লিংকডইন ব্যবহার করে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে প্রোফাইল কিভাবে সাজাবেন?

ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা ক্যারিয়ার ফিল্ড যেখানে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়েই যাচাই করা হয় যে একজন ফ্রিল্যান্সার এই ফিল্ডে সাকসেসফুল হতে পারবেন নাকি পারবেননা। অনেকেই রয়েছেন যারা কোন একটা স্কিল ডেভেলপ করে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসকেই টার্গেট করে থাকেন। সত্যি বলতে আমি এটা করতে সবাইকে নিরুৎসাহিত করে থাকি। কারণ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যদি লং-টার্মের জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া না যায় কিংবা মনের মতো ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল না হয়, তাহলে কিন্তু সাকসেস এবং স্ট্যাবিলিটি পেতে বেশ স্ট্রাগল করতে হয়। আর অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ দু’টা বিষয়ের একটাও নিশ্চিত করা যায়না। 

তাহলে কি করবেন?

আচ্ছা বলুন তো, আপনারা লিংকডইনের নাম শুনেছেন? লিংকডইন হলো বিভিন্ন প্রফেশনের মানুষদের কানেকটেড থাকার একটা প্ল্যাটফর্ম। তাই এটাকে যদি সোশাল মিডিয়ার প্রফেশনাল ভার্সন বলি, তাহলে খুব একটা ভুল বলা হবেনা৷ অনেকে ভেবে থাকেন, লিংকডইন বুঝি কেবলমাত্র যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে জব করে থাকেন তাদের জন্যই। অথচ ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের জন্য মনের মতো ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে এর জুড়ি মেলা ভার। আমার নিজের কথাই বলি। ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য লিংকডইন বহুদিন ধরেই আমার ভরসাযোগ্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটা।

তাই আজকের লেখায় আমি শেয়ার করবো লিংকডইনের প্রোফাইল সঠিকভাবে সাজানোর উপায় যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারবেন। 

আমি জানি এখন নিশ্চয়ই সবার মনে প্রশ্ন জাগছে যে কেন লিংকডইন থেকেই ক্লায়েন্ট খুঁজবেন? আমি বহুদিন ধরে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের সাথে যুক্ত থাকায় মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করার উপায় সম্পর্কে অনেক রিসার্চ করেছি। আমি খেয়াল করেছি বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে কেবলমাত্র বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের সহায়তা নিয়ে থাকেন। আমি বলছিনা ফেসবুক থেকে মনের মতো ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সের ওপর ভিত্তি করে এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি যে ফেসবুকের চাইতে লিংকডইন এক্ষেত্রে বহুগুণে ইফেকটিভ রোল প্লে করে। কারণ, লিংকডইন এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে কেবলমাত্র প্রফেশনাল ব্যক্তিরাই থাকেন৷ ফলস্বরূপ এখানে বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের খুঁজে পাওয়া কিন্তু ফেসবুকের চাইতে বেশ সহজ আর সময়ও কম লাগে৷

পাশাপাশি এই প্ল্যাটফর্মে মূলত ইনবক্সে কাজের কথাই বেশি বলা হয়। একারণে পটেনশিয়াল কাছে রিচ আউট করা অনেকটাই সহজ। পাশাপাশি যদি সঠিকভাবে লিংকডইনে নিজের স্কিলসেটের ব্যাপারে পোস্ট করতে পারেন, তাহলে অনেক সময় ক্লায়েন্ট নিজেই আপনাকে খুঁজে নেবে। এগুলো ছাড়াও লিংকডইন ইউজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা কি জানেন? কোয়ালিটিফুল সার্ভিস দিতে পারলে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে লং-টার্মে কাজ করার জন্যেও ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যেতে পারে, যদি সঠিকভাবে লিংকডইন ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য যে স্ট্রাগল করতে হয়, সেটা অনেকটাই কমে যাবে। 

এবার চলুন আজকের লেখার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশে চলে আসি।

সেটা হলো ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য লিংকডইন প্রোফাইল কিভাবে সাজাবেন। এ প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে হলে –

  • নিজের লিংকডইন প্রোফাইল সবসময় কমপ্লিট রাখুন। সবসময় মনে রাখবেন, যেহেতু লিংকডইন প্রফেশনালদের জন্য ডেডিকেটেড প্ল্যাটফর্ম, তাই অ্যাকাউন্ট খোলার পর অবশ্যই প্রোফাইলে নিজের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিন৷ শুধুমাত্র এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশনই নয়, এগুলোর পাশাপাশি নিজের স্কিল, ভাষাগত দক্ষতা ইত্যাদি যোগ করুন৷ শুধু তাই নয়, যদি কোন স্কিলরিলেটেড সার্টিফিকেশন থাকে, সেগুলোও যোগ করতে ভুলবেননা। এখানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা বিষয় উল্লেখ করতে হবে যেটা হলো ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ক্লায়েন্টদেরকে কি কি সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকেন সেগুলো। যদি নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস কিংবা এজেন্সি থাকে সেটার কথাও তুলে ধরুন লিংকডইনের এক্সপেরিয়েন্স সেকশনে।
  • শুধুমাত্র লিংকডইনে অ্যাকাউন্ট খুলেই থেমে যাওয়া যাবেনা, বরং নিজের অ্যাকাউন্টের ইনফরমেশন ও অ্যাকটিভিটি রেগুলার বেসিসে আপডেট করুন। হতে পারে কোন একটা নতুন কোর্স করলেন, কিংবা কোন ওয়ার্কশপে অ্যাটেন্ড করলেন -সেগুলোর বিষয়েও লিংকডইনে পোস্ট করতে পারেন। মোটকথা, এমন যেন না হয় যে লিংকডইনে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে সেটাতে কোন আপডেট না করে ফেলে রাখবেন। কারণ অ্যাকাউন্টের ইনফরমেশন আপডেট করলে যারা আপনার প্রোফাইল ভিজিট করবে তারা আপনার ক্যাপাবিলিটি, প্যাশন এবং ক্যারিয়াল গোল সম্পর্কে আইডিয়া পাবে। যা ক্লায়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। 
  • প্রোফাইল পিকচার লিংকডইনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ প্রোফাইল পিকচার ক্লায়েন্টদের কাছে ফার্স্ট ইমপ্রেশনের মতোন কাজ করে। কখনোই প্রোফাইল পিকচারে নিজের সেলফি আপলোড করবেননা। বরং উপযুক্ত প্রোফাইল পিকচার হিসাবে ফরমাল ধরণের ছবি বেছে নিন৷ শুধুমাত্র নিজের ছবিই নয়, এর পাশাপাশি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড যেন অতিরিক্ত রংচঙা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখুন৷ সাদা কিংবা হালকা রংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড বেছে নিন। 
  • পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের অ্যাট্রাক্ট করতে লিংকডইন প্রোফাইলের ব্যাকগ্রাউন্ড একটা ইফেকটিভ রোল প্লে করে। তাই প্রোফাইল পিকচারের পেছনে থাকা ব্যাকগ্রাউন্ডটা সফটওয়্যারের সাহায্যে নিজের মতো করে বানিয়ে নিতে পারেন। যদি নিজের এজেন্সি বা বিজনেস থেকে থাকে, সেটার নাম ও লোগো ব্যানারে উল্লেখ করতে পারেন। আবার আপনি ক্লায়েন্টদের কেমন সার্ভিস দিয়ে থাকেন, সেটাও লিখতে পারেন ছোট্ট করে। 
  • লিংকডইনে হেডলাইন নামের একটা অপশন রয়েছে যেখানে অল্প কিছু শব্দের মাধ্যমে এক লাইনে কারো পরিচয় তুলে ধরা হয়৷ চেষ্টা করুন লিংকডইনের হেডলাইনে যতটা সম্ভব স্পেসিফিকভাবে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে। যেমনঃ যদি গ্রাফিক ডিজাইন এজেন্সি থাকে, তাহলে হেডলাইনে সেটা ক্লিয়ারলি উল্লেখ করতে পারেন। 

  • লিংকডইনে সামারি নামের একটা অপশন রয়েছে যেখানে নিজের ক্যারিয়ার অবজেকটিভ, স্কিল, অ্যাচিভমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে ডিটেইলে লেখা যায়। যদি লিংকডইনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পেতে চান তাহলে এই অপশনটাকে কাজে লাগাতে হবে সঠিকভাবে। এখানে নিজের ব্যাপারে ক্রিয়েটিভলি লিখুন৷ গুছিয়ে তুলে ধরুন নিজের পরিচয়, কাজের এক্সপেরিয়েন্স এবং স্কিলসেট সম্পর্কে। পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে নিজের ক্যাপাবিলিটি সম্পর্কে আইডিয়া দিন। মনে রাখবেন, লিংকডইনে সামারি পড়ার মাধ্যমেই একজন ক্লায়েন্ট ডিসাইড করেন যে তিনি একজন ফ্রিল্যান্সারকে হায়ার করবেন নাকি করবেননা। তাই অবশ্যই সময় নিয়ে ক্রিয়েটিভলি সামারি লিখুন। 
  • ক্লায়েন্টদের ট্রাস্ট গেইন করতে লিংকডইনের স্কিল এনডোর্সমেন্ট অপশনটা বেশ কাজে আসে। এনডোর্সমেন্ট পেতে হলে অন্যকে এনডোর্স করা বেশ ভালো একটা ট্রিক। তাই ট্রাই করুন নিজের কানেকশনের অন্যদেরকে তাদের প্রোফাইলে মেনশন করা বিভিন্ন স্কিলে এনডোর্স করে দিতে। 
  • অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার চাইতে লিংকডইনে পোস্টের রিচ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তাই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে সবসময় চেষ্টা করবেন ক্লায়েন্টদের যেসব সার্ভিস ডেলিভারি দিচ্ছেন সেগুলো সম্পর্কে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করতে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছোট ছোট আর্টিকেল আকারে লিংকডইনে নিয়মিত পোস্ট করতে পারেন। পোস্টের রিচ আরো বাড়িয়ে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন প্রয়োজনীয় ইমেইজ, ভিডিও কিংবা হ্যাশট্যাগ। এতে করে পোস্টের রিচ বাড়বে এবং সেগুলো পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের চোখে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। 
  • নিজের আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা সেটা আইডেন্টিফাই করতে পারলে লিংকডইনে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের কাছে রিচ আউট করা সহজ হয়ে যাবে। তাই আইডিয়াল ক্লায়েন্ট কারা হতে পারে – অর্থাৎ যে সার্ভিসগুলো অফার করে থাকেন সেগুলো কোন ক্লায়েন্টদের প্রয়োজন এবং নিজে কোন ধরণের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে চান সেটা আগে ডিফাইন করুন।  
  • লিংকডইনে যারা আপনার প্রোফাইল ভিউ করেছে তাদেরকে কানেকশন রিকুয়েষ্ট দিতে পারেন। হতেও পারে, হয়তো সেখান থেকেই খুঁজে পেয়ে যাবেন নিজের মনের মতো ক্লায়েন্ট! 
  • যখন কানেকশন রিকুয়েষ্ট সেন্ড করবেন, তখন তাদেরকে নিজের ভাষায় গুছিয়ে টেক্সট দিতে পারেন যে ঠিক কোন কারণে তাদের সাথে কানেকটেড হতে চান। এভাবে পারসোনালাইজড টেক্সট দেয়া হলে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পজিটিভ রেসপন্স পাওয়ার চান্স বাড়বে।  
  • যখন কেউ কানেকশন রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করবে, তখন তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধন্যবাদ জানিয়ে টেক্সট দিন। মনে রাখবেন, ইফোর্টের দাম সবসময় সবার কাছে অনেক৷ তাই ফলো-আপ টেক্সটই হতে পারে ফিউচার ক্লায়েন্টের সাথে কনভারসেশন শুরু করার প্রথম ধাপ। 
  • রিকমেন্ডেশন লিংকডইন থেকে ক্লায়েন্ট পাওয়ার আরেকটা ইফেকটিভ উপায়। যদি লিংকডইনের মাধ্যমে পাওয়া কোন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস ডেলিভারি দেয়ার সুযোগ হয়, তাহলে তাকে পোলাইটলি রিকুয়েষ্ট করতে পারেন রিকমেন্ডেশন দেয়ার জন্য। কারণ এই রিকমেন্ডেশন ক্লায়েন্টদের চোখে একজন ফ্রিল্যান্সারকে বহুগুণে ভরসাযোগ্য করে তোলে। 

মূলত এভাবে প্রোফাইল সাজানোর মাধ্যমেই লিংকডইনে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার কাজটা করা হয়ে থাকে। এটুকুই ছিলো আজকের ডিসকাশন। আশা করি সবাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। পরিশেষে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, লং-টার্ম ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার ভরসাযোগ্য মাধ্যম হলেও লিংকডইনে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললেই যে জাদুর মতো ক্লায়েন্ট আসতে শুরু করবে, বিষয়টা কিন্তু মোটেও সেরকম নয়। বরং এজন্যে প্রয়োজন সঠিকভাবে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের সামনে নিজের প্রোফাইল এবং স্কিলসেট প্রেজেন্ট করা। আর অবশ্যই সময় নিয়ে এটার পেছনে ইফোর্ট দিতে হবে। তাহলেই কেবলমাত্র সাকসেস পেতে পারবেন।

linkedin-cheatsheet-img

ডাউনলোড করুন

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: