ট। 

এছাড়া নিউজলেটার সাবস্ক্রিপশন কিংবা ব্লগ সিরিজও চয়েসে রাখতে পারেন। আসলে কেমন ধরণের কন্টেন্ট ক্রিয়েট করবেন সেটা নিজে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন ফিল্ডে কাজ করছেন সেটার ওপর ডিপেন্ড করে। তবে কন্টেন্ট যেমন ধরণেরই হোক, সেগুলো যেন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের ভ্যালু প্রোভাইড করে সেদিকে নজর রাখতে ভুলবেননা। এভাবে যদি স্ট্র‍্যাটেজি ডেভেলপ করে কাজ করতে থাকেন, তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে বেটার আউটপুট পাচ্ছেন এবং যত দিন যাবে এ আউটপুট তত বেশি ভালোর দিকে যাবে। 

এটা ঠিক যে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদেরকে অ্যাট্রাক্ট করতে প্রচুর রিসার্চ, ধৈর্য্য এবং পরিশ্রম প্রয়োজন। কিন্তু সত্যি বলছি, দিনশেষে যখন দেখবেন পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টরা আপনার কন্টেন্ট দেখার পর নিজে থেকেই সার্ভিস পারচেজ করতে ইন্টারেস্টেড হচ্ছে এবং পরবর্তীতে পারচেজও করছে, তখন সাকসেসফুল হওয়ার আনন্দে এ পরিশ্রমকে সার্থক মনে হবে৷ তাই নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ইনবাউন্ড মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি ফলো করতে দ্বিধাবোধ না করে আজই কাজে লেগে পড়ুন! 

 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: