ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুপার ইফেকটিভ মানি ম্যানেজমেন্ট টিপস

ফ্রিল্যান্সিং আর দশটা ক্যারিয়ার ফিল্ড থেকে অনেকটাই ডিফারেন্ট। দারুন সম্ভাবনাময় এই ক্যারিয়ার ফিল্ডে নিজের ফ্রিডম পুরোপুরিভাবে বজায় রেখে কাজ করা যায় বলে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা। তবে এটাও সত্যি, ফ্রিল্যান্সিং করলে আর্নিংয়ের পরিমাণ সবসময় সেইম থাকে না। তবে আর্নিং কম হোক কিংবা বেশি, সেটা প্রোপারলি ম্যানেজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের লেখায় আপনাদেরকে জানাবো ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুপার ইফেকটিভ কয়েকটা মানি ম্যানেজমেন্ট টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত।

মানি ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝানো হয়?

চলুন লেখার শুরুতেই মানি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটু জেনে আসা যাক। মানি ম্যানেজমেন্ট বলতে নিজের ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাবতীয় আর্নিং প্রয়োজন বুঝে খরচ করা এবং একইসাথে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার পুরো প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়। এটাকে অনেকে ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টও বলে থাকেন।

মানি ম্যানেজমেন্ট এমন একটা কনসেপ্ট যেটা নিয়ে প্রতিটা প্রফেশনের মানুষের ইন-ডেপথ আইডিয়া থাকা উচিত। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাদের ক্ষেত্রে মানি ম্যানেজমেন্ট করার উপায় গুলো জানা থাকা একদম ম্যান্ডেটরি।

কেন জানেন?

কারণ ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে যে আর্নিং জেনারেট হয় তা ফিক্সড নয়। তাই আপনার আজকে যে আর্নিং হচ্ছে সেটা আগামীকাল নাও হতে পারে। তাই আপনি যদি ভবিষ্যতের কথা না ভেবে যখন যেটুকু টাকা আসবে সেটা খরচ করে ফেলতে থাকেন, তাহলে কোনো ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন, যেমন: অ্যাক্সিডেন্ট, হেলথ বা ফ্যামিলি ইস্যুজ ফেইস করলে তখন বিপদে পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু যদি মানি ম্যানেজমেন্ট করতে জানেন, তাহলে এই সিচুয়েশনগুলো খুব ভালোভাবেই সামাল দিতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সাররা যদি প্রোপারলি মানি ম্যানেজমেন্ট করেন, তাহলে তাদের মধ্যে সেভিংসের একটা হ্যাবিট গড়ে ওঠে, যেটা বর্তমান সময়ে সারভাইভ করার জন্য খুবই জরুরি।

মানি ম্যানেজমেন্ট করলে ফ্রিল্যান্সাররা কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করেন না। বরং প্রতিটা বিষয়ে প্রয়োজন বুঝে খরচ করেন। শুধু তাই নয়, খরচের পর যেটুকু টাকা বাঁচে তারা সেটুকু সেভ করে রাখতে শুরু করেন।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য মানি ম্যানেজমেন্ট করার আরেকটা বেনিফিট হচ্ছে যদি কোনো কারনে ক্লায়েন্টের সংখ্যা কমে যায় এবং আগের মতো বেশি আর্নিং নাও আসে, তখন নিজের আগে থেকে করে রাখা সেভিংসের টাকা দিয়ে চলতে পারা যায়। আশা করি এখন সবাই বুঝতে পারছেন মানি ম্যানেজমেন্ট করতে শেখা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।

কয়েকটা ইফেকটিভ মানি ম্যানেজমেন্ট টিপস

এখন আমরা চলে এসেছি আমাদের আজকের লেখার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চলুন জেনে আসা যাক কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার সঠিক উপায়ে মানি ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

নিজের ইনকাম ও স্পেন্ডিং সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া রাখা 

নিজের আয় ও ব্যয় সম্পর্কে যদি নাই জানেন, তাহলে কিভাবে মানি ম্যানেজমেন্ট করবেন বলুন তো? একারণে প্রোপারলি ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট করতে চাইলে একজন ফ্রিল্যান্সারকে সবার আগে প্রত্যেক মাসে নিজের কেমন রেঞ্জের ইনকাম হয় ও একইসাথে কতটুকু বিভিন্ন কাজে ব্যয় করতে হয় এ দু’টো বিষয়ে ক্লিয়ার আইডিয়া থাকতে হবে। যদি এই আইডিয়া থাকে, তাহলে মানি ম্যানেজমেন্ট স্টার্ট করার পর কতটুকু বেনিফিট পাচ্ছেন সেটাও বুঝতে পারবেন।

আমি জানি এখন অনেকেই প্রশ্ন করবেন, নিজের ইনকাম কতটুকু সেটা ট্র্যাক করবেন কিভাবে? খুব সহজ! মাইক্রোসফট এক্সেল বা গুগল স্প্রেডশিটের মাধ্যমে। এই দু’টো সফটওয়্যার একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রতিমাসের বা বছরের টোটাল ইনকাম ট্র্যাক করতে খুবই হেল্প করে।

এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের টোটাল ইনকাম ক্যালকুলেট করার জন্য স্প্রেডশিটে দু’টো সেপারেট কলাম মেইনটেইন করুন। একটা কলামে যেসব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে মান্থলি বেসিসে পেমেন্ট রিসিভ করেন সেটা এবং অন্য কলামে প্রজেক্ট বেসিসে রিসিভ করা প্রতিটা পেমেন্টের ইনফরমেশন ইনপুট করুন। এভাবে সেপারেট কলাম মেইনটেইন করলে এক মাসের টোটাল ইনকাম তো বুঝতে পারবেনই, একই সাথে মোট কতজন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করছেন, কতজন পার্মানেন্ট ক্লায়েন্ট আছেন এবং ওই মাসে আপনার ওয়ার্কলোড কেমন ইত্যাদি বিষয়ও খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

এরপরের কাজটা হলো কী পরিমাণ টাকা স্পেন্ড করতে হয় সেটা ক্যালকুলেট করা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র যে পার্সোনাল স্পেন্ডিং ইনক্লুড করবেন তা নয়, বরং ফ্রিল্যান্সিং বা যদি অন্য কোন সাইড বিজনেস থেকে থাকে সেই রিলেটেড খরচও ক্যালকুলেট করতে হবে। তাহলেই একজন ফ্রিল্যান্সার তার ইনকাম থেকে কতটুকু খরচ করতে হবে সেই বিষয়ে ধারণা পেয়ে যাবেন।

পার্সোনাল ও ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড কাজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সেপারেট রাখা 

বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারের একটা কমন টেন্ডেন্সি থাকে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পারসোনাল ও ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড সব ট্রানজেকশন করা। আমি জানি আপাতদৃষ্টিতে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকাই কম হ্যাসেলের মনে হয়। তবে সত্যিকার অর্থে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব ট্রানজেকশন কমপ্লিট করলে আয় ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই সব ফ্রিল্যান্সারের প্রতি সাজেশন থাকবে নিজের পার্সোনাল ও ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড কাজের জন্য আলাদা দু’টো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করা।

প্রতিটা কাজের আগে একটা ডিটেইলড বাজেট করে নেয়া 

যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন, তারা অনেকেই বলেন যে মাসগুলোতে তাদের আর্নিং বেশি থাকে সে মাসে তারা প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি টাকা খরচ করে ফেলেন। এর ফলে যদি পরবর্তী মাসে তাদের ইনকাম একটু কম থাকে, তখন সেই সিচুয়েশনটা সামলাতে তাদের একটু কষ্ট হয়ে যায়।

এমনটা যেন না হয় এবং একইসাথে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই যেন খরচ হয় সেটা নিশ্চিত করতে ফ্রিল্যান্সারদের উচিত প্রত্যেকটা কাজের আগে একটা করে বাজেট করে নেওয়া। অনেকেই ট্রাই করেন মাথার ভেতরে বাজেট ভেবে রাখতে, তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি নোটবুক বা স্প্রেডশিটের সাহায্যে বাজেটটা প্রিপেয়ার করে ফেলতে পারেন।

এভাবে বাজেট করে খরচ করার অ্যাডভান্টেজ অনেক। বাজেট করলে এক্সট্রা স্পেন্ডিং হওয়ার চান্স কমে আসে, আবার একইসাথে কোন কোন খাতে আপনি প্রয়োজনের চাইতে কম খরচ করছেন সেটাও বোঝা যায়। এর পাশাপাশি সেভিংসও বাড়ে। তাই বাজেট করে খরচ করার হ্যাবিট নিজের মধ্যে গ্রো করানোর চেষ্টা করুন।

অন টাইমে পেমেন্ট রিসিভ করতে আগেই ইনভয়েস স্কেজিউল করে রাখা 

ফ্রিল্যান্সাররা যদি অন টাইমে পেমেন্ট রিসিভ না করেন, তাহলে সেটা তাদের কাজের মোটিভেশন কমিয়ে দেয়। সেই সাথে লেট পেমেন্টের কারণে তাদেরকে বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের মধ্যেও পড়তে হতে পারে। তাই একটা প্রজেক্ট শেষ হওয়ার কত দিনের মধ্যে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পেমেন্ট রিসিভ করবেন সেই ইনভয়েসটা আগেই রেডি করে রাখুন। এর পাশাপাশি পরামর্শ থাকবে কোনো ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার আগে মিটিং করার সময়েই তাকে প্রজেক্ট শেষ হওয়ার কত দিনের মধ্যে পেমেন্ট করতে হবে সে বিষয়টা ইনফর্ম করে রাখুন। এতে করে লেইটে পেমেন্ট রিসিভ করার চান্স কমে আসবে।

বিভিন্ন ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট টুলের হেল্প নেয়া

একজন ফ্রিল্যান্সারের ব্যস্ততা কত বেশি তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ব্যস্ততার ভেতর মানি ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কাজগুলো করা একটু কষ্টসাধ্যই বটে। তাই বাজেট করা কিংবা ইনভয়েস জেনারেট করার কাজটাকে সহজ করে তোলার জন্য বিভিন্ন ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট টুলের হেল্প নিতে পারেন। যেমন: কুইকবুক নামের টুলটা ইউজ করলে কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে তা ট্র্যাক করা, কাস্টমাইজড ইনভয়েস জেনারেট করা ইত্যাদি কাজ দ্রুতই করে নিতে পারবেন।

শেষ কথা

এটুকুই ছিলো ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ইজি এবং ইফেকটিভ কয়েকটা মানি ম্যানেজমেন্ট টিপস, যেগুলো ফলো করলে ফ্রিল্যান্সারদের বাড়তি খরচ করার স্বভাব ধীরে ধীরে কমে আসবে। সেই সাথে তাদের মধ্যে টাকা সেভ করার হেলদি হ্যাবিটটাও গ্রো করতে থাকবে। লেখার শেষে সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, আপনার আর্নিং কোথায় কতটুকু খরচ হচ্ছে তা সবসময় ট্র‍্যাকে রাখুন। প্রতিমাসের শেষে অ্যাটলিস্ট একবার পুরো মাসের আয় ও ব্যয়ের হিসেব মিলিয়ে নিন। তাহলেই দেখবেন ভবিষ্যতে টাকা পয়সা রিলেটেড প্রবলেমে পড়বেননা।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: