লাইফে যে কোন কাজে সাকসেসফুল হতে চাইলে নাকি গোল সেট করে নেয়া ম্যান্ডেটরি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই কথাটার সত্যতা কতটুকু? ভেবে না থাকলে আমি বলে দিচ্ছি। একজন মানুষের লাইফের কোনো স্টেজ হোক কিংবা কোনো চ্যালেঞ্জিং সিচুয়েশন, যদি গোল সেট না করে কাজ করা শুরু করেন, তাহলে সেই কাজে সাকসেসফুল হওয়ার চান্স খুবই কম থাকে।
এই গোল সেট করার ব্যাপারটা ফ্রিল্যান্সিং প্রফেশনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে অ্যাপ্লিকেবল। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন,তাদের বেশিরভাগেরই গোল থাকে বেশি বেশি ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে হ্যান্ডসাম এমাউন্টের আর্নিং জেনারেট করা। তবে আমার মতে শুধুমাত্র এই দুইটা গোল সেট করলে কিন্তু এই ফিল্ডে স্ট্যাবিলিটি ও সাকসেস কোনোটাই অ্যাচিভ করা পসিবল নয়।
ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে গোল সেট করার সময় ট্রিকি ও স্মার্ট ওয়েতে গোলগুলো সেট করতে হয়। অর্থাৎ এই গোলগুলো এমন হবে যাতে এগুলো একজন ফ্রিল্যান্সারের পক্ষে নির্দিষ্ট টাইমের মধ্যে অ্যাচিভ করা পসিবল হয় আবার একইসাথে সেগুলো ক্যারিয়ার গ্রোথ আনতেও হেল্প করে।
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে স্মার্ট গোল আবার কোনগুলো! চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ আজকের আর্টিকেলে আমি ডিসকাস করবো ফ্রিল্যান্সাররা তাদের ক্যারিয়ারে সাকসেসফুল হওয়ার জন্য কেমন টাইপের স্মার্ট গোল সেট করতে পারেন।
১। অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে শেখা শুরু করা
আমি জানি ফ্রিল্যান্সিং একটা অত্যন্ত কম্পিটিটিভ সেক্টর এবং এই সেক্টরে একজন ফ্রিল্যান্সার সবসময়ই বাকি ফ্রিল্যান্সারদের থেকে এগিয়ে থাকার ট্রাই করেন। কিন্তু একই সাথে এটাও সত্যি যে যদি অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে তাদের বিভিন্ন স্কিল বা টেকনিক শেখা শুরু করার ট্রাই করেন, তাহলে যেমন নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন, পাশাপাশি একজন আরেকজনের থেকে শেখার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের কমিউনিটির মধ্যেও একটা মিনিংফুল রিলেশনশিপ বিল্ডআপ হবে।
যেমন ধরুনঃ যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করে থাকেন, তাহলে সেই সেক্টরে যেসব পণ্য ফ্রিল্যান্সাররা অনেকদিন ধরে কাজ করছেন ,তাদের কাছ থেকে তাদের স্কিল বা টেকনিকগুলো শেখা শুরু করতে পারেন। এতে করে নিজের মধ্যে অনেক অল্প সময়ে পজিটিভ চেঞ্জ দেখতে পারবেন।
২। কনস্ট্যান্টলি নিজের স্কিল ডেভেলপ করা
শুধুমাত্র অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাজ থেকে তাদের টেকনিক শিখলেই হবেনা, বরং একজন ফ্রিল্যান্সারের গোল থাকবে সব সময় নিজের স্কিল ডেভেলপ করার ট্রাই করা। মনে রাখবেন এই সেক্টরে নিজের স্কিল যত বেশি আপডেটেড রাখবেন, অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারের চাইবে নিজেকে ততবেশি এগিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন। তাই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যেই সেক্টরে কাজ করুন না কেন, সবসময় ওই সেক্টরে স্কিলের দিক থেকে নিজেকে আপডেটেড রাখবেন। তাহলে দেখতে পাবেন ক্লায়েন্টরা যেমন ধরনের সার্ভিস ই নিতে চান না কেন, সে সার্ভিস তাদেরকে প্রোভাইড করতে সক্ষম হবেন। এতে করে যেমন আইডিয়াল ক্লায়েন্ট পেতে পারবেন, তেমনি ভাবে ক্যারিয়ারে নিজের স্টাবিলিটিও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।
৩৷ কাজের সময় যেকোনো ধরনের ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থাকা
যারা রিমোট ওয়ার্কিং প্রফেশনের সাথে যুক্ত আছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন যে কাজের সময় বিভিন্ন ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থাকা কতটুকু কঠিন। এ কারণেই যারা ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন তাদের জন্য একটা দারুন স্মার্ট গোল হতে পারে কাজের সময় যেকোনো ধরনের ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থাকা।
এই গোলটা এচিভ করার জন্য বিভিন্ন কাজ করা যেতে পারে। যেমনঃ বাড়ির সব চাইতে নিরিবিলি এনভায়রনমেন্ট বেছে নিয়ে সেখানে বসে কাজ করা, যেখানে কাজ করবেন সেখানে টেলিভিশন, নিউজপেপার বা অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যম না থাকা, যতক্ষণ কাজ করবেন ততক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ না করা ইত্যাদি। সব সময় মনে রাখবেন যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করার সময় ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থাকতে পারেন, তাহলে কিন্তু ক্লায়েন্টদেরকে ভালো সার্ভিস প্রোভাইড করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
৪। নিজের অনলাইন প্রেজেন্স স্ট্রং বানানো
ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা ক্যারিয়ার ফিল্ড যেটার কাজের পুরো অংশটুকুই অনলাইনে পরিচালিত হয়ে থাকে। এ কারণে যদি লং-টার্মে সাকসেসফুল হতে চান, তাহলে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অন্যতম দায়িত্ব হলো নিজের অনলাইন প্রেজেন্স স্ট্রং বানানোকে গোল হিসাবে সেট করা৷ কেননা একজন ফ্রিল্যান্সারের অনলাইন প্রেজেন্স যত বেশি ষ্ট্রং, তার বেশি বেশি ক্লায়েন্ট জেনারেট করার চান্স তত বেড়ে যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই গোলটা অ্যাচিভ করার জন্য কি কি করতে পারেন? নিজের অনলাইন প্রেজেন্স স্ট্রং বানানোর খুব ইফেক্টিভ উপায় হচ্ছে নিজের একটা ওয়েবসাইট থাকা।
কারণ যখন একজন ফ্রিল্যান্সারের নিজের ওয়েবসাইট থাকবে, তখন তিনি সে সাইটে তার স্কিল, তিনি যেসব সার্ভিস প্রোভাইড করেন এবং সেগুলোর প্রাইস রেঞ্জ কেমন ইত্যাদি সম্পর্কে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদেরকে ডিটেইলে ধারণা দিতে পারবেন। এতে করে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের সেই ফ্রিল্যান্সারের প্রতি পজিটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট হবে, যা পরবর্তীতে ক্লায়েন্ট জেনারেট করতে হেল্প করবে।
ওয়েবসাইটের পাশাপাশি নিজের অনলাইন প্রেজেন্স বাড়ানোর আরেকটা উপায় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার হেল্প নেয়া। শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে করতে হয় সেটা নিয়ে রিসার্চ করুন। তারপর ইফেকটিভ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বিল্ড আপ করুন এবং সেই স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট (যেমনঃ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, পিন্টারেস্ট) গুলোতে রেগুলারলি পোস্ট করা শুরু করুন। দেখতে পাবেন অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই বুঝে গেছেন যে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যদি কেউ নিজের অনলাইন প্রেজেন্স স্ট্রং বানাতে চান, তাহলে তাকে প্রোপার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ফলো করতে হবে। এমনভাবে মার্কেটিং করতে হবে যাতে করে তিনি যে কমিউনিটিকে টার্গেট করে মার্কেটিং করবেন, সেখান থেকে যেন ক্লায়েন্ট পাওয়া পসিবল হয়।
৫। টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল বাড়ানো
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের সাকসেসফুল হতে চাইলে টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল ভালো থাকার কিন্তু কোনো বিকল্প নেই। তাই একজন ফ্রিল্যান্সারের অবশ্যই উচিত এ টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল বাড়ানোকে একটা গোল হিসেবে সেট করা। কারণ এতে করে যে শুধু ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের গ্রোথ দ্রুত বাড়বে তা নয়, বরং লাইফের প্রতিটা স্টেজেই অন্য অনেকের চাইতে সেই ফ্রিল্যান্সার এগিয়ে থাকতে পারবেন।
টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল বাড়ানোর জন্য ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি আমার সাজেশন থাকবে প্রতিদিন কতটুকু কাজ করবেন এবং কখন কাজ করবেন সেটার একটা রুটিন সেট করে ফেলুন। এই রুটিনে নিজের ডেডলাইন অনুযায়ী কোন কাজটা বেশি প্রায়োরিটি পাবে সেটা মাথায় রেখে সাজিয়ে ফেলুন দিনের কোন সময় কোন ক্লায়েন্টের কাজ করবেন।
শুধু কাজই নয়,
এই রুটিনে নিজের রেস্ট, ঘুম, খাওয়া-দাওয়া এবং রিক্রিয়েশনও যেন হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। সবসময় মনে রাখবেন শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপরে কোন কিছুই নয়, এমনকি নিজের কাজও নয়। কখনো যদি অসুস্থতা অনুভব করেন, তাহলে কাজ থেকে একটু বিরতি নিন। মনে রাখবেন কাজ করতে করতে রোবট হয়ে যাওয়া যাবেনা। বরং নিজের প্রফেশনাল লাইফ ও পার্সোনাল লাইফ এই দুইটা লাইফের মধ্যে টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিলের মাধ্যমে ব্যালেন্স আনতে হবে৷ এতে করে দেখবেন নিজের ইনার পিস ঠিক রেখেই কাজ করতে পারবেন।
পাশাপাশি যখন নিজের প্রতিদিনের কাজের রুটিন সেট করবেন, যদি সম্ভব হয় সেখানে হালকা এক্সারসাইজও অ্যাড করুন। কারণ আমরা জানি যারা ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন ব্যাকপেইন, ঘাড় ব্যথা অথবা হাতে ব্যথা ফেস করে থাকেন। যদি টাইম ম্যানেজ করে প্রতিদিন অল্প সময় হলেও এক্সারসাইজ করতে পারেন, তাহলে এই সমস্যাগুলো থেকে কিছুটা হলেও আরাম পাবেন।
৬। নিজের নেটওয়ার্ক বাড়ানো
আমি আমার দীর্ঘদিনের পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স থেকে এটুকু গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যখন একজন ফ্রিল্যান্সারের নেটওয়ার্কিং স্কিল অনেক ভালো থাকে তখন সে অন্য অনেকের চাইতে তাড়াতাড়ি সাকসেসফুল হতে পারে। কারণ অনেক সময় এমন হয় ভালো নেটওয়ার্কিং থাকার ফলেই অনেক ফ্রিল্যান্সার হাইপেইং ক্লায়েন্ট পেয়ে যান৷ এ কারণে নিজের নেটওয়ার্ক বাড়ানো কিন্তু স্মার্ট গোলের দারুণ একটা এক্সামপল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নেটওয়ার্ক বাড়াবেন কিভাবে? নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য আমার সবচাইতে ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে লিংকডইন। বর্তমানে সারা বিশ্বের অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য লিংকডইনের সাহায্য নেয়। যেমন ধরুন, যদি একজন ফ্রিল্যান্সার ওয়েব ডিজাইন সেক্টরে কাজ করে থাকেন এবং লিংকডইনে সার্চ করেন, তখন তিনি আরো অনেক ওয়েব ডিজাইনারের প্রোফাইল লিঙ্ক খুঁজে পাবেন। তখন তাদেরকে কানেকশন রিকুয়েস্ট সেন্ড করার মাধ্যমে তিনি তাদের সাথে অ্যাড হতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে কিন্তু তার নিজের নেটওয়ার্কও গ্রো করবে।
আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য স্মার্ট গোলগুলো কেমন হতে পারে। আমি আজকের লেখায় এমন কয়েকটা গোল এক্সাম্পল হিসেবে প্রেজেন্ট করেছি যেগুলোর প্রতিটাই চেষ্টার মাধ্যমে অ্যাচিভ করা সম্ভব। এগুলো ছাড়াও একজন ফ্রিল্যান্সার তার নিজের ইচ্ছামত স্মার্ট গোল সেট করে নিতে পারেন। তবে সেই গোলটা যেন অ্যাচিভ করা যায়, সেটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন যদি এই ক্যারিয়ার ফিল্ডে সাকসেসফুল হতে চান তাহলে অবশ্যই কয়েকটা গোল সেট করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তাহলেই নিজের হার্ডওয়ার্ক ও চেষ্টার মাধ্যমে সাকসেসফুল হতে সক্ষম হবেন।