ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং কেন এত ভ্যালুয়েবল?

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন একটা ইউনিক ক্যারিয়ার চয়েস যেখানে একজন মানুষ নিজেই নিজের বস হওয়ার চান্স পেয়ে যান। প্রোপার ফ্রিডম বজায় রেখে ও নিজের প্যাশন ফলো করে ইনকাম করার মত সুযোগ অন্য কোন ক্যারিয়ার ফিল্ড অফার করেনা। তবে হ্যাঁ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন ফ্রিল্যান্সার যদি কারো হেল্প ছাড়া সম্পূর্ণ একাই নিজের ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করার চেষ্টা করেন,সেটা তার পক্ষে বেশ ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। 

তাহলে কী করা যেতে পারে? আমি আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্সের ওপর ভিত্তি করে বলতে পারি, কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্যারিয়ার সাকসেসফুল করতে ইফেকটিভলি হেল্প করে থাকে। তাই যারা এই ফিল্ডে একটা সাসটেইনেবল ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে চান, তাদের উচিত‌ এই দুটো বিষয়ে অবশ্যই ফোকাস করা। আজকের আর্টিকেলে আমি ডিটেইলে ডিসকাস করব একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্যারিয়ারে কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং বলতে কী বোঝায়?

চলুন লেখার শুরুতেই কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং এ দুটো শব্দের অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে কমিউনিটি বলতে এমন একটা গ্রুপকে বোঝানো হয়ে থাকে যে গ্রুপে বিভিন্ন সেক্টরের ফ্রিল্যান্সাররা কানেক্টেড থাকেন। এটা হতে পারে কোন ফেসবুক বা লিংকডইন গ্রুপ ,কোন টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এমনকি ফ্রিল্যান্সারদের কোন অফলাইন অ্যাসোসিয়েশন। এই কমিউনিটিগুলোতে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করে থাকেন। একইসাথে তারা শেয়ার করেন নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নিজেদের ভ্যালুয়েবল সাজেশন ও রিসোর্সেস। 

অন্যদিকে নেটওয়ার্কিং বলতে যখন একজন ফ্রিল্যান্সার তার সেক্টরের অন্য ফ্রিল্যান্সারদের সাথে অথবা অন্যান্য সেক্টরে কাজ করা ফ্রিল্যান্সারদের সাথে নিয়মিত ইন্ট্যার‍্যাক্ট করার মাধ্যমে একটা প্রফেশনাল, ফ্রেন্ডলি ও হেল্পফুল নেচারের রিলেশনশিপ বিল্ড আপ করেন সে বিষয়টাকে বোঝানো হয়। এই নেটওয়ার্কিং করার কাজটা বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে জয়েন করার মাধ্যমে হতে পারে। আবার একইসাথে ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন মিট আপ, ওয়ার্কশপ কিংবা সেমিনারের মাধ্যমেও হতে পারে।

কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং কেন এত ভ্যালুয়েবল?

আমি জানি এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, “ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সাকসেসফুল করতে স্কিল এক্সপেরিয়েন্স আর এক্সপার্টাইজই তো এনাফ! তাহলে এখানে কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব কতটুকু?”

বলছি!

ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে জয়েন করা ও অ্যাকটিভ থেকে নেটওয়ার্কিং করলে যে মূল বেনিফিট পাওয়া যায় তা হলো এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সারদের সাথে সহজে কমিউনিকেট করার সুযোগ।

তাদের কাছ থেকে নতুন অনেক কিছু শিখতে শেখা যায়, যা ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করার ক্ষেত্রে হেলফুল হতে পারে। যেমন ধরুন: আপনি কোন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে জয়েন করার পর ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশনের নতুন একটা ট্রিক শিখলেন, যেটার ব্যাপারে আগে জানতেননা। হতেই পারে এই ট্রিকটা ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করার সময় অ্যাপ্লাই করে আপনি আগে চাইতে বেশি ক্লায়েন্ট জেনারেট করতে পারবেন। একটু ভেবে দেখুন, যদি কমিউনিটির মেম্বার না হতেন, তাহলে এই হ্যাকটা কিন্তু কখনোও জানা হতোনা!

তাছাড়াও সবাই নিশ্চয়ই জানেন, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করার সময় শুরুর দিকে বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এ সিচুয়েশনগুলো প্রোপারলি হ্যান্ডেল করতে এক্সপার্ট অ্যাডভাইস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অ্যাডভাইসগুলো আপনারা পেতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিগুলো থেকে। শুধু তাই নয়, একজন ফ্রিল্যান্সার চাইলে তার জন্য পারফেক্ট মেন্টর খোঁজার কাজটিও করতে পারেন এই কমিউনিটি নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে।

ও হ্যাঁ, আরেকটা বিষয় জেনে রাখুন। আপনি যদি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন রকম রিসোর্স ও লার্নিং ম্যাটেরিয়ালের এক্সেস পেতে পারেন, যেগুলো আপনার ক্যারিয়ারের জন্য হতে পারে সুপার হেল্পফুল।

যেমন ধরুন, কমিউনিটিতে একজন ফ্রিল্যান্সার মার্কেটিং রিলেটেড একটা অনলাইন কোর্সের লিংক শেয়ার করলেন, যে কোর্সটা করলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বিল্ড আপ করার কঠিন কাজটা ইজি হয়ে যাবে। এখন আপনারাই বলুন, যদি ওই কমিউনিটিতে অ্যাড না থাকতেন, তাহলে ওই কোর্স সম্পর্কে অন্য কোনো সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারতেন? কখনোই না।

ইউজফুল কোর্সের রিকমেন্ডেশন তো রয়েছেই, এর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির মাধ্যমে বিভিন্ন দরকারি টুল, পেইড সফটওয়্যার, গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পিডিএফ, নানারকম চেকলিস্ট ইত্যাদি রিসোর্সেরও এক্সেস পাওয়া সম্ভব, যেগুলো নিয়মিতভাবেই ফ্রিল্যান্সারদের কাজে আসে।

ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে জয়েন করে আপনি যে শুধুমাত্র অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে শিখে নিজের নলেজ বাড়াবেন তা নয়, সেই সাথে নিজের নলেজও কিন্তু তাদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। যেমন ধরুন, আপনি লিংকডইন থেকে কিভাবে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে হয় সেটা খুব ভালোমতো জানেন। এখন আপনি চাইলে আপনার এই নলেজটুকু কমিউনিটির সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে করে যেমন নতুন ফ্রিল্যান্সারদের লিংকডইনে খুঁজতে সুবিধা হবে, তেমনিভাবে কিন্তু কমিউনিটিতে আপনার পরিচিতি ও নেটওয়ার্কিং দুটোই বাড়বে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, যদি ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন  কমিউনিটিতে জয়েন হয়ে নিয়মিত নেটওয়ার্কিং করেন, তাহলে তাদের অনলাইন প্রেজেন্স আরো স্ট্রং হয়। যেটা তাদের ক্রেডিবিলিটি অনেক বাড়িয়ে তোলে। এই ক্রেডিবিলিটি থেকেই কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সারের রেপুটেশন বাড়তে শুরু করে।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং কেন এত ভ্যালুয়েবল?

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিংয়ের বড় একটা অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে এগুলোর মাধ্যমে নতুন নতুন ক্লায়েন্ট জেনারেট করার অপরচুনিটি ক্রিয়েট হয়। কারণ ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন নতুন নতুন প্রজেক্ট কিংবা কাজের সুযোগ সম্পর্কে পোস্ট করা হয়। একই সাথে যদি নেটওয়ার্কিং ভালো থাকে,তাহলে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টের কাছে অন্য ফ্রিল্যান্সাররা আপনাকে রেকমেন্ড করতে পারেন। আমি আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি, বিনামূল্যে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার এই সুযোগ ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষে অন্য আর কোথাও পাওয়া পসিবল নয়। 

এবার আসি কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিংয়ের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে, যেটা সম্পর্কে বেশিরভাগই জানেন না। কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং করলে ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের মধ্যে কোলাবারেশন বা পার্টনারশিপ করতে পারেন, যেখান থেকে দুই পক্ষই সমানভাবে লাভবান হতে পারেন। কারণ কোলাবারেশনের মাধ্যমে যখন দুজন ফ্রিল্যান্সার একসাথে কাজ করবেন, তখন তারা যেসব প্রজেক্ট কিছুটা কমপ্লেক্স সেগুলোতেও নির্দ্বিধায় কাজ করতে পারেন। এতে করে রেভিনিউ জেনারেট হওয়ার পরিমাণ যেমন বাড়ে তেমনি ভাবে কিন্তু ক্লায়েন্ট স্যাটিসফেকশন নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের রেপুটেশনও বাড়তে থাকে।

সবশেষে আরো বলা যায়,কমিউনিটি ও নেটওয়ার্কিং একজন ফ্রিল্যান্সারের মেন্টাল হেলথ ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে। অনেক সময় কাজের প্রেশারে ফ্রিল্যান্সারদের সোশ্যাল লাইফ বলে কিছুই থাকেনা। একারণে দেখা যায়  ফ্রিল্যান্সাররা বার্ন আউট ফেইস করেন, যা তাদের প্রোডাক্টিভিটি অনেক কমিয়ে দেয়। এ প্রবলেমটা সলভ করতে যদি ফ্রিল্যান্সাররা কিছু কমিউনিটিতে জয়েন করে নিয়মিত নেটওয়ার্কিং করেন, তাদের যেমন একটা সোশ্যাল লাইফ থাকবে, তেমনি ভাবে কমিউনিটি মিট আপে অ্যাটেন্ড করার মাধ্যমে রিক্রিয়েশনেরও সুযোগ তৈরি হবে। যা ইফেকটিভলি মেন্টাল হেলথ ভালো রাখতে সহায়তা করবে।

এটুকুই ছিল একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য কমিউনিটি এবং নেটওয়ার্কিং কেন এত ইম্পরট্যান্ট রোল প্লে করে সে সম্পর্কিত ডিসকাশন। আমি অনেক ফ্রিল্যান্সারের মধ্যেই একটা মিসকনসেকশন দেখেছি, যেটা হলো তারা মনে করেন কমিউনিটি কিংবা নেটওয়ার্কিং মনে হয় শুধুমাত্র এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সারদের জন্যই। এটা একটা অনেক বড় ভুল ধারণা। কেননা নতুন ও এক্সপার্ট দুই ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের জন্যই কমিউনিটি বা নেটওয়ার্কিং খুবই ভ্যালুয়েবল। 

তাই সবার প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, ক্লায়েন্টদের সার্ভিস প্রোভাইড করার পাশাপাশি কিছু ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে জয়েন করে অ্যাকটিভলি নেটওয়ার্কিং করতে। এটা করলে আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই আপনারা নিজেদেরকে ক্যারিয়ারে আরো গ্রোথ দেখতে পাবেন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: