ক্যারিয়ার চয়েস হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের টপ রেটেড চয়েসগুলোর মধ্যে একটা। আর হবে নাই বা কেন? নিজের ফ্রিডম বজায় রেখে ফিনানশিয়াল স্ট্যাবিলিটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। 

কিন্তু প্রবলেমটা শুরু হয় যখন ধীরে ধীরে একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্লায়েন্ট বাড়তে শুরু করে, অর্থাৎ ক্যারিয়ারে গ্রোথ আসতে শুরু করে। তখন ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দেওয়ার পাশাপাশি ক্লায়েন্ট হান্টিং, কমিউনিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং সবই একসাথে সামাল দিতে হয়। তখন “কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো” ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয় ফ্রিল্যান্সারদের। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আউটসোর্সিং করা হতে পারে বেস্ট অপশন। এখনকার সময় অনেক ফ্রিল্যান্সাররাই আউটসোর্সিং এর সাহায্য নিয়ে অল্প সময়ে ক্যারিয়ারে ভালো একটা পজিশনে যেতে পারছেন। আজকের লেখায় বিস্তারিতভাবে জানাবো একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কেন আউটসোর্সিং করা উচিত, আউটসোর্সিং করার সুবিধা এবং কীভাবে আউটসোর্সিং করতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। 

আউটসোর্সিং বলতে কী বোঝায়? 

এখনো অনেকেই মনে করেন, ফ্রিল্যান্সিং আর আউটসোর্সিং বুঝি একই বিষয়। এটা একটা ভুল ধারণা। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে যখন একজন মানুষ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করে নিজে ক্লায়েন্টকে সার্ভিস প্রোভাইড করেন। 

অন্যদিকে আউটসোর্সিং বলতে কোনো সার্ভিস বা প্রজেক্টের কাজ নিজে না করে থার্ড পার্টির কাউকে দিয়ে কমপ্লিট করিয়ে সেটা ক্লায়েন্টকে ডেলিভার করাকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ এখানে একজন ফ্রিল্যান্সার চাইলে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে অন্য একজন ফ্রিল্যান্সারকে হায়ার করে কাজটা তাকে দিয়ে করিয়ে সময়মতো তার ক্লায়েন্টকে ডেলিভার করে দিতে পারেন।

শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সাররাই নয়, এখনকার সময়ে ছোট-বড় অনেক কোম্পানি তাদের বিভিন্ন কাজ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে থার্ড পার্টিদের কাছ থেকে করিয়ে নিচ্ছে। আমি নিজের পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলতে পারি, সঠিকভাবে আউটসোর্সিং করতে পারলে যে বেনিফিট পাওয়া যায়, তা সলো ফ্রিল্যান্সিং করে পাওয়া বেশ ডিফিকাল্ট!

আউটসোর্সিং করার অ্যাডভান্টেজ কী কী?

একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিং করার মূল অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে এটা করলে প্রচুর সময় বাঁচানো যায় এবং যে সময়টুকু বাঁচে সে সময়ে যে কাজ করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ, আউটসোর্সিং করলে নিজের ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের যে দিকটায় ফোকাস করা সবচেয়ে বেশি জরুরী, সেটাতেই করা যায়। 

যারা সলো ফ্রিল্যান্সিং করেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন কাজের লোড কতটা বেশি। এখানে একজন মানুষকে ক্লায়েন্ট খোঁজা থেকে শুরু করে ক্লায়েন্টের প্রজেক্টের কাজ, রিভিশন, ইনভয়েস তৈরি, কমিউনিকেশন ইত্যাদি সবকিছুই একা হাতে করতে হয়। বিষয়টা শুরুর দিকে বেশ সহজ মনে হলেও সময়ের সাথে সাথে অবস্থা বেগতিক হতে থাকে!

ফ্রিল্যান্সারদের কেন আউটসোর্সিং করা উচিত?

আপনারা নিজেরাই ভেবে দেখুন, একজন ফ্রিল্যান্সার যদি তার ওয়ার্কিং আওয়ারের বড় একটা অংশ ক্লায়েন্টের প্রজেক্ট এর কাজ কমপ্লিট করতে দিয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু তিনি নতুন ক্লায়েন্ট খোঁজার বা নিজের সার্ভিসের মার্কেটিং করার সময় খুব বেশি পাবেন না। অন্যদিকে যদি সার্ভিসের মার্কেটিংয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যায় ক্লায়েন্ট এর কাজের কোয়ালিটিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

এই সিচুয়েশনগুলোতে কী হয় জানেন? অনেকগুলো কাজের মধ্যে কোন কাজকে প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত তা নিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে একটা ডিলেমা বা কনফিউশান তৈরি হয়। তখন দেখা যায়, সিম্পল একটা কাজকেও অনেক বড় বার্ডেন বলে মনে হতে থাকে, একই সাথে কাজের প্রতি মোটিভেশন ও প্রোডাক্টিভিটিও কমে যায়। 

পক্ষান্তরে যদি একজন ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং করেন, তাহলে তিনি যে কাজটা করতে সবচেয়ে বেশি ক্যাপাবল ও এক্সপেরিয়েন্সড, সেটাতেই তিনি বেশি ফোকাস করতে পারবেন। কারণ যে কাজগুলোর প্রায়োরিটি কিছুটা কম, অর্থাৎ যে কাজগুলো ওই ফ্রিল্যান্সারের নিজে না করলেও চলবে, সেগুলো তিনি থার্ড পার্টি দিয়ে করিয়ে ফেলতে পারবেন। এতে করে সব কাজ টাইমলি হয়ে যাবে, ক্লায়েন্টরাও খুশি থাকবেন, সেই সাথে তার হাতে এক্সট্রা টাইম এসে যাবে, যা তিনি তার যে কাজগুলোতে এক্সপার্টাইজ বেশি বা আরেকটু ফোকাস করা প্রয়োজন, সেগুলোতে ব্যয় করতে পারবেন। এতে করে তার সার্ভিসের কোয়ালিটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে এবং তিনি ক্যারিয়ারে একটা ভালো পজিশনে যেতে পারবেন। 

কোথা থেকে সার্ভিস আউটসোর্স করবেন? 

আউটসোর্সিং করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার বা বিজনেস পারসনের মূল কনসার্ন থাকে যে তারা কোথা থেকে বা কাদের কাছ থেকে ভালো একটা প্রাইসিংয়ে আউটসোর্সিং করাতে পারবেন। এই প্রশ্নটার কোনো নির্দিষ্ট উত্তর না থাকলেও কিছু বিষয় কনসিডার করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 

সাধারণত বিভিন্ন কোম্পানি বা ফ্রিল্যান্সাররাই মূলত আউটসোর্সিং সার্ভিস দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, কোনো কোম্পানির কাছ থেকে সার্ভিস আউটসোর্স করিয়ে নিতে চাইলে খরচ কিছুটা বেশি পড়বে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই একটা কোম্পানি মেইনটেইন করে প্রফিট রাখার জন্য তারা বেশি চার্জ দাবি করবে। যদি আপনার বাজেট ইস্যু না থাকে, তাহলে কোম্পানি বেছে নিতে পারেন। 

অন্যদিকে যদি আপওয়ার্ক, ফাইভার বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করে তাদের কাছ থেকে কাজ আউটসোর্স করিয়ে নেন, তাহলে খরচ অনেক কম পড়বে। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় আউটসোর্সিং করানোর জন্য ফ্রিল্যান্সারদের সাহায্য নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। 

কেন জানেন? কারণ প্রথমত ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করলে অপশন অনেক বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, এখানে একজন ফ্রিল্যান্সারের পোর্টফোলিও দেখে তার স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে স্যাটিসফাইড হওয়ার পরেই তার সাথে কাজ শুরু করতে পারবেন। আবার এখানে ক্লিয়ার কমিউনিকেশন করাও কঠিন হবে না। আপনি খুব সহজে তার কাছ থেকে কাজের আপডেট নিতে পারবেন, কোনো কনফিউশন থাকলে তা ক্লিয়ার করে দিতে পারবেন, আবার ক্লায়েন্টের ডেডলাইন মেইনটেইন করতেও কষ্ট করতে হবে না। 

যদি আপনার ক্লায়েন্টের প্রজেক্ট শর্ট টার্ম বা কম সময়ে কমপ্লিট করা যায় এমন হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রেও আউটসোর্স করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদেরকেই বেছে নেওয়া উচিত। কারণ সাধারণত আউটসোর্সিং সার্ভিস দেওয়া কোম্পানিগুলো লং-টার্মের জন্যই বেশি কাজ করে থাকে। আর যদি আপনার ক্লায়েন্টের লং টার্ম প্রজেক্ট হয়, সে ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির সাহায্য নিতে পারেন। 

এগুলোর পাশাপাশি আপনার ক্লায়েন্টের প্রজেক্টের ধরন কেমন সেটাও বিবেচনা করতে হবে। যেমন ধরুন, যদি খুব সহজ কোনো কাজ হয়, তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করে নিতে পারেন। তবে যদি এমন হয় ওই কাজটা করতে অনেকগুলো স্কিল প্রয়োজন বা কাজটা একটু ক্রিটিকাল, সেক্ষেত্রে একটু বেশি চার্জ দিয়ে হলেও কোনো এক্সপার্ট কোম্পানির মাধ্যমে কাজটা করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। 

কীভাবে আউটসোর্সিং করবেন? 

আউটসোর্সিং করার জন্য প্রথমেই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে কোন কোন কাজগুলো কমপ্লিট করতে হয় সেটার একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর সেই লিস্ট দেখে কোন কাজগুলো আপনার নিজেকে করতেই হবে তা আলাদা করে ফেলুন। তারপর বাকি কাজগুলো আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করিয়ে নিতে চান কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিন। 

এরপর আপনাকে নিজে রিসার্চ করে খুঁজে বের করতে হবে আপনি কাকে বা কাদেরকে দিয়ে সার্ভিস আউটসোর্সিং করিয়ে নেবেন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে রিসার্চ করার পর যখন নিজের ক্রাইটেরিয়ার সাথে মিলে যায় এমন কাউকে পেয়ে যাবেন, তখন তার সাথে সবার আগে প্রাইসিং নিয়ে নেগোশিয়েট করুন। যদি আপনার প্রাইসিং এর সাথে তার ডিমান্ড মিলে যায়, তাহলে কনট্র‍্যাক্ট করুন এবং কাজটা তাকে হ্যান্ড ওভার করে দিন। এভাবেই আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে গ্রো করা সম্ভব হবে। 

পরিশেষে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সাজেশন থাকবে, যদি আউটসোর্সিং করতে চান, তাহলে যথেষ্ট রিসার্চের পরেই কাউকে কাজের দায়িত্ব দিন। কেননা ভুল মানুষকে হায়ার করলে নিজের সার্ভিসের কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই একটু সতর্ক থাকুন এবং বুঝে শুনে সার্ভিস আউটসোর্স করুন। 

 

 

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: